Author Topic: সুস্থ হার্ট, কর্মক্ষম জীবন বিশ্বজুড়ে  (Read 3182 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
সারা বিশ্বে হৃদরাগের প্রকোপ প্রতিদিনই বাড়ছে মহামারির মতো। সে জন্য বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন ১০ বছর ধরে হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য গণসচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার বিশ্ব হার্ট দিবস পালন করা হতো শতাধিক দেশে। এ বছর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পালন করা হবে। প্রতিবছর এর নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে প্রতিপাদ্য (মূল স্লোগান) ঠিক করা হয়। এবার করা হয়েছে আই ওয়ার্ক উইথ হার্ট (এক পৃথিবী, এক ঘর, এক হূদযন্ত্র)।

পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ হার্ট-সংক্রান্ত রোগে মারা যায়। আর এ-সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। অথচ এই মৃত্যুর ৮০ শতাংশ কমানো সম্ভব প্রতিরোধের মাধ্যমে। হৃদরোগের প্রভাব যেমন রয়েছে ব্যক্তিজীবনে, তেমনি রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে। কারণ, অধিকাংশ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয় জীবনের সবচেয়ে কর্মক্ষম সময়ে।

বাংলাদেশে হৃদরোগীর সংখ্যা দেড় কোটির বেশি। শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত—সবারই হৃদরোগ হতে পারে। যদিও বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ রয়েছে। এর মধ্যে করোনারি হার্ট ডিজিজ, শিশুদের হৃদরোগ (কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ), রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ, পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ উল্লেখযোগ্য।

বিভিন্ন কারণে হৃদরোগ হলেও প্রধান কারণগুলো হচ্ছে: ধূমপান (ধূম্র বা ধূম্রবিহীন), ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া হৃদরোগ। এ ছাড়া জীবনযাত্রা, যেমন—কম কায়িক পরিশ্রম, অপুষ্টিকর খাদ্য, মোটা হয়ে যাওয়া, উত্তেজনা-উত্কণ্ঠা হৃদরোগের অন্যতম কারণ।

হৃদপিণ্ড হচ্ছে শরীরের চালিকাশক্তি। হৃদপিণ্ডের মাধ্যমেই অক্সিজেন ও পুষ্টিকর পদার্থ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে রক্তের মাধ্যমে। হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকলে শরীর ভালো থাকে।

‘সুস্থ হার্ট, সুস্থ কর্মক্ষম জীবন’। আর শরীর সুস্থ থাকলে কর্মক্ষমতা বাড়ে, কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতির হার বাড়ে, চিকিত্সার খরচ কমে যায়, মনোবল অটুট থাকে এবং চাকরিচ্যুতির আশঙ্কা কম থাকে। সচেতন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এর পুরোপুরি সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। তারা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুস্থ জীবনযাত্রা সম্পর্কে সচেতন করছে নিজেদের স্বার্থেই।

নিজের জীবনকে সুন্দর করে গোছানোর দায়িত্ব নিজের। একটু মনোযোগ দিলে, একটু জীবনযাত্রা পরিবর্তন করলে রোগবালাই কমে যাবে। কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চললে হৃদরোগ আপনা থেকে দূরে থাকবে; যেমন—পরিমিত খাবার গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম বাড়ানো, যেকোনো ধরনের ধূমপান বর্জন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপানমুক্ত কাজের পরিবেশ, বাসস্থান, উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা ও উত্তেজনা কমিয়ে আনা।

ওপরের সব নিয়মকানুন এক দিনে শুরু করা হয়তো কারও কারও জন্য কঠিন। তবে আজ যেকোনো একটি দিয়ে শুরু করুন, দেখবেন, কয়েক দিনের মধ্যেই ধীরে ধীরে সব পালন করা শুরু করেছেন। কারণ, শুরু করার দিন থেকেই সুস্থবোধ করছেন শারীরিক ও মানসিকভাবে। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, সুস্থ কর্মক্ষম থাকুন আপনার জন্য, আপনার পরিবারের জন্য এবং আপনার সমাজের জন্য।
বাংলাদেশে কার্ডিওলজিস্টের সংখ্যা ৩০০ জনের কিছু বেশি, কার্ডিয়াক সার্জনের সংখ্যা ৮০ জনের মতো, আর কার্ডিয়াক অ্যানেসথেসিস্ট ও পারফিউশনিস্ট আছেন হাতেগোনা কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বেসরকারি খাতে কর্মরত। এই অল্পসংখ্যক জনশক্তি নিয়ে দেশব্যাপী কার্ডিয়াক সার্ভিস বা হৃদরোগের সেবা দেওয়া দুরূহ, তবে অসম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে সারা দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে সরকারিভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হৃদরোগের সেবার আওতায় আনা সম্ভব।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো হচ্ছে গ্রামবাংলার চিকিত্সার প্রাণকেন্দ্র। অনেক উপজেলা হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্টের পদ থাকলেও জনবলের অভাবে এ রোগের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আনুষঙ্গিক জনবল নিয়োগের মাধ্যমে মেডিসিন স্পেশালিস্টকে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের মাধ্যমে প্রাথমিক হৃদরোগের চিকিত্সা দেওয়া সম্ভব। জটিল হৃদরোগীদের উপজেলা পর্যায়ে চিকিত্সা দেওয়া সম্ভব না হলে সরাসরি কাছের জেলা হাসপাতালের জরুরি কার্ডিয়াক কেয়ার সেন্টারে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এ জন্য জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক সুবিধাসহ করোনারি কেয়ার ইউনিট স্থাপন করা দরকার। দেশে বর্তমানে কার্ডিওলজিতে প্রশিক্ষিত যে জনবল রয়েছে, তাতে সহজেই জেলা হাসপাতালগুলোতে হৃদরোগের জরুরি ও রুটিন চিকিত্সাসেবা দেওয়া যেতে পারে।

যেসব রোগীর এনজিওগ্রাম বা অন্য ইনভেসিভ পরীক্ষার দরকার হবে, তাদের কাছের হাসপাতালে পাঠানো যেতে পারে, যেখানে এনজিওগ্রাম বা এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। পুরোনো জেলা হাসপাতালগুলোতে সরকারি উদ্যোগে পর্যায়ক্রমে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ‘ক্যাথ ল্যাব’ স্থাপন করা যেতে পারে। দেশে ১৪টি কার্ডিয়াক সার্জিক্যাল হাসপাতালের মধ্যে ১৩টি ঢাকায় অবস্থিত। দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় এসে হূদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা রোগীর চিকিত্সা নেওয়া তার ও তার আত্মীয়স্বজনের জন্য ব্যয়বহুল, অসুবিধাজনক ও ভোগান্তির। এ জন্য বিভাগীয় সদরে বা পুরোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন করা দরকার। এসব হাসপাতালে বয়স্ক রোগী, শিশু ও কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের হূদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। তবে জটিল শিশু হৃদরোগীদের অস্ত্রোপচারের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালে দুটি পৃথক ইউনিট খোলা হয়েছে, যেখানে সারা দেশের জটিল শিশু হৃদরোগীরা সেবা পেতে পারে। তবে প্রতিকারের পাশাপাশি হৃদরোগ প্রতিরোধের ওপরও জোর দিতে হবে। আর এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে।

এম এইচ মিল্লাত
সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিয়াক সার্জারি
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল।

এম এইচ মিল্লাত
সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিয়াক সার্জারি
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল।
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection