আইকিউ কী: ‘ইন্টেলিজেন্ট কৌশেনট’কে সংক্ষেপে ‘আইকিউ’ নামে অভিহিত করা হয়। এটি চয়ন করেছেন জার্মান সাইকোলজিস্ট উইলিয়াম স্টার্ন সেই ১৯১২ সালে। কারও বুদ্ধির মাত্রা নিরূপণের জন্য আইকিউ স্কোর নির্ণয় করা হয়। এ জন্য নানা ধরনের মানসম্মত টেস্ট আছে। এর যেকোনো একটি ধরে আইকিউ স্কোর করে নেওয়া হয়। আসলে একটি ফর্মুলার ভিত্তিতেই আইকিউ মাপা হয়।
আইকিউ: ১০০ – মন-বয়স/স্বাভাবিক বয়স
তবে সারা জীবন একই আইকিউ বহাল রেখে একজন জীবন কাটাতে পারবে এর কোনো স্থির নিশ্চয়তা নেই।
২.
শিশুর বুদ্ধি বিকাশে নানা প্রভাব
আইকিউ নির্ধারণে যেসব ফ্যাক্টর ভূমিকা রাখে: সাধারণ বুদ্ধিমত্তা মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব বংশগত পারিবারিক প্রতিবেশ গর্ভাবস্থায় শিশুভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের সুবিধা-অসুবিধা পুষ্টি লিঙ্গ জাতিগোষ্ঠী প্রভৃতি।
৩.
শিশু কীভাবে দক্ষতা অর্জন করে: শিশু যখন কোনো বিষয়ে নৈপুণ্য অর্জন করে, তা নানা ধাপ বেয়ে তবেই অর্জিত হয়। যেমন, কৌতূহল থেকে নতুন কিছু চেনা। নতুন চেনা থেকে নতুন আবিষ্কার। আবিষ্কার করে আনন্দ। আনন্দ পুনঃপুনঃ কর্ম-প্রচেষ্টায় উদ্দীপনা আনে। পুনঃপুনঃ সম্পাদনা নিয়ে আসে দক্ষতা ও পারঙ্গমতা। পারঙ্গমতা নতুন দক্ষতার সূত্রপাত ঘটায়। নতুন দক্ষতা জন্ম দেয় আত্মবিশ্বাসের। আত্মবিশ্বাস নিজেকে পরখ করার, যাচাইয়ের সুবিধা এনে দেয়। নিজের ওপর আস্থা ও নিরাপত্তার ভিত খুঁজে পায়। এ ধরনের নিরাপত্তা, সুরক্ষা আরও সৃজনশীলতা এবং আরও নতুনের খোঁজে উদ্যম আনে। নিজের নতুন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে ওঠে শিশু, বেড়ে ওঠে সে বিকাশের উচ্ছল প্রাণরসে।
৪.
নার্সারি বয়সের শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত না হলে সে এসবে পারদর্শিতা দেখাতে পারে: নিজের নাম বলতে পারে। বলতে পারে পরিবারের সদস্যদের নাম। উচ্চারণে ও ভাবভঙ্গি নিয়ে ছড়া আবৃত্তি করতে সক্ষম। শিশু গানে ও ছড়ার সুরে কণ্ঠ মেলাতে পারে। নিয়মনীতি মেনে খেলাধুলার আনন্দে অংশ নেয়। শরীরের বিভিন্ন অংশের নাম জানাতে পারে। বিভিন্ন ছবির দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে গল্পের কাঠামো গড়ে নেয়। নিজের মতো করে নানা গল্প রচনা করে। প্রকৃতি বর্ণনায় সিদ্ধ; যেমন, ফুল, ফল, পাখি, পশু, গাছপালা চেনে এবং এসব সম্পর্কে বলতে পারে। অঙ্ক করার পূর্বধাপ হিসেবে ছোট-বড়, কম-বেশি—এসব বোঝাতে সক্ষম। ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা গুনতে পারে। সহজ প্রশ্নের উত্তরদানে সমর্থ, তা যদি তার পরিচিত ভুবনের হয়। ছোটখাটো নির্দেশনা মেনে চলতে সমর্থ। নিজে নিজে কাজ করে সৃষ্টিশীলতা প্রদর্শনের চেষ্টা করে। কীভাবে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, তা শিখে যায়।
খেলা শেষে খেলার সরঞ্জাম গুছিয়ে রাখতে সক্ষম। কতগুলো সামাজিক আচার-ব্যবহার শিখে নেয়; যেমন অভ্যর্থনা জানানো, বড়দের সম্মান দেখানো, ধন্যবাদ জ্ঞাপন ইত্যাদি।
রাগ, আনন্দ-বেদনা—এসব ভাবাবেগের অনুভূতিও প্রকাশ করতে পারে শিশু।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক,
শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০১, ২০১০