খাদ্য নিয়ে অনেক কথা বলছেন অনেকে। লেখালেখিও হচ্ছে প্রচুর। কারণ আজকালকার যে অসুখ-বিসুখ একে মোকাবেলার জন্য খাদ্য বিধিতে পরিবর্তন আনা জরুরী বলে মনে হচ্ছে। পরিবর্তন করে লাভ হচ্ছে। এজন্য এদিকে নজর পড়ছে চিকিৎসকদের। সমপ্রতি একটি বই বেরিয়েছে ক্যালোফনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল পোলানের, ‘Food rules, an Eater’s Mannual’। প্রাণরসায়নবিদ বা পুষ্টিবিদ না হলেও পোলান একটি চমৎকার বই লিখেছেন সবার জন্য। আরও দুটো ভালো বই লিখেছেন তিনি। ”Indefense of food: An eatir’s Manifestu’ এবং ‘The Omnivore’s dilema’ তিনটি বইই প্রকাশিত হয়েছে পেঙ্গুইন থেকে। ১৩৯ পৃষ্ঠার বই ঋড়ড়ফ ৎঁষবং পড়ার মত বই। বইটিতে প্রধানত: পশ্চিমা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। প্রচুর প্রক্রিয়াজাত খাবার, মাংস, চর্বি, চিনি ও পরিশোধিত শস্য এসব নিয়ে পশ্চিমা খাবার। এরকম খাবার খেলে স্থূলতা, টাইপ ২, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সারে আক্রান- হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। বিজ্ঞানীরা বলেন, আমেরিকাতে ১০টি ঘাতক রোগের শীর্ষ এই চারটি রোগের পেছনে অবশ্য রয়েছে এধরনের পশ্চিমা খাদ্য বিধি। এদিকে এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষ পশ্চিমা ভাবধারা ও খাদ্যাভ্যাসে ক্রমেই অভ্যস- হচ্ছে; অর্থনীতি উন্নত হচ্ছে, নগরায়ন বাড়ছে, শরীরচর্চা কমছে, ফাস্টফুড ও কোমলপানীয় গ্রহণ বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। তাই পশ্চিমা দেশের এসব রোগ এখন নিম্নআয় ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে বাড়ছে।
আরও একটি কথা হলো: যারা এসব চিরাচরিত, প্রচলিত খাবার গ্রহণ করেন, এদের মধ্যে এসব রোগ অনেক কম। এবং যারা স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার জন্য বা খাদ্যবিধি অনুসরনের জন্য পশ্চিমা খাদ্যাভ্যাস বর্জন করেছেন এদের স্বাস্থ্যের দ্রুত তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি হয়েছে। তৃতীয় কথাটি হলো: খাদ্যাবিধি ক্রটিপূর্ণ হওয়ার কারণে যে অসংখ্য লোক নানা রোগে ভুগছে এদের চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। তাই সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে হলেও মানুষের খাওয়ার এ অভ্যাসকে উৎসাহিত না করার পক্ষে যুক্তি প্রবল। তার শেষ গ্রন্থে মাইকেল পোলান বলেছেন, খাদ্য গ্রহণ করুন, খুব বেশি নয়। বিশেষ করে শাক-সবজি ও উদ্ভিদ খাবার। প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিন। টেলিভিশনে যেসব খাবারের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, নকল সব খাবার ও খাদ্যজাত পণ্য সেসব খাবার বর্জনের কথা তিনি বলেছেন। যারা স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করেন, যেমন শাক-সবজি ফল, শস্য টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেয়ার মত অর্থ সামর্থ তাদের থাকেনা। বাজারে, খোলা বাজারে, হাটে যেখানে তাজা শাক-সবজি মাছ প্রতিদিন নিয়ে আসে বিক্রেতারা ঝুঁড়িতে করে গ্রাম থেকে, সেসব হাট বা গঞ্জে সওদা করা অনেক ভালো স্বাস্থ্যের জন্য টাটকা জিনিষ কিনতে পারা যায়। মাইকেল পোলান আরও জোর দিয়েছেন রান্নার প্রতি। নিজেদের জন্য রান্না করা হলো ভালো খাওয়ার বড় উপায়। ঘরে রান্না করা তেমন কঠিন ও সময় সাপেক্ষ নয়, আমরা করতে চাইনা বলে রান্না করা হয় না। ঘরে চুলো জ্বালাতে অনেকের অনীহা। স্বামী-স্ত্রী দুজনে শেয়ার করেও রান্না করা যায়। না কেন? খাওয়ার ধরনের মধ্যে তিন বেলা আহার ও তিনটি স্ন্যাকস্ । রাতের খাবার হবে হালকা। স্ন্যাকস্ হবে তাজা বা শুকনো ফল, দধি, অংকুরিত ছোলা, মুড়ি হতে পারে সবজির সালাদ, বাদাম, এগুলোতে থাকে প্রচুর পুষ্টি উপকরন। প্রতি বেলার আহারে মাঝে মাঝে টুকটাক নাস-ার জন্য থাকতে পারে বাদাম, ছোলা, ফল, মৌসুমী ফল। দুরপাল্লার ভ্রমনের সময় এধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার সঙ্গে রাখতে পারেন। আমাদের কোমরের বেড় যে বাড়ছে, তলপেটে মেদ জমছে, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। কম খাওয়া উচিত, প্রচুর খেতে হবে শাক-সবিজ, ফল, মাছ ও শস্যদানা। গোস-, চর্বি, মিষ্টি, নুন, তেল যত কম তত ভালো। শরীরের অবয়ব যদি নাসপাতির মত হয় তাহলে ভালো, আপেলের মত হলো খুবই খারাপ। তার পরামর্শ হলো: টেবিলে বসে খাবেন, মনদিয়ে। ডেস্কে বসে বা সোফায় বসে টিভি দেখে দেখে খাওয়া মোটেই উচিত নয়। কি খাচ্ছেন, যখন খাচ্ছে, মনোযোগ না দিলে বেশি খাওয়া হয়। স্থূল হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে একটি টিপস আছে। পোলানের প্রিয় টিপস। এতে তার শরীরে ওজন কমিয়ে রাখতে সাহায্য হয়েছিলো। “পেট ভরাট লাগার আগেই খাওয়া বন্ধ করুন” জাপান ও ফরাসী সমাজে এ অভ্যাস বহুদিন থেকে চালু। জেনে আশ্চর্য হবেন, এই ব্যবস্থাপত্র দিয়েছিলেন নিওনার্দো দা ভিঞ্চি। ফরাসী যারা স্লিম, এরা খায় কম কম, ধীরে সুস্থে খায়, স্ন্যাকস্ মোটেই খায় না। কম করে নেবেন পাতে, খাবেন ধীরে সুস্থে, সময় লাগিয়ে, বিশ মিনিট যদি পার করতে পারেন, তাহলে কম খেয়ে পেটভরাট লাগবে, তৃপ্তি আসবে। পেনসিলভেনিয়া স্টেটের খাদ্য বিজ্ঞানী বরবারা জে রলস্ এক কর্ণেলের ব্রায়ান ওয়ানসিকের বক্তব্য: ছোট ছোট প্লেটে কম করে খাবার পরিবেশন করা হলে মানুষ কম খায়। বিশেষ কোনও উৎসবে একটু বেশি খেলে ক্ষতি নেই, তবে প্রতিদিনের খাবারর অবশ্যই হবে পরিমিত। বিশেষ কোনও উৎসবের ভোজ খেয়ে মানুষ আনন্দ পায়, তাই এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা কেন? তবে উৎসবে খাওয়া একথা মনে রাখা উচিত, প্রতিদিন ভোজ খাওয়া ও ঠিক নয়।
ধরুন লো-ফ্যাট ও ক্যালোরি আইসক্রিম কাপের র্অধেকটা খেলেন, মাসে একদিন, ক্ষতি কি? এটুকু প্রশ্রয় চলবে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা।