নবজাতক
আপনার যদি স্বাভাবিকভাবে প্রসব হয় তবে জণ্মের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নবজাতককে আপনার কাছে নিয়ে আসবে আপনার ডাক্তার, নার্স বা দাই৷ এটা খুবই জরুরী৷ এর ফলে বাচ্চার সাথে মায়ের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷বাচ্চা জণ্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই আপনার হয়তো জানতে ইচ্ছা করবে আপনার ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে, দেখতে কার মতো হয়েছে ইত্যাদি৷ কিন্তু সবার আগে আনপার জানা উচিত বাচ্চা স্বাভাবিক কিনা৷ এখানে স্বাভাবিক নবজাতকের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা আপনাকে জানানো হচ্ছে৷ জণ্মের পর হতে একমাস সময়কালকে নবজাতক বলা হয়৷
নবজাতকের শরীরের বৈশিষ্ট্য :
ওজন : নবজাতকের ওজন সাধারণভাবে ৩ কিলোর কম বা বেশি হয়ে থাকে৷
লম্বা : স্বাভাবিক শিশু জণ্মের সময় মোটামুটিভাবে ৫০ সেন্টিমিটার বা ২০ ইঞ্চির মতো লম্বা হয়৷
শরীরের অনুপাত : শিশুর মাথা শরীর হাত-পা-এর অনুপাত বড়দের শরীরের তুলনার অন্যরকম হয়৷ নবজাতকের মাথার মাপ দেহের মাপের এক চতুর্থাংশ হয়ে থাকে৷ দু�বছরে সেটা গিয়ে দঁাড়ায় এক পঞ্চমাংশ এবং আঠারো বছর লাগে বড়দের মতো মাথার মাপ দেহের এক অষ্টমাংশ হতে৷
মাথা:নবজাতকের মাথার মাপ দেহের তুলনায় বেশি হয়, এ সময়ে মাথার মাপ ৩৫ সেন্টিমিটার এর মতো হয়৷নবজাতকের মাথার গঠন নানান রকমের হতে পারে৷ কিছু কিছু গঠন একটু অস্বাভাবিক দেখালেও তা কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ এনিয়ে চিন্তার কোন কারণ নাই৷
চামড়া:জণ্মের সময়ে বাচ্চার সারা শরীর ভার্নিক্স বলে এক ধরণের মোমের মতো জিনিস দিয়ে ঢাকা থাকে৷ এটা স্বাভাবিক, কখনও তুলো বা অন্য কোনও জিনিস দিয়ে এটাকে তুলবার চেষ্টা করবেন না৷ এগুলো ধীরে ধীরে উঠে যাবে৷ ভার্ণিক্স উঠে যাওয়ার কয়েকদিন পর দেখা যায় হাত পায়ের চামড়ার পাতলা খোসার মতো আবরণ আলগা হয়ে উঠে উঠে যাচ্ছে৷ এতে ভয় পাওয়ার কিছু নাই৷ এটাও খুব স্বাভাবিক৷
চোখ : জণ্মের সময় চোখের পরিমাপ বড়দের এক তৃতীয়াংশের মতো হয়৷ জণ্মের পরে অনেক শিশুরই চোখের পাতা একটু ফোলা লাগে৷ এটা সাধারণত জণ্মের সময়ে যে চাপ পড়ে তার ফলে হয়৷ কয়েকদিনের মধ্যে দেখবেন ফোলা একদম মিলিয়ে গেছে৷ নবজাতকের চোখে যদি পিচুটি দেখেন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন৷ নিজে থেকে কোনও সময়েই চোখে মলম বা ড্রপ দেবেন না৷
কান : নবজাতকের কান নিয়ে চিন্তার কিছু নেই৷
মুখ : অনেক বাচ্চার জণ্মের সময়ই দঁাত দেখা যায়৷ এতে ঘাবড়ে যাবেন না৷ এই দঁাত কিছুদিনের মধ্যেই পড়ে যাবে৷অতিরিক্ত দুধ টানার ফলে নবজাতকের ঠেঁাটে ফোস্কার মতো ফুলে উঠতে পারে৷ এজন্য কখনো দুই খাওয়ানো বন্ধ করবেন না৷ নবজাতকের গাল দুটো বেশ ফোলা-ফোলা হয়৷ এর কারণ ওদের গালে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট বা চর্বি থাকে৷ যাকে আমরা বলি সাকিং প্যাড্স৷ এ সময়ে যেহেতু শিশু প্রচুর পরিমাণে বুকের দুধ চুষে থাকে সেই জন্যেই এই সাকিং প্যাড বা চোষক গদির দরকার৷ পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই চর্বির পরিমাণ কমতে থাকে এবং গাল ফোলার ভাবটাও কমে আসে৷
গলা : নবজাতকের গলা প্রায় থাকেই না বলা যায়৷ ওদের গলা এতই ছোট থাকে যে মনে হতে পারে মাথাটা সরাসরি ঘাড়ের সঙ্গে লাগানো৷ পরে আস্তে আস্তে গলা লম্বা হতে থাকবে এবং বড়দের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷
বুক : বুকের ভিতরে ফুসফুস বা হার্ট নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই৷ এগুলোর চিন্তা ডাক্তারদের উপরেই ছেড়ে দিন৷
নাভি : আসলে মায়ের শরীর হতে খাদ্য এবং অক্সিজেন ইত্যাদি শিশুর শরীরে নিয়ে যায় একটা গোল ফিতের মতো লম্বা জিনিস দিয়ে৷ এটাকেই আমরা বলি আমবিলিকাল কর্ড বা সাধারণ বাংলায় নাড়ি৷ জণ্মের পরে শিশুর এই নাড়ির আর কোনও প্রয়োজন থাকে না৷ তাই জণ্মের সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার বা নার্সরা নবজাতকের নাভি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে থেকে এই নাড়ি কেটে দিয়ে ভালো করে বেঁধে দেন৷ আর সাত-দশ দিনের মধ্যে এই কাটা নাড়ির অংশটা আস্তে আস্তে কালো হয়ে শুকিয়ে নাভি থেকে খসে পড়ে যায়৷ মনে রাখবেন নাভিতে লাল-নীল ঔষধ লাগালে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়৷
যৌনাঙ্গ : সারা শরীরের তুলনায় নবজাতকের যৌনাঙ্গ একটু বড়ই থাকে৷ সেটা স্বাভাবিক৷
কন্যা নবজাতক : অনেক সময় নবজাতক কন্যা সন্তানের যৌনাঙ্গ দিয়ে সাদাটে এক ধরনের তরল পদার্থ বের হয়৷ অনেক সময় আবার ওতে রক্তের ছিঁটেও থাকতে পারে৷ ভয় নাই এটা মায়ের শরীর হতে ইস্ট্রোজেন হরমোন গর্ভস্থ অবস্থায় শিশুর শরীরে ঢোকার ফল, কয়েকদিনের মধ্যেই এসব ঠিক হয়ে যাবে৷
ছেলে নবজাতক : অনেক সময় অন্ডকোষের থলি (স্ক্রোটাম) একটু বেশি ফোলা থাকে৷ এটা হয়তো জণ্মের সময় ব্যথা লাগার বা ক্ষনস্থায়ী পানি জমার ফল৷ এর কোনও চিকিত্সার দরকার হয় না৷
শিশুর কিছু সাধারণ রোগের নাম নিচে দেওয়া হলো-
১. প্রতিষেধক টিকা কেন দিবেন
২. নবজাতকের যত্ন
৩. শিশুর আদর্শ খাদ্য
৪. মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু
৫. শিশুর জ্বর
৬. শিশুর নিউমোনিয়া
৭. শিশুদের হৃদরোগ
৮. অপুষ্টিজনিত রোগ
ঌ. ধনুষ্টংকার
১০. পোলিও
১১. ডিপথেরিয়া
১২. শিশুর হাম
১৩. হুপিংকাশি