নবজাতক ও শিশুদের মুখ ও দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। নবজাতকের মুখের সমস্যার কারণে তার মায়েরও সমস্যা হতে পারে।
নবজাতক ও শিশুদের ওরাল থ্রাশ বা ফাংগাল সংক্রমণ সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।
এটি ক্যানডিডা অ্যালবিকানস নামের ইস্ট বা ফাংগাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে।
ওরাল থ্রাশ অনেক সময় গলা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এ ধরনের ওরাল থ্রাশকে ওরোফ্যারিনজিয়াল ক্যান্ডিডিয়াসিস বলা হয়। ওরাল থ্রাশ বা ফাংগাল সংক্রমণ চিবুকের ভেতর, জিহ্বা, তালু, ঠোঁট ও মাড়িতে দেখা যেতে পারে।
ওরাল থ্রাশ হলে তা নবজাতকের কাছ থেকে মায়ের স্তনে ও স্তনবৃন্তে ইস্ট সংক্রমণ হতে পারে। এতে নবজাতককে দুধ পান করানোর সময় মা ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে নবজাতকের চিকিৎসার পাশাপাশি মায়েরও চিকিৎসা নিতে হবে।
শিশুর দুধ খাওয়ানোর বোতল, খেলনাসহ যেসব সামগ্রী তার মুখের সংস্পর্শে আসতে পারে, সেগুলো সব সময় পরিষ্কার রাখুন। এক মাসের কম বয়সী নবজাতকের ওরাল থ্রাশের ক্ষেত্রে সাসপেনশন বা ড্রপ দিনে চারবার দিতে হয়। ৩০ দিন বয়সের বেশি নবজাতকের ক্ষেত্রে সাসপেনশন বা ড্রপ এক মিলিলিটার করে দিনে চারবার সাত থেকে ১০ দিনের জন্য আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করা হয়।
যেসব নবজাতক বেশি বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে এবং দুধ পান করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে, আবার একই সঙ্গে নবজাতকের মা-ও ঘুমিয়ে পড়েন, সে ক্ষেত্রে নবজাতকের দাঁতের ক্ষয় দেখা দিতে পারে।
তাই এ বিষয়ে মায়েদের সচেতন হতে হবে। দুধদাঁত ওঠার সময় শিশু সবকিছুই কামড়াতে চেষ্টা করে, তাই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকাটাই স্বাভাবিক। এ সময় শিশুর মুখের যত্নেও বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে।
নরম টুথ ব্রাশ দিয়ে যত্নের সঙ্গে শিশুর দাঁত ব্রাশ করতে হবে। শিশুদের আঙ্গুল চোষার অভ্যাস প্রায়ই দেখা যায়। এ ধরনের অভ্যাস আপনার শিশুর থাকলে শুরুতেই মোটিভেশন দিয়ে অভ্যাস পরিত্যাগ করানোর চেষ্টা করুন।
তা না হলে ভবিষ্যতে চোয়ালের সমস্যা হওয়া এবং দাঁত উঁচু ও দাঁতের মধ্যে ফাঁক হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের সিফিলিস রোগ থাকলে শিশু জ্নগত সিফিলিসে আক্রান্ত হতে পারে। জ্নগত সিফিলিসে আক্রান্ত শিশুর মুখে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা দিতে হবে।
নবজাতক শিশু ঠোঁটকাটা ও তালুকাটা অবস্থায় জ্ন নিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, এসব জ্নগত ত্রুটির ক্ষেত্রে রিকনস্ট্রাকশন সার্জারির প্রয়োজন হয়।
যথাযথ চিকিৎসা না করালে ভবিষ্যতে শিশুর উচ্চারণ ও কথা বলায় সমস্যা হতে পারে। তালুকাটা শিশুদের স্পিচ থেরাপিও প্রয়োজন হতে পারে।
অস্ত্রপচার না করা পর্যন্ত শিশুর তালুর ওপর প্রসথেটিক ডিভাইস সংযোজনেরও প্রয়োজন হতে পারে।
ঠোঁটকাটা কিছু নবজাতকের ক্ষেত্রে বুকের দুধ খেতে সমস্যা হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের বোতল ব্যবহার করে শিশুকে দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। নবজাতক ও শিশুর দাঁত ও মুখের যত্নে অভিভাবকদের সব সময় সচেতন থাকা দরকার।
ডা· মো· ফারুক হোসেন
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৫, ২০০৮