Author Topic: চোখ যখন কম্পিউটারের পর্দায়  (Read 3737 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
কম্পিউটার মনিটর এমন যন্ত্রপাতিতে নিয়মিত ও অনেকক্ষণ ধরে কাজ করলে চোখের নানা সমস্যা ও উপসর্গ দেখা দিতে পারে—এ অবস্থাকে বলা হয় কম্পিউটার ভিশন সিনড্রম।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সারা বিশ্বে যাঁরা প্রতিদিন কম্পিউটারে কাজ করে থাকেন, তাঁদের ৮৮ শতাংশ লোকেরই সামান্য থেকে বেশি—নানা মাত্রার চোখের উপসর্গ রয়েছে। সুতরাং কম্পিউটার ভিশন সিনড্রম একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাই হয়ে গেছে।

উপসর্গ
মাথাব্যথা, চোখে ব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া করা, চোখের ক্লান্তি বোধ করা, ঝাপসা দেখা বা মাঝেমধ্যে দুটি দেখা, ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যথা

কারণ
কম্পিউটার অক্ষরগুলো ছাপার অক্ষরের মতো নয়। ছাপার অক্ষরগুলোর মধ্যভাগ এবং পার্শ্বের ঘনত্ব একই রকম—এগুলো দেখার জন্য সহজেই চোখের ফোকাস করা যায়, অন্যদিকে মনিটরের অক্ষরগুলোর মধ্যভাগ ভালো দেখা যায় কিন্তু পার্শ্বভাগের ঘনত্ব কম হওয়ায় পরিষ্কার ফোকাসে আসে না। মনিটরের অক্ষরগুলোর এই ফোকাসের অসমতার জন্য চোখের নিকটে দেখার যে প্রক্রিয়া বা অ্যাকোডোমেশন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এভাবে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করলে চোখের নানা উপসর্গ দেখা দেয়।

কম্পিউটারের চশমা
সাধারণ লেখাপড়ার সময় ১৪ থেকে ১৬ ইঞ্চি দূরে পড়ার জন্য যে পাওয়ারের চশমা লাগে, কম্পিউটারে কাজ করার সময় ১৮ থেকে ২৮ ইঞ্চি দূরে মনিটর রেখে সে পাওয়ার দিয়ে ভালো দেখা যায় না। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা কম্পিউটারে কাজ করার জন্য বিশেষ পাওয়ারের চশমা দিয়ে থাকেন, যার নাম কম্পিউটার চশমা। ৩৫ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের ইউনিফোকাল বা শুধু একটি পাওয়ারের চশমা দিলেই চলে কিন্তু পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য কোনো কোনো সময় ওই ইউনিফোকাল চশমা দিয়ে তুলনামূলক কাছে কপি পড়তে অসুবিধা হতে পারে—তাঁদের জন্য মাল্টি ফোকাল চশমা দিলে কপি পড়া এবং মনিটরে কাজ করার সুবিধা হয়।

মুক্তি পাওয়ার নয়টি উপায়
চোখ পরীক্ষা: কম্পিউটারে কাজ করার আগে চক্ষু পরীক্ষা করে, চোখের কোনো পাওয়ার থাকলে অবশ্যই চশমা ব্যবহার করতে হবে। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কম্পিউটার আই গ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
সঠিক আলোর ব্যবহার: ঘরের ভেতর বা বাইরে থেকে আসা অতিরিক্ত আলো চোখের ব্যথার কারণ হতে পারে। বাইরে থেকে আলো এসে চোখে না লাগে বা কম্পিউটার পর্দায় না পড়ে সে জন্য পর্দা, ব্লাইন্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের আলো—টিউবলাইট বা ফ্লোরেসেন্ট বাল্বের আলো হলে এবং স্বাভাবিক অফিসের আলোর চেয়ে কিছুটা কম হলে চোখের জন্য আরামদায়ক।
গ্লেয়ার কমানো: কম্পিউটার মনিটরের আন্টি গ্লেয়ার স্ক্রিন ব্যবহার করে এবং চশমায় অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ প্লাস্টিকের কাচ ব্যবহার করলে গ্লেয়ার কমানো যায়।
মনিটরের ‘ব্রাইটনেস’ সমন্বয়: ঘরের আলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে কম্পিউটার মনিটরের আলো কমানো বা বাড়ানো, যাতে মনিটরে লেখাগুলো দেখতে আরামদায়ক হয়।
ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন: কম্পিউটারে কাজ করার সময় চোখের পলক পড়া কমে যায়। এর ফলে চোখের পানি কমে যায় ও চক্ষু শুষ্কতা বা ড্রাই আই হতে পারে। এ অবস্থায় চোখ শুষ্ক মনে হবে। কাটা কাটা লাগবে। চোখের অস্বস্তি ও ক্লান্তি আসবে। কম্পিউটারে কাজের সময় ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন। এর পরও সমস্যা থাকলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে চোখের কৃত্রিম পানি ব্যবহার করুন।
চোখের ব্যায়াম: ৩০ মিনিট কম্পিউটারে কাজ করার পর অন্য দিকে দূরে তাকান। সম্ভব হলে ঘরের বাইরে কোথাও দেখুন এবং আবার নিকটে অন্য কিছু দেখুন। এতে চোখের বিভিন্ন ফোকাসিং মাংসপেশির ব্যায়াম হবে। এভাবে কয়েকবার করে আবার কিছুক্ষণ কাজ করুন।
মাঝেমধ্যে কাজের বিরতি দিন: কাজের মাঝেমধ্যে কয়েক মিনিটের জন্য বিরতি দিন। এক ঘণ্টা কম্পিউটারে কাজ করে ৫-১০ মিনিটের বিরতি দিয়ে অন্য কোনো দিকে দেখুন বা অন্য কোনো কাজে সময় কাটিয়ে আবার কম্পিউটারের কাজ শুরু করতে পারেন। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই ঘণ্টা একটানা কম্পিউটারে কাজ করে ১০-২০ মিনিটের বিরতি দিলেও একই রকম ফল পাওয়া যায়।
কাজের জায়গার কিছু পরিবর্তন: কম্পিউটারে কাজ করার চেয়ারটি হাইড্রোলিক হলে ভালো হয়, যাতে কাজের সময় চোখের উচ্চতা কম্পিউটার মনিটরের চেয়ে সামান্য উঁচুতে থাকে। মনিটর চোখের বরাবর থাকতে হবে। মনিটর বাঁকা থাকলে অক্ষরগুলোর পরিবর্তন হতে পারে, যা চোখের ব্যথার কারণ হতে পারে। অনেক সময় টাইপ করার কপিটি এখানে সেখানে রেখে বারবার মনিটর থেকে অনেকখানি দূরে কপি দেখতে হয়। এতেও মাথাব্যথা ও চোখে ব্যথা হতে পারে। মনিটরের পাশেই পরিমিত আলো ফেলে কপি স্ট্যান্ডে লেখাগুলো রাখা যেতে পারে। তাতে বারবার চোখের অ্যাকোমোডেশনের পরিবর্তন কম হবে ও কাজ আরামদায়ক হবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে ব্যায়াম করা: কম্পিউটারে কাজের সময় শুধু চোখের বা মাথার ব্যথা হয় না, অনেকেরই ঘাড়ে ব্যথা, কাঁধে ব্যথা, কোমরে ব্যথা—এসব উপসর্গ হতে পারে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে যদি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত, পা ও কাঁধের নাড়াচাড়া করা হয় বা ব্যায়াম করা হয়, তাহলে ওপরের উপসর্গসমূহ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

এম নজরুল ইসলাম
অধ্যাপক, চক্ষু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ৩০, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection