Author Topic: ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্যদিবস – জরুরি অবস্থ  (Read 7654 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
প্রতিবছর ৭ এপ্রিল পালিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। দিনটি হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবস। প্রতিবছর সংস্থাটি এমন একটি স্বাস্থ্য ইস্যু বেছে নেয়, যা বিশেষ করে সারা পৃথিবীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয় এ দিবসটি।
এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হলোঃ ‘জীবন বাঁচান। জরুরি অবস্থায় হাসপাতাল যেন থাকে নিরাপদ।’
দেখা যায়, জরুরি পরিস্থিতিতে, দুর্যোগে বা সংকটে, তা প্রাকৃতিক, জৈবিক, প্রযুক্তিগত বা সামাজিক ও যুদ্ধ-সংঘর্ষের জন্যই হোক, এতে স্বাস্থ্যকর্মী, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও হাসপাতাল। এতে বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়, জীবন হয় বিপন্ন। স্বাস্থ্যকর্মী ও হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর প্রভাব পড়ে জনগণের ওপর।
তাই স্বাস্থ্যসেবা যাতে সংকটেও অক্ষুণ্ন থাকে, সে জন্য হাসপাতাল, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান করা গুরুত্বপূর্ণ।
এ বছরের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যের মধ্য দিয়ে যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা হলো দুর্যোগ ও সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যেন স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে। স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রকে তেমন নিরাপদ রাখতে হবে, এর যাতে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করার ক্ষমতা থাকে অক্ষুণ্ন। স্বাস্থ্যসেবা ও সুবিধা বলতে বোঝানো হচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবা দানকারী সব কেন্দ্র ও প্রতিষ্ঠান, নগরের সুসজ্জিত হাসপাতাল থেকে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যাকেন্দ্র, ক্লিনিক ও কমিউনিটি হাসপাতাল। ‘জরুরি অবস্থায়ও হাসপাতাল যেন থাকে নিরাপদ’-এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়টি ‘বিপর্যয়ে ঝুঁকি হ্রাসের জন্য আন্তর্জাতিক কৌশল’ প্রোগ্রামের ২০০৮-০৯ সালের দ্বিবার্ষিক বিশ্ব অভিযানেরও প্রতিপাদ্য। তাই এ প্রতিপাদ্যটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ প্রয়াসে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
নানা ধরনের দুর্যোগে যে ব্যাপক ধ্বংসলীলা সাধিত হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ তা দেখে এসেছে বারবার। ১৯৯৬ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৬ জন প্রাণ হারিয়েছে, যা পৃথিবীতে দুর্যোগে প্রাণ হারানো মোট জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দুর্যোগে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রও ধ্বংস হয়েছে। পৃথিবীজুড়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য হলো এমন পরিবর্তন ঘটানো, যাতে জরুরি পরিস্থিতি ও বিপর্যয়ের পরও স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র থাকে নিরাপদ ও চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম। বিপর্যস্ত ও আহত মানুষের চিকিৎসা হয়, তাদের জীবন বাঁচে, এর নিশ্চয়তা যেন বিধান করা যায়।

