Author Topic: অটিস্টিক শিশুদের পরিচর্যা  (Read 3929 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
স্বাবলম্বীতা বিকাশঃ বেঁচে থাকার জন্য যে কাজগুলো করা অবশ্যই দরকার সেগুলো প্রশিক্ষণ দিতে হবে যেমনঃ টয়লেট ও ওয়াশ করা, জামা ও জুতা পরিধান করা, দাঁত ব্রাশ করতে পারা, মাথা আচরাতে পারা, নিজে নিজে খেতে পারা ইত্যাদি। খাওয়ার এবং ঘুমের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে খুব বেশি খেয়ে মুটিয়ে না যায় এবং দিনের বেলা ঘুমিয়ে রাতে নিজে এবং অন্য সকলের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটায়।

সংবেদনশীলতার সমম্বয়ঃ এই ধরনের শিশুদের সংবেদনশীতা অত্যান্ত প্রখর অথবা অপ্রতুল হওয়াতে তাদের সংবেদনশীলতার সমম্বয় না করা হলে কোন কিছু শিখতে কিংবা মনসংযোগ করতে অনেক বিলম্ব হয়। বর্তমানে এ ধরনের শিশুদের প্রশিক্ষণের জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে।

ফিজিও এবং অকুপেশনাল প্রশিক্ষণঃ অনেক অটিষ্টিক শিশুর বিভিন্ন মাংসপেশী, চোখ ও হাতের যথাযথ সমম্বয় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথাযথভাবে পরিপক্কতা ও পরিপূর্ণতার ঘাটতি থাকে। যথাযথ ফিজিওথেরাপি এবং অকুপেশনাল থেরাপি প্রয়োগ করলে এসব ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী ফলাফাল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রশিক্ষণের সাথে সাথে এ বিষয়টিকেও গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কথা ও ভাষা বিকাশঃ অটিষ্টিক শিশুদের কথা ও ভাষা প্রশিক্ষণ অন্যান্যদের চেয়ে বেশ কঠিন কারণ তারা চঞ্চল এবং বেশিক্ষণ মনসংযোগ করতে পারে না। কথা ও ভাষা শিক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবেঃ

- শিশুদের সাথে মুখোমুখি এবং একই উচ্চতায় ও চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে।

-ঠোঁটের নাড়াচাড়া এবং চোখের ও হাতের সঞ্চালন অনুসরণ করতে সাহায্য করতে হবে। যে কোন কার্যক্রম করার সময় শিশুর সাথে কথা বলে কাজটি করতে হবে এবং শিশুকে দিয়ে করাবার চেষ্টা করতে হবে।

-স্বাভাবিকভাবে শিশুটি কোন শব্দ উচ্চারণ করলে তাকে অর্থপূর্ণ শব্দে রূপান্তর করার চেষ্টা করতে হবে।

-শুরুতে অতি দরকারি কিছু সহজ এবং এক সেলেবলযুক্ত শব্দ নির্বাচন করে সেগুলো শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। যেমন মা, বাবা, পানি, ভাত, জামা, জুত, বই, বল ইত্যাদি।

-শেখানো কথাগুলো বার বার এবং প্রতিদিন পুনরাবৃত্তি করতে হবে যাতে কোনভাবেই শিশুটি শিখে ফেলা শব্দগুলো ভুলে যেতে না পারে। সাথে সাথে এক শব্দের সাথে অরেকটি শব্দ যুক্ত করে দুই শব্দের বাক্য শেখানো চেষ্টা করতে হবে। যেমন- পানি খাব, জামা দাও, বই দাও, বল নেব ইত্যাদি।

- শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, ছবির বই, দরকারি জিনিসপত্র ইত্যাদি দেখিয়ে ধীরে ধীরে শেখানোর চেষ্টা করতে হবে।

- কথা বলতে না পারলে তাকে ছবির ভাষা দেয়ার চেষ্টা করতে হবে যেন ছবি দেখিয়ে তার চাহিদা বুঝাতে পারে।

-এরপর ধীরে ধীরে অক্ষর, সংখ্যা, ছড়াগানের ক্যাসেট, ভিডিও ইত্যাদির প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে হবে এবং শেখানোর চেষ্টা করতে হবে।

- যেসব কথাগুলো বলতে পারবে সেগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবে ব্যবহার করতে এবং অভ্যাস করতে হবে।

সামাজিকতা ও আচরণগত বিকাশঃ অটিষ্টিক শিশুদের প্রয়োজনীয় সামাজিক আচরণ শেখাতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব কার্যক্রম করতে হবে তা নিম্নরূপঃ

-সমবয়সী শিশুদের সাথে মিশতে ও ভাবের আদান-প্রদান করতে সহায়তা করতে হবে।

-কখনই একাকী খেলতে দেয়া যাবে না। অন্য কারো সাথে খেলতে দিতে হবে এবং একে অন্যের মাধ্যমে কোন কিছু আদান প্রাদান করা শেখাতে হবে।

- সম্ভাষণ করতে পারা, হাসির জবাবে হাসি, আনন্দ প্রকাশ, করমর্দন সালাম প্রদান, বিদায় সুচক হাত নাড়া, শরীরিক স্পর্শদ্বারা বন্ধুত্ব করতে পারা ইত্যাদি শেখাতে হবে।

