শিশুবয়সে তো বটেই, বড়দের মধ্যেও এটা বেশ প্রকট। বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী ৬০০ মিলিয়ন জনসংখ্যা শ্বাসতন্ত্রের এই অসুবিধায় ভোগে। শিশু অ্যাজমা রোগীর ৪০-৮০ শতাংশে অ্যালার্জিক রাইনাটিস যুক্ত থাকে। অন্যদিকে অ্যালার্জিক রাইনাটিসে আক্রান্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ পরবর্তীকালে অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। এ সমস্যায় পড়ে শিশুর জীবন নানাভাবে বিঘ্নিত হয়। যেমন:
ক্লান্ত ভাব
শিরঃপীড়া
বৃদ্ধি স্তর নেমে যাওয়া
শিশু অন্যান্য অসুখের শিকার হয়—কনজানটিভাইটিস, গলাব্যথা, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, অ্যাকজিমা, কান পাকা অসুখ, গ্ল্যান্ড ফোলা
নিদ্রায় ব্যাঘাত
কথা বলার অসুবিধা
বেড়ে না ওঠা প্রভৃতি।
রোগচিত্র: এটা আইজি-ই পরিবেশিত এক ধরনের প্রদাহ, যা নাসারন্ধ্রের মিউকাস মেমব্রেন অ্যালার্জি সংস্রব পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়।
নাক বন্ধ
সর্দি ঝরা
হাঁচি
নাক চুলকানো
ওপরের যেকোনো দুই উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দুই সপ্তাহেরও বেশি ভোগায়।
পরীক্ষা শেষে এসব লক্ষণ মেলে—
দুই নাসারন্ধ্রের মধ্যবর্তী প্রাচীর বাঁকা—কখনো কখনো বাইরে থেকেও তা বোঝা যায়।
নাকে পলিপ
নাকের সম্মুখভাগের ওপরে সমান্তরাল খাঁজ
শিশু অনবরত হাতের তালু দিয়ে নাক ঘষতে থাকে—তৈরি হয় ডেরিয়ানস লাইন
সারাক্ষণ শিশু নাক-মুখ কুঁচকায় (অ্যালার্জিক ম্যানারিজমস)
চোখের পাতার নিচে নীলচে কালো রঙের ছোপ।
চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনা
নানা মাত্রার অ্যালার্জিক রাইনাটিস নিয়ে শিশু ভোগে—
স্থায়ী: সপ্তাহে চার দিন বা বেশি। এভাবে বছরে চার সপ্তাহ বা বেশিবার।
মাঝেমধ্যে: সপ্তাহে চার দিনের কম। এভাবে বছরে চারবারের কম।
মৃদু মাত্রার: স্বাভাবিক ঘুম ও কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায় না। শিশুর স্কুল কামাই হয় না।
মধ্যম মাত্রার: ঘুম, দৈনন্দিন কাজ, স্কুল কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী।
এ রোগ নির্ণয় মূলত ক্লিনিক্যালি হয়ে থাকে। চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনায় থাকছে—
যেসব কারণে এই অ্যালার্জি, তার উৎস থেকে শিশুর সংস্পর্শ বাতিল করা। যেমন: ধুলোবালি, পোলেন অ্যানিমেল ডেনডার, তেলাপোকা, ঠান্ডা বাতাস, সিগারেটের ধোঁয়া।
দ্বিতীয় জেনারেশনের অ্যান্টিহিসটামিন—সিট্রিজিন, ফেক্সোফিনাডিন
ইনট্রা-ন্যাজেল স্টেরয়েডস—বাডিসোনাইডস, ফ্লুকর্টিসোন প্রোপাইয়োনেটস
অ্যান্টি লিউকেট্রিনস।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৩, ২০১১