ধারা-১০ (গ্রাম আদালতের সাক্ষী ইত্যাদিকে সমন করিবার ক্ষমতা)
(১) গ্রাম আদালত যেকোনো ব্যক্তিকে হাজির হওয়ার ও সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অথবা কোনো দলিল দাখিল করিবার বা করাইবার জন্য সমন দিতে পারিবেন;
তবে শর্ত থাকে যেঃ
(ক) ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যপদ্ধতি সংহিতা (১৯০৮ সালের ৫নং আইন)-এর ১৩৩ ধারার (১) উপধারা মোতাবেক যে ব্যক্তিকে স্বয়ং আদালতে ব্যক্তিগতভাবে হাজিরা হইতে অব্যাহতি প্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকেই সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া যাইবে না ।
(খ) গ্রাম-আদালত যদি মনে করেন যে পরিস্থিতি এমন যে সেই পরিস্থিতিতেই অহেতুক বিলম্ব, খরচ বা অসুবিধা ব্যতীত কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা সম্ভব নহে তবে আদালত সেই সাক্ষীকে সমন দিতে বা সেই সাক্ষীর বিরুদ্ধে প্রদত্ত সমন কার্যকর করিতে অস্বীকার করিতে পারেন;
(গ) গ্রাম-আদালতের এখতিয়ার বহির্ভুত এলাকায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তির ভ্রমণ ও অন্যান্য খরচ নির্বাহ বাবদ আদালতের বিবেচনামতে পর্যাপ্ত অর্থ তাহাকে প্রদানের জন্য আদালতে জমা না দেওয়া হইলে, গ্রাম-আদালত ঐ ব্যক্তিকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অথবা কোনো দলিল দাখিল করিবার বা করাইবার জন্য নির্দেশ দিবেন না ।
(ঘ) গ্রাম আদালতের রাষ্ট্রীয় বিষয়াবলী সম্পর্কিত কোনো গোপনীয় দলিল বা অপ্রকাশিত সরকারী রেকর্ড দাখিল করিবার জন্য কোনো ব্যক্তিকে নির্দেশ দিবেন না, অথবা অনুরূপ গোপনীয় দলিল বা অপ্রকাশিত সরকারী রেকর্ড হইতে আহরিত কোনো সাক্ষ্য প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান কর্মকর্তার অনুমতি প্রদান করিতে বা স্থগিত রাখিতে পারেন, তাহার অনুমতি ব্যতীত গ্রাম আদালত কোনো ব্যক্তিকে অনুমতি প্রদান করিবেন না ।
(২) যে ব্যক্তিকে গ্রাম-আদালত উক্ত আদালতে হাজির হইতে এবং সাক্ষ্য দিতে অথবা কোনো দলিল দাখিল করিবার জন্য সমন দিয়াছেন, তিনি যদি অনুরূপ সমন ইচ্ছাপূর্বক অমান্য করেন তাহা গ্রাম আদালত অনুরূপ অবাধ্যতা আদালত গ্রাহ্য অপরাধ বলিয়া গণ করিতে পারেন এবং বক্তব্য পেশের সুযোগ দেওয়ারপর ঐ ব্যক্তিকে অনধিক দুইশত পঞ্চাশ টাকা জরিমানা করিতে পারেন ।
ধারা-১১ (গ্রাম আদালতের অবমাননা)
কোনো ব্যক্তি আইনসঙ্গত অজুহাত ব্যতীত যদি-
(ক) গ্রাম-আদালত বা উহার কোনো সদস্যকে আদালতের কার্য চলাকালে কোনো প্রকার অপমান করেন, অথবা
(খ) গ্রাম-আদালতের কার্যে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করেন, অথবা
(গ) গ্রাম-আদালতের আদেশ সত্ত্বেও কোনো দলিল দাখিল বা অর্পণ করিতে ব্যর্থ হন, অথবা
(ঘ) গ্রাম-আদালতের যে প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি বাধ্য সেইরূপ কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন, অথবা
(ঙ) সত্য কথা বলিবে বলিয়া শপথ গ্রহণ করিতে বা গ্রাম-আদালতের নির্দেশ মোতাবেক তাহার প্রদত্ত জবানবন্দিতে স্বাক্ষর করিতে অস্বীকার করেন, তাহা হইলে তিনি গ্রাম-আদালত অবমাননার দায়ে অপরাধী হইবেন এবং আদালতের নিকট কোনো অভিযোগ পেশ করা না হইলেও আদালত অনুরূপ অবমাননার অপরাধে অবিলম্বে উক্ত ব্যক্তির বিচার করিবেন এবং তাহাকে অনধিক পাঁচশত টাকা জরিমানা করিতে পারিবেন ।
ধারা-১২ (জরিমানা আদায়)
উপধারা-(১) যেক্ষেত্রে কোনো গ্রাম-আদালত ১০ ও ১১ ধারা মোতাবেক জরিমানা ধার্য করেন কিন্তু জরিমানা অবিলম্বে পরিশোধ করা না হয় সেইক্ষেত্রে আদালত ধার্যকৃত জরিমানার পরিমাণ এবং উহা যে পরিশোধ করা হয় নাই, এই তথ্য উল্লেখ করিয়া একটি আদেশ লিপিবদ্ধ করিবেন এবং তাহা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে প্রেরণ করিবেন যে, উক্ত জরিমানাকে তত্কতৃর্ক ধাযর্কৃত খাজনা মনে করিয়া ১৯৭৬ সালের স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশের (১৯৭৬ সালের ৯০নং আইন) অধীনে কোনো ইউনিয়ন পরিষদ কতৃর্ক ধার্যকৃত খাজনা যেভাবে আদায় করা হয় সেই একইভাবে উহা আদায় করিবার জন্য প্রবৃত্ত হইবেন ।
উপধারা-(২) ১০ ও ১১ ধারা মোতাবেক গ্রাম-আদালতকে প্রদত্ত বা (১) উপধারা মোতাবেক গ্রাম-আদালতের পক্ষে আদায়কৃত সমস্ত জরিমানা ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলের অঙ্গীভূত হইবে ।
ধারা-১৩ (কার্যপদ্ধতি)
উপধারা-(১) এই অধ্যাদেশের দ্বারা বা ইহার অধীন অন্য প্রকার স্পষ্ট বিধান করা না হইলে, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন, (১৮৭২ সালের ১নং আইন), ১৮৯৮ সালের ফৌজদার কার্যপদ্ধতি সংহিতা (১৮৯৮ সালের ৫নং আইন)-এর বিধানাবলী কোনো গ্রাম-আদালতে আনীত মামলায় প্রযোজ্য হইবে না ।
উপধারা-(২) ১৮৭৩ সালের শপথ গ্রহণ আইন (১৮৭৩ সালের ১০নং আইন)-এর ৮ হইতে ১১ ধারা গ্রাম-আদালতে আনীত সকল মোকদ্দমায় প্রযোজ্য হইবে ।
উপধারা-(৩) এই অধ্যাদেশের অধীন বিচারযোগ্য কোনো অপরাধের দায়ে কোনো সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করিবার জন্য, তাহার নিয়োগদানকারী কতৃর্পক্ষের পূর্ব অনুমোদন প্রয়োজন হইবে, যদি উক্ত সরকারী কর্মচারী এই মর্মে কোনো অজুহাত খাড়া করেন যে, যে অপরাধ তিনি করিয়াছেন বলিয়া অভিযোগ করা হইয়াছে তাহা তাহার সরকারী কর্তব্য পালন করিতে গিয়া বা অনুরূপ বিবেচনায় সংঘটিত হইয়াছে ।
ধারা-১৪ (উকিলের মাধ্যমে হাজিরা নিষিদ্ধ)