কীভাবে
– স্বাস্থ্যকাঠামো ও বর্তমান প্রযুক্তিগুলোর যাতে সংকট মোকাবিলা করার ক্ষমতা থাকে, সে ব্যবস্থা করা।
– জরুরি পরিস্থিতিতেও যাতে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা, যন্ত্রপাতি সরবরাহ থাকে অক্ষুণ্ন, তা নিশ্চিত করা।
– স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের দুর্যোগে প্রস্তুতি ও ঝুঁকি হ্রাস করার ক্ষমতা যাতে অর্জিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এসব কাজে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র বড় হোক, ছোট হোক, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র বা শহরের হাসপাতাল, বিশেষায়িত বড় হাসপাতাল-সবই জরুরি পরিস্থিতিতে থাকে প্রথম কাতারে। প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিপর্যয়-দুটোরই ঝুঁকিতে থাকে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র। স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র এবং যেসব কাঠামো এসব সেবার অবলম্বন, এগুলো এমন শক্তিশালী করতে হবে, যাতে সংকটে আহত মানুষকে প্রয়োজনীয় সেবাসুবিধা দিতে পারে।
প্রশ্ন হলো, কীভাবে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রকে নিরাপদ রাখা যাবে? এর তিনটি দিক রয়েছেঃ কাঠামোগত, কাঠামোগত নয় এমন দিক এবং কাজকর্ম-সংক্রান্ত।
– আধুনিক প্রকৌশল এবং স্থাপত্যজ্ঞান ও নকশা কাঠামোগত সংহতি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য এমন সাশ্রয়ী সমাধান দিয়েছে, যাতে ভূমিকম্প বা ঘূর্ণিঝড়ে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের ক্ষতি না হয়। ফলে কম খরচে শক্ত দালান নির্মাণ সম্ভব।
– অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র অক্ষুণ্ন থাকলেও এর কর্মক্ষমতা থাকে না। পানি ও বিদ্যুতের মতো অপরিহার্য বিষয়গুলো থাকা চাই অক্ষুণ্ন। যন্ত্রপাতি রাখা উচিত নিরাপদ। ভবনে প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ থাকা উচিত সহজ ও প্রশস্ত।
– সাংগঠনিক দিকেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। একটি নিরাপদ হাসপাতালে থাকবে আক্নিক দুর্ঘটনা মোকাবিলার পরিকল্পনা এবং সুশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, যাঁরা জরুরি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসংকট ও পরিণতি মোকাবিলায় হবেন দক্ষ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দুর্যোগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে নিরাপদ ও অক্ষুণ্ন রাখার জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে আহত মানুষের সেবা দেওয়া যায়। তৈরি করা হয়েছে ১২টি বেঞ্চমার্ক জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রস্তাবিত নিরাপদ হাসপাতাল সূচক ও প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে।
পরিবেশ ও দৃশ্যপট দ্রুত বদলাচ্ছে। উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্যসুবিধাগুলোও পৌঁছে যাচ্ছে শেষ সীমার দ্বারপ্রান্তে। পরিবেশ ও মানুষের জন্য দ্রুত নগরায়ণ এবং জনস্থানান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি বড় হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে, আর এ পরিবর্তন সম্পর্কে আগে অনুমান করা যাচ্ছে না; তাই বিরূপ ও চরম জলবায়ু পরিবর্তনের কালে স্বাস্থ্যসুবিধা অক্ষুণ্ন রাখাও জরুরি বিষয়।

প্রয়োজন জনসম্পৃক্ততা
তবে এই ইস্যু নিয়ে কেবল চিকিৎসকদের মধ্যে আলোচনা করলে হবে না, জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তাও প্রয়োজন। যেসব প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল নির্মাণ পরিকল্পনায় সহায়তা দেয়, এগুলো যাতে বিপর্যয় মোকাবিলার মতো সক্ষম হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

কিছু পরিসংখ্যান
জরুরি পরিস্থিতি স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে, এর আরও পরিসংখ্যান দেওয়া যেতে পারে।
– ২০০৮ সালের মে মাসে চীনের ওয়েনচুয়ানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজার চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান। এতে শতসহস্র মানুষ চিকিৎসা খুঁজেছে অন্যত্র।
– ২০০৪ সালে সুনামিতে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের ৬১ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই অঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ ধাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছে। এতে নারীস্বাস্থ্যের বড় রকমের ক্ষতি হয়েছে।
– মেক্সিকোতে প্রশিক্ষিত মূল্যায়নকর্মীরা ২০০টি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের নিরাপত্তা চিহ্নিত করেছেন, কীভাবে এর উন্নতি করা যায় এরও পরামর্শ দিয়েছেন।
– বাংলাদেশে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বহুমাত্রিক কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসুববিধা গড়ে তোলা হয়েছে, যা ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার ত্রাণের কর্মসূচিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ২০০৭ সালে সিডরের পর এ জন্য সহস্র মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

শেষ কথা
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসটি বিশ্বজোড়া স্বাস্থ্য প্রতিপাদ্য সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির একটি দিন। এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অংশীদারেরা এবং সরকার এমন স্বাস্থ্য অবকাঠামো বিনির্মাণে উৎসাহী হবে, যেসব কাঠামো ও কার্যক্রম দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম এবং সংকট-বিপর্যয়ে মানুষকে সাহায্য করতে সমর্থ। দুর্যোগে যাতে দ্রুত সাড়া দেওয়া যায়, স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের এ ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
এ বছর তাই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে। উদ্যোগী হতে হবে সরকারকে, চিকিৎসাসেবাকর্মী, নীতিনির্ধারকদের এবং সুশীল সমাজ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। সর্বোপরি এ কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে, তাহলেই সফলতার দিকে এগোনো যাবে।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০১, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection