দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭
[১৯৪৭ সনের ২নং আইন]
(১১ই মার্চ, ১৯৪৭)
------------------------------------------------------------------
অধিকতর কার্যকরভাবে উত্কচ ও দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য প্রণীত আইন । যেহতু অধিকতর কার্যকরভাবে উত্কচ তথা ঘুষ ও দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন; সেহেতু ইহা নিম্নরূপভাবে বিধিবদ্ধ করা যাইতেছেঃ
ধারা-১ (সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও ব্যাপ্তিঃ)
(১) এই আইন দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ নামে অভিহিত হইবে ।
(২) ইহার ব্যাপ্তি বাংলাদেশের সর্বত্র এবং ইহা বাংলাদেশের সকল নাগরিক ও প্রজাতন্ত্রের চাকুরীতে নিয়োজিত সকল ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হইবে৷
(৩) [দুর্নীতি প্রতিরোধ (সংশোধনী) আইন, ১৯৫০ (১৯৫০ সনের ৯নং আইন) দ্বারা এই উপধারা বাতিল করা হইয়াছে ।]
ধারা-২ (ব্যাখ্যাঃ)
এই আইনের উদ্দেশ্যে ''সরকারী কর্মচারী'' বলিতে দণ্ডবিধির ২১ ধারায় সংজ্ঞায়িত একজন সরকারী কর্মচারীকে বুঝাইবে এবং কর্পোরেশন বা সরকার কতৃর্ক প্রতিষ্ঠিত অন্য কোনো অঙ্গ বা সংস্থারর্র্মচারী এবং স্থানীয় কতৃর্পক্ষের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সদস্য,কর্মকর্তা ও কর্মচারী অথবা আইন কতৃর্ক গঠিত বা প্রতিষ্ঠিত যেকোনো কর্পোরেশন অথবা অন্য কোনো অঙ্গ বা সংস্থার চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ট্রাস্টি, সদস্য কর্র্র্মকর্তা অথবা কর্মচারী ইহার অন্তর্ভৃক্ত হইবে ।
ধারা- ৩ (দণ্ডবিধির ১৬১ ও ১৬৫ ধারার অপরাধসমূহ আমলযোগ্য অপরাধ হইবেঃ)
দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬২, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫ বা ১৬৫-ক ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ ১৮৯৮ সনের ফৌজদারী কার্যবিধি এর উদ্দেশ্যে একটি আমলযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে, যদিও তথায় বিপরীত যাহা কিছুই থাকুক না কেন ।
ধারা-৪( সরকারী কর্মচারী কর্তৃক বৈধ পারিশ্রমিক ব্যতীত বকশিস গ্রহণের ক্ষেত্রে অনুমানঃ)
(১) দণ্ডবিধির ১৬১ এবং ১৬৫ ধারার শাস্তিযোগ্য আপরাধের বিচারকালে যদি ইহা প্রমাণিত হয় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের জন্য অথবা অপর কোনো ব্যক্তির জন্য বৈধ পারিশ্রমিক ব্যতীত কোনো বকশিস অথবা কোনো মূল্যবান দ্রব্য কোনো ব্যক্তির নিকট হইতে গ্রহণ করিয়াছে অথবা প্রাপ্ত হইয়াছে অথবা গ্রহণ করার জন্য সম্মত হইয়াছে অথবা পাওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে, তবে বিপরীত প্রমাণিত না হইলে ইহা অনুমান করা হইবে যে, সে উক্ত বকশিস বা মূল্যবান দ্রব্য ১৬১ ধারায় বণি॔ত অভিপ্রায় বা পুরস্কার হিসাবে গ্রহণ করিয়াছে অথবা প্রাপ্ত হইয়াছে অথবা গ্রহণ করিবার জন্য সম্মত হইয়াছে অথবা উহা পাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে মূল্য ব্যতীত বা এমন মূল্যে যাহা যে অপর্যাপ্ত বলিয়া জানে ।
(২) দণ্ডবিধির ১৬৫-ক ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধের বিচারকালে যদি ইহা প্রমাণিত হয় যে, কোন আসামী কর্তৃক কোন বকশিস (বৈধ পারিশ্রমিক ব্যতীত) অথবা কোন মূল্যবান জিনিস দেওয়া হইয়াছে অথবা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হইয়াছে অথবা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হইয়াছে, তবে বিপরীত প্রমাণিত না হইলে ইহা অনুমান করা হইবে যে, সে উক্ত বকশিস বা মূল্যবান জিনিস দিয়াছিল অথবা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়াছিল অথবা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছিল৷ দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় বর্ণিত অভিপ্রায় বলে গণ্য হইবে যা পুরস্কার হিসাবে মূল্য ব্যতীত অথবা এমন মূল্যে যাহা অপর্যাপ্ত বলিয়া সে জানিত ।