-আদান-প্রদানমূলক খেলা যেমন- বল দেয়া-নেয়া, গাড়ি দেয়া-নেয়া ইত্যাদি নিয়ম করে শিশুদের সাথে খেলতে হবে প্রথমে সহজ যেমন লুকোচুরি, টুকি ইত্যাদি থেকে ধীরে ধীরে গঠনমূলক খেলা খেলতে হবে।

-শিশুকে খেলার মাঠে-পার্কে নিয়ে যেতে হবে এবং সহজভাবে চলাফেরা করতে দিতে হবে।

-তত্ত্বাবধানের সাথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অন্যান্যদের সাথে খেলায় সক্রিয় অংশগ্রহনের জন্য অনুপ্রাণিত করতে হবে।

-শিশুটিকে সকল সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে নিয়ে যেতে হবে। এটা ধরো না, ওটা করো না, সারাক্ষণ এই জাতীয় নিয়ন্ত্রন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

-কেউ যেন শিশুটিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে, বিরূপ সমালোচনা না করে এবং কোন কঠিন আচরণ না করে তার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

জরুরী বিষয়গুলো শেখানোর উপায় কি?

প্রথমেই নিশ্চিত হোন আপনার শিশুটি কি কি জিনিস, বিষয়, খাবার, খেলনা ইত্যাদি খুব পছন্দ করে। এগুলো প্রশিক্ষণ সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। প্রশিক্ষণ সহায়ক বিষয়টি (জববহভড়ৎপবৎ)কে শিশুর দৃষ্টিসীমার মধ্যে রেখে তাকে আস্বস্ত করতে হবে যে নির্দেশিত কাজটি করলে তার পছন্দের জিনিসটি দেয়া হবে। এভাবে শিক্ষণীয় কাজটি সে নির্ভুল করে একনাগাড়ে ৩-৫ বার করতে পারলে তার চাহিদা পূরণ করতে হবে এবং তাকে পুরস্কৃত করতে হবে। এছাড়া নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবেঃ

-কোন প্রকার জোর-জবরদস্তি না করে শিশুটি যা করতে পছন্দ করে তা থেকে তাকে সৃজনশীল কিছু শেখাবার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুটির পছন্দ- অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। সে যা দিয়ে খেলছে তাতে যুক্ত হয়ে তাকে শেখানোর চেষ্টা করতে হবে।

-প্রথমে এমন কিছু নির্বাচন করতে হবে যা শিশুটি করতে সক্ষম হয়। সফলতার জন্য তাকে পুরস্কৃত করতে হবে। চুমু দেয়া, আদর করা, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, তার পছন্দের খাবার/খেলনা প্রদান করা ইত্যাদি কে পুরস্কার হিসাবে প্রদান করা যেতে পারে।

-সকল প্রকার জটিলতা পরিহার করে একটির বেশি বিষয় একত্রে শেখানোর চেষ্টা করার দরকার নেই। যেমন যখন আপেল শেখানোর চেষ্টা করা হয় তখন শুধুই আপেল শেখাতে হবে। বল, টমাটো ইত্যাদি তখন দূরে রাখাই ভালো।

-শেখার সময় শিশুটিকে উৎসাহ দিতে হবে এবং তার ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে। হাত তালি, আদর ইত্যাদির মাধ্যমে উৎসাহিত করা সম্ভব।

-শিশুর অযৌক্তিক আচরণ এবং ভুল শিক্ষাকে অনুমোদন করা ঠিক নয়। অভিমান কিংবা তার দিক থেকে মনোযোগ অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে তাকে সেটা বুঝিয়ে দিতে হবে।

-কোন ব্যর্থতার জন্য শিশুটিকে মারধর, বকাঝকা, ভয় দেখানো, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এবং ধৈর্য হারানো যাবে না। তাকে বরং বেশি বেশি স্নেহ-মমতা দিতে হবে।

-অতিরিক্ত চঞ্চলতা, জেদি ও আক্রমণাত্মক আচরণ, নিজেকে আহত করা, ভয় পাওয়া, খিচুনি/মৃগী রোগ ইত্যাদি থাকলে জরুরীভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

-অন্যান্য রোগ-বালাই এর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং কোন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

-দাঁতের যত্ন, কান পরিষ্কার ও ব্যক্তিগত হাইজিন এর প্রতি সতর্ক হতে হবে।

-এছাড়া মনোযোগ দক্ষতা, অনুকরণ দক্ষতা, ভাষা বোঝা এবং নিজেকে প্রকাশ করার দক্ষতার জন্য যেসব অনুশীলন আছে যেমন-মালাগাঁথা, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টিপ পরা, বস্নক দিয়ে পাশাপাশি/বিভিন্ন উচ্চতার খেলা ইত্যাদি নানাবিধ কার্যক্রম এই ধরনের শিশুদের প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কোথায় পাব?

ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্রে এ ধরনের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। যে কোন অভিভাবক আমাদের ০১৭১২৭৬৫৬৫৬, ০১৭১৫০২১২৩৮ এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন। কোন ফি/পারিশ্রমিক ছাড়াই আমরা যতটুকু সম্ভব সাধ্যমত অটিষ্টিক শিশুদের এবং তাদের অভিভাবকদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

————————-
ডাঃ মারুফা আহমেদ
লেঃ কর্ণেল মোঃ তোফায়েল আহমেদ, পিএসসি
দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ এপ্রিল ২০০৮
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection