Author Topic: খেলোয়াড়দের পুষ্টি  (Read 3239 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
খেলোয়াড়দের পুষ্টি
« on: January 13, 2012, 06:18:29 PM »
শারীরিক সুস্থতা খেলোয়াড়দের জীবনের পূর্বশর্ত, তাই তাদের সব সময় পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক খাবার খাওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে আউডডোর গেমসের ক্ষেত্রে। যেমন—ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, সাঁতার ইত্যাদি।

শর্করাজাতীয় খাদ্য
খেলোয়াড়দের খাবারে মোট ক্যালরির ৬০ শতাংশ শক্তি শর্করা থেকে আসতে হবে। চাল, ভুট্টা, গম, আলু ইত্যাদি তিন ঘণ্টা পর পর খেতে হবে, যাতে দেহে গ্লাইকোজেন জমা হয়। খুব কম শর্করা গ্রহণ করলে গ্লাইকোজেন ক্ষয় বেশি হয়। এতে প্রশিক্ষণ ও খেলার ওপর প্রভাব পড়ে। ছোটখাটো ব্যায়ামের জন্য শর্করাই প্রধান শক্তির জোগানদার। এটা অ্যারোবিক ও অ্যানারোবিক দুই ধরনের ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজন। এ জন্য ব্যায়ামের আগে হালকা নাশতা খেয়ে নেওয়া ভালো।
সহজ শর্করা চিনি-মিষ্টি-গ্লুকোজ বাদ দিয়ে জটিল শর্করা যেমন—শস্য, ভুট্টা, রুটি ইত্যাদি খেলে ভালো হয়। কারণ, চিনি যেমন সহজেই শক্তি জোগায়, তেমনই খুব তাড়াতাড়ি শোষিত হয়ে ক্লান্তি সৃষ্টি করে। খাবারের একটি বড় অংশে থাকবে জটিল শর্করা। গ্লাইকোজেন বেশি প্রয়োজন হয় যাঁরা অধিক ব্যায়াম করেন তাঁদের। ব্যায়ামের পর শর্করাসমৃদ্ধ খাবার তিনটি বিষয়ের জন্য দিতে হবে:
 মাংসপেশিতে গ্লাইকোজেন জমা করার জন্য।
 ব্যায়ামের সময় শর্করার চাহিদা বেড়ে যায়।
 শক্তির জন্য চর্বির প্রয়োজনে শর্করা ক্ষয় বেশি হয়।

চর্বিজাতীয় খাদ্য
মোট খাবারের ৩০ শতাংশ থাকবে সম্পৃক্ত চর্বি এবং ৭০ শতাংশ থাকবে অসম্পৃক্ত চর্বি। চর্বি শরীরে জমা থাকে দেহে শক্তি সরবরাহের জন্য। দেহে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ থাকলে শতকরা ৬৬ ভাগ চর্বি শক্তি হিসেবে ব্যবহূত হয়। কিন্তু অ্যানারোবিক পদ্ধতিতে মাংসপেশির কঠিন ব্যায়াম করলে শর্করার উৎস থেকে প্রধানত শক্তি ব্যয় হয়। ব্যায়ামের জন্য চর্বি অবশ্যই প্রয়োজন। পর্যাপ্ত চর্বি সাহায্য করবে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড ও চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য।

প্রোটিনজাতীয় খাদ্য
দেহের শক্তি বজায় থাকা ও ক্যালরি ব্যয়ের জন্য সাধারণ লোকের চেয়ে খেলোয়াড়দের উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ আবশ্যক। প্রতি বেলায় থাকতে হবে—ডিম, দুধ, ছানা, মাছ, মাংস ও ডাল। দিনে প্রায় ২০০-৩০০ গ্রাম প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ভিটামিন
ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা অন্যদের মতোই হবে। যদি খাবারে পর্যাপ্ত শর্করা থাকে তাহলে দেহে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাব হয় না। শর্করাযুক্ত খাবার গ্রহণ করার ফলে যে শক্তি আহরণ হয়, সেটা চর্বি ও আমিষের অপচিতির সময় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কো-এনজাইম হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন সি দেহের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। এদিকে অ্যারোবিক ব্যায়ামের ক্ষেত্রে দেহে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয়। এতে মাংসপেশির আঘাত বা ক্ষয় বেড়ে যায়। ভিটামিন সি সেটা থেকে দেহকে রক্ষা করে।
ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সিও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন এ-র ভালো উৎস হলো বিটা ক্যারোটিনযুক্ত খাবার। যেমন—গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পাকা পেঁপে, পাকা আম, গাঢ় সবুজ পাতাজাতীয় সবজি, পালংশাক, কচুশাক, মেথিশাক, ধনেপাতা, বিট, মিষ্টি আলু ইত্যাদি। ভিটামিন ই যুক্ত খাবার—পোলট্রি হাঁস-মুরগি ইত্যাদি, সমুদ্রের মাছ, গমের ভুসি, মাছের তেল, ভুসিযুক্ত রুটি, বাদাম, তৈলবীজ, ডিম, ভুট্টা ইত্যাদি। আরও কিছু উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা হলো সেলেনিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক। দেহে উৎপাদিত ফ্রি রেডিকেল কোষকে ধ্বংস করে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এগুলোর উপশম ঘটায়।