(৩) উপধারা (১) এবং (২)-এ যাহাই থাকুক না কেন, আদালত উক্ত উপধারায় বর্ণিত অনুমান করিতে অস্বীকার করিতে পারেন । যখন আদালত মনে করেন যে, উপরে বর্ণিত বকশিস বা জিনিস এতই তুচ্ছ যে, কোন দুর্নীতির ধারণা স্বচ্ছভাবে গ্রহণ করা যায় না ।
ধারা-৫ ( অপরাধমূলক অসদাচরণঃ)
(১) একজন সরকারী কর্মচারী অপরাধমূলক অসদাচরণের অপরাধ করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবেঃ
(ক) যদি সে নিজের জন্য অথবা কোনো ব্যক্তির জন্য দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় বর্ণিত অভিপ্রায় বা পুরস্কার হিসাবে বৈধ পারিশ্রমিক ব্যতীত গ্রহণ করে অথবা পায় অথবা গ্রহণ করার জন্য সম্মত হয় অথবা পাওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে; অথবা
(খ) যদি সে নিজের জন্য অথবা অন্য কোনো ব্যক্তির জন্য বিনামূল্যে বা এইরূপ মূল্যে যাহা সে অপর্যাপ্ত বলিয়া জানে কোনো মূল্যবান বস্তু এমন কোনো ব্যক্তির নিকট হইতে গ্রহণ বা অর্জন করে অথবা গ্রহণ করিতে সম্মত হয় অথবা অর্জন করিতে উদ্যোগ গ্রহণ করে যে ব্যক্তি তাহার কতৃর্ক পরিচালিত বা পরিচালিত হইবার সম্ভাবনাপূর্ণ যেকোনো মোকদ্দমাপূর্ণ যেকোনো মোকদ্দমা বা কর্মকাণ্ডে জড়িত রহিয়াছে বা হইবে বা হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে অথবা তাহার স্বীয় অথবা তাহার কোন উদ্ধর্ততন সরকারী কর্মচারীর কোন সরকারী কর্তব্যের সহিত সংশ্লিষ্ট বলিয়া সে জানে অথবা এইরূপ কোনো ব্যক্তির নিকট হইতে যাহার অনুরূপ জড়িত ব্যক্তির স্বার্থ রহিয়াছে বা তাহার সহিত সম্পর্ক রহিয়াছে বলিয়া সে জানে; অথবা
(গ) যদি সে সরকারী কর্মচারী হিসাবে তাহার নিকট বিশ্বাসের সহিত অর্পিত কোনো সম্পত্তি অথবা তাহার নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো সম্পত্তি অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাত্ করে বা অন্যভাবে নিজের ব্যবহারের জন্য পরিবর্তিত করে অথবা অপর কোনো ব্যক্তিকে অনুরূপ করিতে অনুমতি দেয়; অথবা
(ঘ) যদি সে নিজের জন্য অথবা অন্য কোনো ব্যক্তির জন্য অসত্ বা অবৈধ উপায়ে অথবা সরকারী কর্মচারী হিসাবে অন্যভাবে তাহার ক্ষমতার অপব্যহার করিয়া কোনো ব্যক্তির নিকট হইতে কোনো মূল্যবান জিনিস বা আর্থিক সুবিধা অর্জন করে অথবা অর্জন করিতে উদ্যোগ গ্রহণ করে; অথবা
(ঙ) যদি তাহার অথবা তাহার যেকোনো পোষ্যের দখলে জ্ঞাত আয়ের সহিত সংগতিহীন এমন কোনো আর্থিক সম্পদ বা সম্পত্তি থাকে যাহার ব্যাপারে সে সরকারী কর্মচারী হিসাবে যুক্তিসঙ্গত জবাবদিহি করিতে না পারে ।
ব্যাখ্যাঃ এই অনুচ্ছেদে সরকারী কমর্চারীর ''পোষ্য'' বলিতে তাহার সহিত বসবাসরত এবং সম্পূর্ণ নির্ভরশীল স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, সত্ ছেলেমেয়ে, পিতামাতা, ভগ্নি এবং নাবালক ভাইবোনকে বুঝাইবে ।
(২) কোনো সরকারী কর্মচারী যদি অপরাধমূলক অসদাচরণ সংঘটিত করে অথবা উদ্যোগ গ্রহণ করে তবে সর্বোচ্চ সাত বত্সরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে, [এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ সংক্রান্ত আথির্ক সম্পদ বা সম্পত্তি রাষ্ট্রের নিকট বাজেয়াপ্ত করা যাইতে পারে৷] এই অংশটুকু দূর্নীতি প্রতিরোধ (সংশোধন) আইন, ১৯৯২ দ্বারা সংযোজিত ।
(৩) উপধারা (২)-এর অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধের বিচারকালে ইহা প্রমাণ করা যাইতে পারে যে, আসামী অথবা তাহার পক্ষে অপর কোনো ব্যক্তির দখলে তাহার জ্ঞাত আয়ের সহিত সংগতিহীন এমন কোনো আর্থিক সম্পদ বা সম্পত্তি রহিয়াছে যাহার ব্যাপারে যে সন্তোষজনক জবাবদিহি করিতে পারে না এবং অনুরূপ প্রমাণের পর বিপরীত প্রমাণিত না হইলে আদালত অবশ্যই অনুমান করিবেন যে, আসামী অপরাধমূলক অসদাচরণের অপরাধে দোষী এবং তজ্জন্য তাহার দণ্ডাদেশ শুধুমাত্র এই কারণেই অসিদ্ধ হইবে না যে ইহা (দণ্ডাদেশ) সম্পূণর্ভাবে উক্ত অনুমানের উপর ভিত্তি করিয়া প্রদত্ত হইয়াছে ।
(৪) এই ধারায় বিধানাবলী প্রচলিত অন্য কোনো আইনকে খর্ব করিবে না, বরং অতিরিক্ত হিসাবে বিবেচিত হইবে এবং এই ধারায় বর্ণিত কোনো কিছু এই ধারা ব্যতীতও অন্য আইন মোতাবেক দায়ের হইতে পারে এমন কোনো মোকদ্দমা হইতে কোনো সরকারী কর্মচারীকে অব্যাহতি দিবে না ।
ধারা-৫-ক : ১৮৯৮ সনের ফৌজদারী কার্যবিধি আইনে যাহাই বলা থাকুক না কেন, পুলিশের পরিদর্শকের চেয়ে নিম্ন পদমর্যাদার কোনো পুলিশ অফিসার ৩ ধারায় উল্লেখিত দণ্ডবিধির যেকোনো ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ অথবা ৫ ধারায় উল্লেখিত যোকোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতিরেকে তদন্ত করিতে পারিবেন না বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ব্যতীত গ্রেফতার করিতে পারিবেন না ।
ধারা-৬ [Criminal Law Amendment Act, 1953 (Act xxxvii of 1956) দ্বারা বাতিল হইয়াছে ।]
ধারা-৭: আসামী, উপযুক্ত সাক্ষী হইতে পারিবেঃ
দণ্ডবিধির ১৬১ অথবা ১৬৫ অথবা অত্র আইনের ৫ ধারার (২) উপধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি উপযুক্ত সাক্ষী হইতে পারিবে এবং শপথপূর্বক তাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ্য মিথ্যা প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য দিতে পারিবে ।
তবে শর্ত থাকে যে,
(ক) তাহার নিজের পক্ষ হইতে অনুরোধ ব্যতীত তাহাকে সাক্ষী হিসাবে ডাকা হইবে না;
(খ) তাহার সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যর্থতা প্রসিকিউশন কর্তৃক কোনো মন্তব্যের বিষয়বস্তু হইবে না বা তাহার বিরুদ্ধে অথবা তাহার সহিত একই বিচারে অভিযুক্ত অন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করিবে না ।
(গ) তাহাকে এমন কোনো প্রশ্ন করা যাইবে না এবং তদ্রূপ প্রশ্ন করিলেও উহা উত্তর দিতে তাহাকে বাধ্য করা যাইবে না । যে প্রশ্নের মধ্যে এইরূপ দেখানোর প্রবণতা থাকে যে অভিযুক্ত অপরাধ ব্যতীতও সে অন্য কোনো অপরাধ সংঘটিত করিয়াছে বা অন্য কোনো অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হইয়াছে অথবা সে খারাপ চরিত্রের অধিকারী, যদি না-
(i) যে অপরাধে সে অভিযুক্ত সেই অপরাধে তাহাকে দোষী দেখানোর জন্য অনুরূপ অপরাধ সে সংঘটিত করিয়াছে অথবা দণ্ডপ্রাপ্ত হইয়াছে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য হয়; অথবা
(ii) তাহার নিজের ভাল চরিত্র প্রমাণের উদ্দেশ্যে সে ব্যক্তিগতভাবে অথবা তাহার আইনজীবির মাধ্যমে প্রসিকিউশন পক্ষের কোনো সাক্ষীকে প্রশ্ন করিয়া থাকে অথবা তাহার ভাল চরিত্রের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়া থাকে অথবা আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রকৃতি অথবা আচরণ এইরূপ হয় যাহা প্রসিকিউটর বা প্রসিকিউশন পক্ষের কোনো সাক্ষীর চরিত্রের উপর কটাক্ষ আরোপ করে; অথবা
(iii) একই অপরাধে অভিযুক্ত অন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সে সাক্ষ্য দিয়া থাকে ।