উপধারা-(১) ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ আইনজীবী পরিষদ আদেশে (১৯৭২ সালের পি.ও.নং ৪৬) যাহা বলা হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও গ্রাম-আদালতের নিকট বিবাদের কোনো পক্ষের সমর্থণে ওকালতি করিতে কোনো আইনজীবীকে অনুমতি দেওয়া হইবে না ।
উপধারা-(২) এই অধ্যাদেশ মোতাবেক যে ব্যক্তিকে গ্রাম-আদালতের নিকট হাজির হইতে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে তিনি যদি পর্দানশীল মহিলা হন তাহা হইলে উক্ত আদালত তাহার যথাযথ ক্ষমতা প্রদত্ত এজেন্টকে তাহার প্রতিনিধত্ব করিবার জন্য অনুমতি দিতে পারিবেন, তবে উক্ত এজেন্ট কোনো ক্রমেই অর্থের বিনিময়ে নিযুক্ত এজেন্ট হইবে না ।
ধারা-১৫ (কতিপয় মামলার স্থানান্তর)
উপধারা-(১) যেক্ষেত্রে থানা ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন যে, তফসিলের প্রথম ভাগের অন্তর্ভুক্ত কোনো বিষয় সম্পর্কিত এবং গ্রাম- আদালতের নিকট বিচারাধীন কোনো মামলার পরিস্থিতি এইরূপ যে জনস্বার্থের খাতিরে ও ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে কোনো ফৌজদারী আদালতে উহার বিচার হওয়া উচিত সেইক্ষেত্রে এই অধ্যাদেশে যাহা বলা হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও তিনি গ্রাম-আদালত হইতে উক্ত মামলা প্রত্যাহার করিতে এবং বিচার ও মীমাংসার জন্য উহা ফৌজদারী আদালতে প্রেরণের নির্দেশ দিতে পারিবেন ।
উপধারা-(২) কোনো গ্রাম আদালত যদি মনে করেন যে, উপরোক্ত কোনো বিষয় সম্পর্কিত এবং গ্রাম-আদালতের নিকট বিচারাধীন কোনো মামলার ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে অপরাধীর শাস্তি হওয়া উচিত । তাহা হইলে উক্ত আদালত মামলাটির বিচার ও মীমাংসা করিবার জন্য ফৌজদারী আদালতে প্রেরণের নির্দেশ দিতে পারিবেন ।
ধারা-১৬ (পুলিশের তদন্ত)
আদালত গ্রাহ্য কোনো তদন্ত করা হইতে, উক্ত মামলা তফসিলের প্রথম ভাগে বর্ণিত কোনো অপরাধ সম্পর্কিত হওয়ার কারণেই কেবল এই অধ্যাদেশের কোনো কিছু পুলিশকে নিবৃত্ত করিবে না । তবে, যদি কোনো ফৌজদারী আদালতে অনুরূপ কোনো মামলা আনীত হয় তাহা হইলে উক্ত আদালত উপযুক্ত মনে করিলে মামলাটি এই অধ্যাদেশ মোতাবেক গঠিত কোনো গ্রাম-আদালতে প্রেরণের নির্দেশ দিতে পারিবেন ।
ধারা-১৭ (বিচারাধীন মামলাসমূহ)
এই অধ্যাদেশ মোতাবেক বিচারযোগ্য যেই সমস্ত মামলা এই অধ্যাদেশ বলবত্ হইবার অব্যবহিত পূর্বে কোনো দেওয়ানী অথবা ফৌজদারী আদালতের বিচারাধীন রহিয়াছে, উহাদের উপর এই অধ্যাদেশ প্রযোজ্য হইবে না এবং অনুরূপ মামলা আদালত কতৃর্ক এইরূপে মীমাংসা করা হইবে যেন এই অধ্যাদেশ জারি করা হয় নাই ।
ধারা-১৮(রেহাই দেওয়ার ক্ষমতা) সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার কোনো এলাকা বা এলাকাসমূহ, অথবা কোনো মামলা বা কোনো কোনো শ্রেণীর মামলা অথবা কোনো সম্প্রদায়কে এই অধ্যাদেশের সকল অথবা যেকোনো বিধানের সক্রিয় আওতা হইতে রেহাই দিতে পারিবেন ।
ধারা-১৯ (বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা)
সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার এই অধ্যাদেশের বিধানাবলী কার্যকর করিবার উদ্দেশ্যে বিধিমালা প্রণয়ন করিতে পারিবেন ।
ধারা-২০ (বিলোপ)
১৯৬১ সালের সালিশি আদালত অধ্যাদেশ (১৯৬১ সালের ৪৪নং অধ্যাদেশ) এত দ্বারা বিলুপ্ত হইল ।
তফসিল
প্রথম খন্ড
ফৌজদারী মামলাসমূহ
(১) দণ্ডবিধি (১৮৬০ সনের ৪৫নং আইনের) ১৪১ ধারার তৃতীয় ও চতুর্থ তফসিলসহ গঠিত বিধির ১৪৩ ও ১৪৭ ধারা, যখন বেআইনী সমাবেশের অভিন্ন উদ্দেশ্য হইতেছে দণ্ডবিধির ৩২৩ বা ৪২৬ বা ৪৪৭ ধারার অপরাধ সংগঠন করা এবং বেআইনী সমাবেশে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দশজনের অধিক নহে ।
(২) দণ্ডবিধির ১৬০, ৩২৩, ৩৩৪, ৩৪১, ৩৪২, ৩৫২, ৩৫৮, ৪২৬, ৪৪৭, ৫০৪, ৫০৬ (প্রথম ভাগ) ৫০৮, ৫০৯ ও ৫১০ ধারা ।
(৩) দণ্ডবিধির (১৮৬০ সনের ৪৫নং আইন) ৩৭৯, ৩৮০ ও ৩৮১ ধারা যেক্ষেত্রে গবাদিপশু সংক্রান্ত অপরাধ সংগঠিত হয় ।
(৪) দণ্ডবিধির (১৮৬০ সনের ৪৫নং আইন) ৩৭৯ ধারা যেক্ষেত্রে গবাদিপশু ব্যতীত অন্য কোনো সম্পত্তি অপরাধ সংগঠিত হয় যে সম্পত্তির মূল্য ৫০০০ টাকার অধিক নহে ।
(৪-ক) দণ্ডবিধির (১৮৬০ সনের ৪৫নং আইন) ৩৮০ ও ৩৮১ ধারা, যেক্ষেত্রে গবাদি পশু ব্যতীত অন্য কোনো সম্পত্তি সম্পর্কে অপরাধ সংগঠিত হয়, যে সম্পত্তির মূল্য ৫০০০ টাকার অধিক নহে ।
(৫) দণ্ডবিধির ৪০৩, ৪০৬, ৪১৭ ও ৪২০ ধারা, যখন অপরাধ সংশ্লিষ্ট অর্থের পরিমাণ ৫,০০০ টাকার অধিক নহে ।
(৬) দণ্ডবিধির ৪২৭ ধারা, যখন সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্য ৫০০০ টাকার অধিক নহে ।
(৭) দণ্ডবিধির ৪২৮ ও ৪২৯ ধারা যখন সংশ্লিষ্ট পশুর মূল্য ৫০০০ টাকার অধিক নহে ।
(৮) ১৯৭১ সনের গবাদিপশুর অনধিকার প্রবেশ আইনের (১৮৭১ সনের ১নং আইন) ২৪, ২৬ ও ২৭ ধারা ।
(৯) উপরোক্ত অপরাধসমূহের যেকোনো একটি সংগঠনের চেষ্টা করা অথবা সংগঠনের সহায়তা বা প্ররোচনা দান করা ।
দ্বিতীয় খণ্ড
দেওয়ানী মামলাসমূহ
(১) কোনো চুক্তি বা অন্য কোনো দলিল মূলে প্রাপ্য টাকা আদায়ের জন্য মামলা ।
(২) কোনো অস্থাবর সম্পত্তি বা উহার মূল্য আদায়ের জন্য মামলা ।
(৩) কোনো স্থাবর সম্পত্তি বে-দখল হওয়ার এক বত্সরের মধ্যে উহার দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা ।
(৪) কোনো অস্থাবর সম্পত্তি বেআইনীভাবে লওয়া বা বিনষ্ট করার দরুন ক্ষতিপূরণের মামলা ।
(৫) গবাদিপশুর অনধিকার প্রবেশের দরুন ক্ষতিপূরণের মামলা ।
যখন দাবিকৃত অর্থ, অথবা অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য অথবা সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ৫০০০ টাকার অধিক নহে ।