Author Topic: প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার নির্ণয়  (Read 4147 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
সব নারী স্তন ক্যানসারের জন্য সমান ঝুঁকিপূর্ণ নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। ২০ বছর বয়সের আগে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে। স্তন ক্যানসার পুরোপুরি প্রতিরোধ করা না গেলেও, এ রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়। এ জন্য শারীরিক পরিশ্রম, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন স্বাভাবিক রাখা, প্রতিদিন ফলমূল-শাকসবজি খাওয়া, শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো প্রভৃতি প্রয়োজন।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে, এ রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা প্রায় শত ভাগ। তাই প্রত্যেক নারীকে তাঁর নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নিজের স্তনের স্বাভাবিকতা বুঝতে শেখা স্তন ক্যানসার বিষয়ে সচেতন হওয়ার প্রথম ধাপ। কারণ, স্তনে স্বাভাবিকভাবে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তন আসে। এতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়; যেমন—স্তনে ব্যথা হওয়া, ফুলে ওঠা, স্তনবৃন্ত থেকে রস ঝরা, চাকা অনুভব করা, স্তনবৃন্ত দেবে যাওয়া, স্তনের ত্বক পুরু হওয়া ও লাল হয়ে ফুলে ওঠা। অন্য অনেক রোগের কারণে স্তনে এসব উপসর্গ দেখা দেয়। তবে কিছু উপসর্গ; যেমন— ব্যথা, কিছুটা স্ফীত হয়ে ওঠা, বৃন্ত থেকে রস ঝরা ইত্যাদি হতে পারে কয়েকটি হরমোনের (ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্ট্রেরন ও প্রলেক্টিন) মাত্রার তারতম্যের কারণেও। স্তনে ক্যানসার হলেও এসব উপসর্গ হতে পারে, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসারে তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার নির্ণয়ে এর পদ্ধতি সম্পর্কে একটি ধারণা থাকা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন, যেমন আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির নীতিমালা বা গাইডলাইন রয়েছে।
৪০ বছর পার হলেই দু-এক বছর পরপর স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে অংশ নেওয়া এবং উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আজীবন তা চালিয়ে যাওয়া উচিত।
বর্তমানে ম্যামোগ্রাফি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের জন্য শক্তিশালী পরীক্ষা-পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ৪০ বছরের পর থেকে এ পদ্ধতিতে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যাচ্ছে অর্থাত্ চিকিত্সার মান ভালো হচ্ছে এবং রোগও নিরাময় হচ্ছে, যদিও এ পরীক্ষার কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে; কখনো কখনো এ পরীক্ষায় ক্যানসার শনাক্ত করা যায় না, বরং আরও পরীক্ষা করার প্রয়োজন দেখা দেয়।
ম্যামোগ্রাফি করার আগে এ পরীক্ষার উপকারিতা, সীমাবদ্ধতা, ঝুঁকির আশঙ্কা প্রভৃতি বিষয় জানা প্রয়োজন।
বয়স্ক নারীদের স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে অংশ নেওয়া নির্ভর করে শারীরিক সুস্থতার ওপর। শুধু বয়স এ বিষয়ে কোনো বাধা নয়।
প্রতি মাসে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা, চিকিত্সক দিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করানো স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
২০-৩০ বছর (৪০ বছরের আগে) বয়সী নারীদের প্রতি তিন বছর অন্তর চিকিত্সক দিয়ে শারীরিক পরীক্ষা (ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন—সংক্ষেপে সিবিই) করানো উচিত। কিন্তু ৪০ বছর পার হলেই প্রতিবছর চিকিত্সক দিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রত্যেক নারীকে ২০ বছর বয়স থেকে নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করতে শিখতে হবে এবং অনুশীলন করতে হবে। এ ধরনের পরীক্ষার উপকারিতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে হবে। স্তনে কোনো অসংগতি অনুভূত হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।
স্তন ক্যানসারের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রতিবছরই এমআরআই ও ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষা করানো উচিত। তবে এর আগে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।
দুই ধরনের পরীক্ষার উপকারিতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। ৩০ বছর বয়স থেকে ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের স্তন ক্যানসারের স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত। তবে প্রয়োজন হলে আরও কম বয়সেও এ স্ক্রিনিং করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিত্সক ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে তা নির্ধারিত হতে পারে।

স্তন ক্যানসারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কারা
পরিবারের মা, বোন, মেয়ে, খালা, ফুফু, নিকটাত্মীয় স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হলে জেনেটিক টেস্টিং এবি, আরসি, এ১, এবি, আরসি, এ২, জিন মিউটেশন হয়ে থাকলে
১০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বুকে রেডিওথেরাপি চিকিত্সা পেয়ে থাকলে
ক্যানসার পরিবার বা পরিবারে দু-চারজনের বিভিন্ন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে
স্তনে ক্যানসার-পূর্ব অবস্থা নির্ণয় হয়ে থাকলে; যেমন—ডাক্টাল কারসিনোমা ইন সিটু (ডিসিআইএস), লোবিউলার কারসিনোমা ইন সিটু (এলআইসিএস), এটিপিক্যাল ডাক্টাল হাইপারপ্লাসিয়া (এডিএইচ), এটিপিক্যাল লোবিউলার হাইপারপ্লাসিয়া (এএলএইচ)
স্তনের গ্রন্থি যদি খুব বেশি ঘনভাবে বিস্তৃত থাকে।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করে স্তন ক্যানসারজনিত মৃত্যুঝুঁকি কমানোর জন্য উত্তম প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে তিনটি পদক্ষেপ:
 ২০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা এবং দ্রুত স্তনের পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারা ও যথাযথভাবে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া।
 চিকিত্সক দিয়ে নিয়মমাফিক শারীরিক পরীক্ষা (ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন) করানো।
 ৪০ বছর হলে স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে অংশ নেওয়া। প্রয়োজন অনুযায়ী স্ক্রিনিং, ম্যামোগ্রাফি, আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআরআই (অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের জন্য) করানো।

পারভীন শাহিদা আখতার
অধ্যাপক, মেডিকেল অনকোলজি
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২১, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection