তানিয়ার (ছদ্মনাম) বয়স ছয় বছর। এখনো হাঁটতে পারে না। কথাও স্পষ্ট বলে না, জড়িয়ে যায়, অর্থাৎ তার সেরিব্রাল পালসি হয়েছে, যাকে প্রতিবন্ধীও বলা যায়। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ডেলিভারির সময় তার মা বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন এবং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কান্নাকাটি করেনি সে; ১০ মিনিট পর কেঁদেছিল। তানিয়া বড় হয়ে উঠেছে কিন্তু বসা শিখেছে আড়াই বছর বয়সে।
বুদ্ধি আছে কিন্তু কথা স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না, জড়িয়ে যায়। সব বোঝে, কিন্তু বলতে পারে না। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে কেবল ফিজিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে চার বছর ধরে। কিন্তু যতটা উন্নতি হওয়ার কথা, ঠিক ততটা হচ্ছে না। ফিজিওথেরাপিস্ট ও তার মা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ফল হচ্ছে না। শেষে শিশু স্মায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নেওয়া হয় তাকে। চিকিৎসক মস্তিষ্কের একটা পরীক্ষা (ইইজি) করে পেলেন যে তার মাথার মধ্যে খিঁচুনি হচ্ছে, যাকে বলে অদৃশ্য বা সাব ক্লিনিক্যাল সিজার। অর্থাৎ খিঁচুনিটা এত বড় নয় যে বাইরে দেখা যাবে। কিন্তু তা মস্তিষ্কের ভেতর হচ্ছে। এই অদৃশ্য খিঁচুনি হওয়ায় এত থেরাপি দেওয়ার পরও তার উন্নতি হচ্ছে না। এবার ফিজিওথেরাপির সঙ্গে তার খিঁচুনির চিকিৎসা শুরু করা হলো। তিন মাসের মধ্যে সে দাঁড়াতে সক্ষম হলো এবং কিছুটা হাঁটতেও পারল। সঙ্গে কথাটাও একটু স্পষ্ট হলো। তিন মাসের পর প্রথম ফলোআপে শিশুর মায়ের হাসিমুখ দেখা গেল।
পরামর্শ
– সেরিব্রাল পালসি হওয়া বা প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রধান চিকিৎসা ফিজিওথেরাপি।
– কিন্তু ঠিকমতো ফিজিওথেরাপি দেওয়ার পরও যদি উন্নতি না হয়, তাহলে কারণ খুঁজতে হবে।
– এ রকম অবস্থার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে অদৃশ্য খিঁচুনি বা সাব ক্লিনিক্যাল সিজার একটা প্রধান কারণ।
সেলিনা ডেইজী
শিশু, শিশু নিউরোলজি ও ক্লিনিক্যাল নিউরোফিজিওলজি বিশেষজ্ঞ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৪, ২০০৯