সুন্দর সুস্থ দীর্ঘ জীবনের জন্য খাদ্যের ভূমিকা মুখ্য। সুতরাং খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে সচেতন থাকা প্রয়োজন, খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিমিতি জ্ঞান থাকতে হবে।
ক্ষুধা নিবৃত্তিসহ দেহের কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করে দেহকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখার জন্য যেসব উপাদান প্রয়োজন, সেসব উপাদানসমৃদ্ধ দ্রব্যকেই ‘খাদ্য’ বলা হয়। খাদ্যের উপাদানগুলো হলোঃ
১) আমিষ,
২) শ্বেতসার/শর্করা,
৩) চর্বি/স্নেহ,
৪) ধাতব/খনিজ লবণ,
৫) খাদ্যপ্রাণ,
৬) পানি।
খাদ্যমূল্য নির্ভর করে তার উপাদানের প্রকার ও প্রাচুর্যের ওপর। আহার গ্রহণের সময় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, কোনো খাদ্যের অভাব যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি আধিক্যও সুখকর নয়।
‘পরিমিত খাবার’ মানে হচ্ছে কোন বয়সে, কেমন দৈহিক গড়নে, কোন সময়ে, কী ধরনের পেশায়, কোন জাতীয় খাবার, কত পরিমাণে খেতে হবে। সব খাদ্যে সব উপাদান সমানভাবে বিদ্যমান থাকে না, সেহেতু সুষম খাদ্য গ্রহণ অতি জরুরি।
পরিমিত ও সুষম খাবার গ্রহণের যে ‘সুফল’ রয়েছে, পরিমিত ও সুষম খাবারের পাশাপাশি পরিমিত হাল্কা ব্যায়াম দেহকে নীরোগ রাখে।
অথচ যারা অতিমাত্রায় কম খেয়ে রোগা-দুর্বল, আর যারা অতিভোজনে স্থূলকায়, উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যায়াম করাটা কষ্টদায়ক এবং বলতে গেলে তাদের কারো পক্ষেই ব্যায়াম করা হয়ে ওঠে না। ফলে তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। শরীর ভালো না থাকলে কিন্তু মানুষের মনও ভালো থাকে না। আর দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমন্বয় না থাকলে মানুষ কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারে না।
সময়মতো এবং পরিমাণমতো খাওয়া দাওয়া না করলে নানা অসুখ দেখা দেয় যা জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে ব্যাহত করে এবং এতে সৌন্দর্যেরও হানি হয়। অসুখগুলোর মধ্যে হতে পারে অপুষ্টিজনিত রোগ, গ্যাস্ট্রিক আলসার, হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশান, হাইপোটেনশান, বিবিধ দুরারোগ্য ব্যাধি ইত্যাদি যেগুলো মানুষের শরীর-মন উভয়কেই কুরে কুরে খায়।
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার। আঁশজাতীয় খাবার কোষ্ঠ পরিষ্কার করে পেট ভালো রাখে। ব্রণ হতে দেয় না। রক্তে খারাপ কোলেস্টরোলের মাত্রা কমায় এবং ভালো কোলেস্টরোলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর আঁশযুক্ত খাবার যেহেতু পেট ভরা থাকার একটা অনুভূতি দেয়, সুতরাং ভাত-রুটি জাতীয় খাবারের চাপ কমে এবং দেহের ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে না। প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল খাওয়া উচিত। এগুলোর ক্যালরি মূল্য কম হলেও পুষ্টি মূল্য অনেক বেশি।
স্বাস্থ্যকর চুল, ত্বক ও দাঁত মানুষের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত সঠিক পরিমাণে সুষম খাবার গ্রহণ করলে ত্বক, চুল ও দাঁত ভালো থাকে। চোখ ভালো থাকে।
ভিটামিন- ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
খাদ্যের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো পানি। দিনে অন্তত ১৬-২০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন। দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ক্রিয়া সম্পাদন করা এবং বিভিন্ন বিষাক্ত বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য পানি প্রয়োজন। বয়স, সময়, পরিবেশ ইত্যাদি অনুপাতে সবসময় পরিমিত খাবার গ্রহণের অভ্যাস করতে পারলে মৃত্যু পর্যন্ত কোনো খাদ্যই অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করার দরকার হয় না।
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, ব্যায়াম ও মেডিটেশন করলে বাড়তি ক্যালরি দেহের ওজন বৃদ্ধি করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে প্রবাদ আছে যে, সকালে রাজার মতো, দুপুরে প্রজার মতো, রাতে ভিখিরির মতো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সকালে ভরপেট, দুপুরে তৃপ্তির সাথে এবং রাতে হাল্কা খাবার গ্রহণ করা উচিত। সুস্থ থাকার এগুলোই মূলমন্ত্র।
——————–
চমন আরা
গ্রন্থণাঃ সাদেকুর রহমান
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ০৩ মে ২০০৮