‘ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি
মোদের বাড়ি এসো
বাটাভরা পান দেব
গালভরে খেয়ো।’
এসব গান মা-মাসির মুখে শুনে শুনে ঘুম গেছে কত শিশুর। আজ তেমন গান শুনে শুনে ঘুম যাওয়া কম শিশুদের ভাগ্যেই জোটে। এসব ঘুমপাড়ানি গানের চল ছিল পৃথিবীতে অনেক দিন থেকে। নানা দেশে এখনো আছে। এই গানগুলোর চিরায়ত আবেদনের কথা কেবল বলি কেন? এদের স্বাস্থ্যহিতকরী গুণের কথাও শোনা যাচ্ছে এখন। আর স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা আবার মা-মাসিদের ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর যে চেষ্টা, এর পক্ষে বেশ যুক্তি খুঁজে পেয়েছেন।
দেখা যাচ্ছে, যেসব শিশু তাদের সমবয়সী সঙ্গীদের চেয়ে কম ঘুমায়, এদের মধ্যে অস্বাভাবিক রক্তের শর্করা মান ও অন্যান্য বিপাকীয় সমস্যা ঘটার ঝুঁকি বেশি। গবেষকেরা ঘুমের নমুনা লক্ষ করেছেন ৩০৮ জন শিশুর মধ্যে, যাদের বয়স ৪-১০ বছর, এদের অর্ধেকের শরীরের ওজন বেশি বা স্থূল।
মনিবন্ধ মনিটার ব্যবহার করে এরা ঘুমের সময় পরিমাপ করেন সাত দিন এবং হূদরোগের ঝুঁকিসূচক যেমন রক্তের গ্লুকোজ, লিপিড, ইনস্যুলিন ও সি রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (সিআরপি) ও রক্তের নমুনায় মেপে দেখেন ল্যাবরেটরিতে।
সম্প্রতি পিডিয়াটিকস নামক মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যেসব শিশু সবচেয়ে কম ঘুমিয়েছে, তাদের মধ্যে স্থূলতা ও রক্তের পরীক্ষায় অস্বাভাবিক ফলাফল, যারা ঠিকমতো ঘুমিয়েছে, তাদের চেয়ে চারগুণ বেশি এবং যারা কর্মদিবসে কম ঘুমিয়ে সপ্তাহান্তে ছুটির দুই দিনে সে ঘুম মোকাবিলার চেষ্টা করে, এদের মধ্যে তিনগুণ বেশি সচরাচর।
গবেষক ডেভিড গোজাল বলেন, স্থূল শিশুরা প্রথমে স্থূল হলো এবং পরে কম ঘুমাতে শুরু করল, এমন সম্ভাবনা কম।
সব শিশু স্থূল বা চিকন, যা-ই হোক, কম ঘুম এবং ঘুমের নমুনার মধ্যে বেশি তারতম্য হলে রক্তের ফলাফল হয় তত বেশি অস্বাভাবিক। গবেষকদের সিদ্ধান্ত, অনিয়মিত ঘুম নিজেই বিপাকীয় সমস্যার একটি বড় ঝুঁকি।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগের অধ্যাপক গোজাল বলেন, ‘আমরা যেকোনো কাজের জন্য ঘুম উৎসর্গ করি প্রথমে। নির্ঘুম হওয়া প্রথম যেন মনে আসে। কিন্তু মা-বাবা হিসেবে আমরা বড় এই সম্পদ ‘ঘুম’কে রক্ষা করার ব্যাপারে যেন মনোযোগী হই। শিশুদের স্বাস্থ্য, তাদের মগজ ও শরীরের স্বাস্থ্য, তাদের সুখ ও ভালো থাকার জন্য ঘুম বড় প্রয়োজন।’
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৩, ২০১১