খনিজ পদার্থ ও তরল
অতিরিক্ত পানি ক্ষয় ও ইলেকট্রোলাইটের অসমতা হিট স্ট্রোকের জন্ম দেয়। এ সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো খাবারের খনিজ পদার্থ যুক্তকরণ। জিংক খেলোয়াড়দের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় খনিজ। এ জন্য তাঁদের খাবারে মাংস, বিশেষ করে গরুর মাংস রাখতে পারলে ভালো হয়।
অনুশীলনের কারণে খেলোয়াড়দের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম নির্গত হয়। ফলে তাঁদের দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি গরম আবহাওয়ার কারণেও সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ঘাটতি হতে পারে। এ জন্য ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর পর আধা লিটার পানি পান করা উচিত। ইলেকট্রোলাইটের সমতার জন্য এক লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম গ্লুকোজ, ১ গ্রাম সোডিয়াম এবং ১ গ্রাম পটাশিয়াম যুক্ত করা উচিত। ব্যায়ামের সময় যখন শক্তির বাহিদা বেড়ে যায়, তখন দেহের তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। অতিরিক্ত তাপ সংরক্ষণ করতে শরীর সব সময় চেষ্টা করে। আবার যখন অতিরিক্ত ঘাম হয়, তখন রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। অনেকে পানি গ্রহণের পরিমাণ হিসাব করতে পারেন না। যেমন—কতটুকু পানি গ্রহণ করবেন, পানিতে কী দ্রবণ ব্যবহার করবেন এবং কখন পান করবেন। তাঁরা ছোট ছোট বিরতিতে এক চুমুক করে পানি পান করতে পারেন।
তরল গ্রহণের সময় ক্ষুধার্ত থাকা ভালো লক্ষণ নয়। ব্যায়ামের সময় লক্ষ রাখতে হবে, যাতে শরীরে পানিশূন্যতা না থাকে। সাদা পানির চেয়ে সোডিয়ামযুক্ত পানি ইলেকট্রোলাইটের সমতা রক্ষায় বেশি কার্যকর। আদর্শগত দিক থেকে স্বাদযুক্ত পানীয় দ্রুত শরীরে শোষণ হয়। যেমন—ফলের রস, লাচ্ছি, সাচী ইত্যাদি। আমাদের দেশের খেলোয়াড়েরা সাধারণত ডাবের পানি, লেবুর শরবত গ্রহণ করে থাকেন। ২০০০ সালে FAO ঘোষণা দেয়, ডাবের পানি খেলোয়াড়দের পানীয় হিসেবে উত্তম, কারণ এটা প্রাকৃতিক পানীয়। ১০০০ মিলিলিটার ডাবের পানিতে থাকে পটাশিয়াম ২৫০ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২২ মিলিগ্রাম, ক্লোরাইড ১১৫ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৮ মিলিগ্রাম, চিনি ৪-৬ গ্রাম। মোট কথা, খেলোয়াড়দের খাবারে থাকবে পর্যাপ্ত অমিষ, চর্বি, শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। ক্যালরির পরিমাণ হবে ৩৫০০-৪০০০। মহিলা খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে খাবারে লৌহের পরিমাণ বাড়াতে হবে। খেলোয়াড়দের নাশতায় থাকবে শুকনো ফল, টোস্ট, রুটি, জ্যাম, মধু, জুস, দুধ, ডিম ইত্যাদি। সারা দিনের অন্যান্য খাবারে থাকবে—আলু, ভাত, রুটি, সবজি, ডাল, মাংস, মাছ ইত্যাদি। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি ও পানীয়। বায়ু উদ্রেককারী খাবার যত কম হয়, তত ভালো। যেমন—বরবটি, বাঁধাকপি, মুলা, শালগম, কাঁচা পিঁয়াজ ইত্যাদি।

আখতারুন নাহার আলো
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১৬, ২০১১
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection