Author Topic: কর্মজীবী মায়েদের জন্য  (Read 4798 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
কর্মজীবী মায়েদের জন্য
« on: January 13, 2012, 08:33:54 AM »
কর্মজীবী মায়েরা কর্মক্ষেত্রে থাকা অবস্থায়ও শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বুকের দুধ চিপে বের করে বাড়িতে সংরক্ষণ করে তা শিশুকে খাওয়ানো যায়। এ দায়িত্ব পালন করতে হবে বাড়িতে শিশুকে যিনি দেখাশোনা করবেন, তাঁকে। তাঁকে শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা কতটুকু তাও বোঝাতে হবে।
বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, একজন কর্মজীবী মা বাড়িতে ১০ আউন্স (৩০০ মিলিলিটার) পর্যন্ত দুধ বের করে রেখে যেতে পারেন। বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস কে রায় প্রথম আলোকে বলেন, যেসব কর্মজীবী মা দিনের সাত থেকে আট ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকেন, সেই সময়ের জন্য ৩০০ মিলিলিটার পরিমাণ দুধ বাচ্চার জন্য যথেষ্ট। তবে মা কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়াবেন। রাতের বেলায়ও শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ দিতে হবে। এতে করে বুকে দুধের পরিমাণ বেশি হবে এবং ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর খাবারের চাহিদা পুরোপুরি পূরণ হবে। এর পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি পারিবারিক খাবারে শিশুকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্যমতে, হাতের সাহায্যে অথবা ব্রেস্ট পাম্পের সাহায্যে দুধ বের করে সংরক্ষণ করা যায়। হাতের সাহায্যে দুধ বের করার পদ্ধতি সহজ, ঝামেলামুক্ত ও নিরাপদ। ব্রেস্ট পাম্পের সাহায্যে দুধ বের করার বিপক্ষে থাকেন চিকিৎসকেরা। যেভাবেই হোক, চিপে বের করা দুধ সাধারণ তাপমাত্রায় ছয় থেকে আট ঘণ্টা রাখা যায়। অন্যদিকে ফ্রিজ ব্যবহার করলে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বুকের দুধ ভালো থাকে। তবে চিপে রাখা দুধ শিশুকে খাওয়ানোর আগে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। ফ্রিজ থেকে বের করে একটি গরম পানির পাত্রের ওপর দুধের পাত্রটি রেখে একটু গরম করে নিতে হবে। অক্সিটোসিন নামের হরমোনটি মায়ের বুকে তৈরি হওয়া দুধকে বের করতে সাহায্য করে। তাই এ হরমোনটি তৈরি হওয়াও জরুরি। শিশুকে বারবার দুধ খাওয়ানো হলে মায়ের বুকে দুধ বেশি তৈরি হয়। তাই কর্মজীবী মায়েদের কর্মস্থলে থাকা অবস্থায়ও বুকের দুধ চিপে বের করে সংরক্ষণ করতে হবে।

মায়ের প্রস্তুতিঃ কাজে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই মাকে এ বিষয়ে বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে। শিশুকে এবং তাকে যিনি দেখবেন তাঁকে বিষয়টিতে প্রস্তুত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে বড় মুখের ঢাকনাসহ পাত্র নিয়ে মাকে নিশ্চিন্ত মনে আরাম করে বসতে হবে। তাড়াহুড়ো করলে ভালোভাবে দুধ বের হবে না। বাড়িতে থাকা অবস্থায় দুধ বের করার সময় সন্তানকে কাছে রাখতে হবে, তার কথা ভাবতে হবে, কোলে নিতে হবে অথবা তাকে দুধ খাওয়াতে হবে। আর কর্মক্ষেত্রে শিশুর কথা ভাবার পাশাপাশি শিশুর ছবিও দেখতে পারেন মায়েরা। তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে স্তনে পেঁচিয়ে রাখা, মালিশ করার পাশাপাশি পানি, দুধ বা শরবত খেতে হবে। বাড়িতে দুধ সংরক্ষণের জন্য মায়েদের অনেক সময় ব্যয় করতে হবে দুধ বের করার কাজে। তাই এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতার পাশাপাশি মাকেও অনেক বেশি ধৈর্য ধরতে হবে সন্তানের কথা চিন্তা করে।

দুধ বের করার পদ্ধতিঃ বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের হ্যান্ডবুকে দেওয়া তথ্যমতে, মায়ের বুকে দুধ জমা হওয়ার পর স্তনের কালো অংশের নিচে এসে জমা হয়। সে জন্য দুধ বের করার সময় আঙ্গুলের চাপ যাতে বোঁটার চারদিকে কালো অংশের ওপর পড়ে, তা খেয়াল রাখতে হবে। আঙ্গুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো কালো অংশ থেকে দুই স্তনের দুধ বের করতে হবে। বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের মতে, স্তনের পেছন দিকের অংশের ত্বকে পুরো হাতে চাপ দিয়ে দুধ বের করা ঠিক নয়। হাতের বুড়ো আঙ্গুল স্তনের বোঁটার চারপাশের কালো অংশের ওপর এবং তর্জনী নিচে রাখতে হবে। অন্য আঙ্গুলগুলো দিয়ে স্তনের নিচের দিকের ভার নিতে হবে। তর্জনী ও বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে কালো চামড়া একটু পেছন দিকে টেনে নিয়ে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিতে হবে। এভাবে বারবার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে স্তনের বোঁটায় চাপ না লাগে।

দুধ সংরক্ষণঃ বড় মুখের ঢাকনাওয়ালা কয়েকটি পাত্রে দুধ সংরক্ষণ করতে হবে। পাত্রগুলো ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। মায়েরা যদি সাত থেকে আট ঘণ্টা বাইরে থাকেন, তখন তিন থেকে চারবার শিশুকে খাওয়ানোর জন্য পৃথক পাত্রে দুধ সংরক্ষণ করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে চিপে রাখা দুধ বিভিন্ন পাত্রে নম্বর দিয়ে অথবা বিভিন্ন রং দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে হবে। আগে চিপে রাখা দুধ আগে খাওয়াতে হবে।

খাওয়ানোর নিয়মঃ সংরক্ষিত দুধ কাপে অথবা চামচ দিয়ে খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। শিশুর মুখে একবার বোতল দিলে শিশু আর বুকের দুধ চুষে খেতে চায় না।

সব মায়েরই জেনে রাখা ভালোঃ কর্মজীবী মা ছাড়াও এ পদ্ধতি যেকোনো সময় যেকোনো মায়ের প্রয়োজন হতে পারে। প্রত্যাশিত সময়ের আগে সন্তান জন্ম নিলে, শিশু দুর্বল ও অসুস্থ থাকলে চুষে দুধ খেতে পারে না। মা অসুস্থ থাকলেও এ পদ্ধতিতে সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারেন মায়েরা। মায়ের বুকে অতিরিক্ত দুধ জমে ভারী হয়ে গেলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে মায়েরা আরাম পেতে পারেন।

মানসুরা হোসাইন
সূত্রঃ প্রথম আলো, জুলাই ২৯, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection