শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য দুধ পানের সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা একান্ত জরুরি। মা শিশুকে নিয়ে কীভাবে বসেছেন, কী পদ্ধতিতে খাওয়াচ্ছেন তা সঠিক হওয়া দরকার। মায়ের বুকে শিশুর সঠিক স্থাপন এবং মা ও শিশুর সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সঠিক অবস্থান
মা ও শিশুর সঠিক অবস্থান বলতে আমরা বুঝি, মা শিশুকে কোলে নিয়ে নিশ্চিত আরামে বসে বা শুয়ে খাওয়াতে পারেন। শুয়ে খাওয়াতে চাইলে মা শিশুকে নিজের দিকে যথাসম্ভব বুকের কাছাকাছি টেনে নেবেন যেন শিশুর পেট, বুক মায়ের পেট ও বুকের সঙ্গে লাগানো থাকে এবং শরীরের পেছন অংশ সরলরেখায় থাকে।
বসে খাওয়ানোর সময়
মা বসে খাওয়ালে সোজা হয়ে পিঠের পেছনে একটি বালিশ নিয়ে বসবেন, যাতে কোমর বাঁকা না হয় এবং হাতের নিচে একটি বালিশ দেবেন, যাতে হাত ঝুলে না থাকে।
পিঠে বালিশ না দিলে কোমর বাঁকা করে সামনে বা পেছনে ঝুঁকে বসলে মা বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারবেন না, তাতে দুধ আসতে বাধা পাবে। শিশু পুরোপুরি দুধ শেষ না করে খেলে পরবর্তী দুধ তৈরিতে বাধা হবে। তাই এক স্তন খালি না করে শিশুকে অন্য স্তনে ছাড়িয়ে নেওয়া উচিত নয়। শিশু যতক্ষণ না ছেড়ে আসবে, ততক্ষণ খাওয়াতে হবে।
লক্ষ করুন
মায়ের কোলে শিশুকে পুরোপুরি তাঁর দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যথাসম্ভব বুকের কাছাকাছি নেবেন, যেন শিশুর পেট মায়ের পেটে এবং শিশুর বুক মায়ের বুকে লেগে থাকে। শিশুর হাড়, পিঠ ও পেছন যেন একটি সরলরেখায় থাকে অর্থাৎ শিশুকে যেন ঘাড় বাঁকা করতে না হয়। ঘাড় বাঁকানো অবস্থায় শিশু আরাম করে পেট ভরে খেতে পারে না বলে সে আগেই স্তন ছেড়ে দেয়। মা ইচ্ছে করলে শিশুর ঘাড়ের নিচে হাত দিতে পারেন। কিন্তু কখনোই মাথায় হাত দেওয়া যাবে না।
পরবর্তী পদক্ষেপ
শিশুকে এভাবে সঠিক অবস্থানে রেখে মা স্তনের বোঁটা শিশুর ওপরের ঠোঁটে কয়েকবার লাগাবেন, এতে শিশু বড় করে হাঁ করবে। এ সময় বোঁটাসহ স্তনের কালো অংশ শিশুর মুখে দিতে হবে। কেননা পেছনের কালো অংশের মধ্যে দুধ জমা থাকে।
শুধু বোঁটা মুখে নিয়ে চুষলে শিশু দুধ পাবে না বরং মা বোঁটায় আঘাত পাবেন।
এ রকম করে দুধ খাওয়ালে শিশু ঠিকমতো দুধ পাবে। শিশুর জন্মের পরপর কয়েকবার এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে পরে শিশুকে বুকের কাছে নেওয়া মাত্রই সে বুকের সঠিক স্থান চুষে খেতে পারবে।
যত তাড়াতাড়ি শিশুকে সঠিক পদ্ধতিতে বুকের দুধ পান শেখানো যাবে, তত তাড়াতাড়ি শিশু সঠিকভাবে বুকের দুধ খেতে সফল হবে এবং সুস্থ থাকবে।
প্রণব কুমার চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক, শিশু বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্রঃ প্রথম আলো, জুলাই ২৯, ২০০৯