Author Topic: সুখ যদি নাহি পাও, যাও সুখের সন্ধানে যাও  (Read 3139 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
সুখী ও সুস্থ থাকার জন্য কী চাই? জটিল প্রশ্ন। কিছু জীবনাচরণ, কিছু শখ মেটানো—এই জীবনবিলাসে সুখ আসে, কিছুটা হলেও।
সকালের ব্যায়াম: দিনের শুরুতে এক ঘণ্টা ব্যায়াম। হতে পারে হাঁটা, নয়তো টেনিস পেটানো, নয়তো বাগানে কাজ করা। সক্রিয় থাকলে হলো। দিনটা তৈরি হয় দেহমনের জন্য।
কিছু একাকী সময়: বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানোতে সুখ আসে জানি, তবে কিছু সময় কেবল নিজের জন্য থাকলে, একাকী কাটালে সন্তুষ্টি আসে, তৃপ্তি আসে। পরিবারের সবাই ঘুম থেকে ওঠার আগে আমার শয্যাঘরের সামনে একচিলতে বারান্দায় বসে থাকি খুব ভোরে, নীরবে। আমার ভালো লাগে।
কোনো একদিন বন্ধুদের সঙ্গে রাতে রেস্তোরাঁয় বসে আহার: সামনে খাবার, মোমবাতির আলো, কোনো কথা নেই: বন্ধুত্ব যেন আরও গাঢ় হয়। এর কি কোনো স্বাস্থ্যহিতকরী ফল আছে? জানি না।
জীবনসঙ্গীরাও একদিন বেড়াতে পারেন দূরে কোথাও: কপোত-কপোতী যথা। এতে বন্ধন দৃঢ় হয় দুজনের মধ্যে। কথা নয় অনেক, হাসাহাসি। মন প্রফুল্ল। শরীর চনমনে। বয়সের বাধা নেই এতে।
খেলাধুলা, জীবনে: প্রতিযোগিতার খেলা, শব্দজব্দ, দৌড়ঝাঁপ, গোল্লাছুট, হ্যান্ডবল, টেনিসবল পেটানো, ব্যাডমিন্টন—জীবনে আনে আনন্দ, স্ট্রেস বাস্টার।
নিজেকে সংঘটিত করা, সংহত করা: লিডারশিপ সেমিনার, নিজে করি কাজ, এসব করলে টাইম ম্যানেজমেন্ট শেখা যায়, কোন কাজ অগ্রাধিকার পাবে স্থির করা যায়, উৎপাদনশীলতা বাড়ে, লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। মাসিক ক্যালেন্ডার দিনবিশেষে কাজ কী করবেন লিখে রাখুন। শেষ হলে কাজ, কেটে দিন। জানবেন কী অর্জন।
ব্যায়ামের কর্মসূচি চাই: ব্যায়ামের নিয়মিত রুটিন। বড় সন্তুষ্টি আসে মনে। দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার করা, হাঁটা। ভেতর-বাইর—সবদিকই সুখী ও সুস্থ থাকে ব্যায়াম করলে, ক্রনিক রোগ থেকে মুক্তি, ওজন ঠিক রাখা, যৌনজীবন সুস্থ রাখা, মেজাজ ভালো রাখা—কত ভালো—কত লাভ! শরীরচর্চা না করলে স্থূলতা, হূদেরাগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ—সব সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমনকি ব্যায়াম না করলে বিষণ্নতা ও উদ্বেগও হয় সঙ্গী।
সহূদয়তা ও বদান্যতা: সুখ পেতে চান? অন্যকে সুখী হতে সাহায্য করুন। এমন কিছু করুন, যাতে একজনের মন ভালো থাকে। দিনে অন্তত ছয়টি ধন্যবাদ অর্জন করার মতো কাজ করুন। সুখ পাবেন।
একা বন্ধের দিনে প্রশ্রয় আহার, এক বেলা: অতিভোজনের বিরুদ্ধে শুনছি অবিরাম; মানছি, সেভাবে চলছি। একদিন হঠাৎ নিয়ম ভাঙা কেন নয়? পায়েস বা পরমান্ন, বিরিয়ানি, রেজালা, মিঠাই, কোক। ছাত্রাবস্থায় হোস্টেলে থাকতাম, সারা মাস পানসে খাবার, মাসের শেষে ফিস্টের দিনে কী সুখ!
পরিবারের সঙ্গে সময়: টিভি দেখে হোক, খাবার টেবিলে হোক, খোলামেলা আলাপ, হাসাহাসি, খুনসুটি, মনের ফেঁপে ওঠা বেলুন চুপসে যায় সবার। দেহমন শিথিল হয়। সুখ আসে পায়ে পায়ে।
পরিবারের সঙ্গে বা বন্ধুদের সঙ্গে আহার: ভালো আহার বা সৎসঙ্গ একেক সময় হয়ে ওঠে চেতনার জন্য মহাভোজ। চোখ, নাক, কান ও মুখ থেকে আসা ইতিবাচক সংকেতগুলো, আনন্দের সংকেতগুলো মগজ গ্রহণ করে, উপলব্ধি করে যে দেহ ও মনের পরিপুষ্টির জন্য এ বড় প্রয়োজন। একেই বলে সুখ। বলেন মনোবিজ্ঞানী ডেভিড জি, ‘আমার সুখ আসে স্বল্পস্থায়ী কোনো অভিজ্ঞতা থেকে। যেমন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বা বন্ধুদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে কিছু সময় কাটানো, বড় কোনো ঘটনা নয়—হয়তো রাতের ডিনার সবাই একসঙ্গে খাওয়া—সবাই উপভোগ করছে।’ একে বলে সুখ।
কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো: সোফায় বসে গিটার বাজালাম, চাপ না কমা পর্যন্ত। বড় সুখ এতে। বড় বড় যন্ত্রশিল্পী এমনকি আনকোরা নতুন বাজনা শেখা লোকেরাও বাজনা বাজিয়ে বড় সুখ পান। মন একান্তে উপভোগ করে কর্মটি। এক মনেই হয়তো। সেতারবাদন, গিটারবাদন যা-ই হোক। নয়তো ছবি আঁকা, ভাস্কর্য গড়া, বড় সুখ।
বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানো: বুড়ো খোকাদের কি ছোট খোকাদের সঙ্গে খেলতে মানা আছে। না তো? তাহলে তাদের সঙ্গে একটু খেলা করে, মজার গল্প বলে বলে কী সুখ! জানেন?
হাঁটুন: ঘরের বাইরে পথচলা, পায়ে চলা পথে হাঁটার মধ্যে কী যে সুখ! নবকুমার হয়ে কপালকুণ্ডলাকে খোঁজা কেন বনপথে? পাতা পড়া পথেও হাঁটুন জোরে। আধঘণ্টা অন্তত, কী সুখ! সঙ্গীর সঙ্গে হাঁটলে আরও আনন্দ! আর স্বাস্থ্যহিতকরী তো বটেই।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৬, ২০১১
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection