অতিরিক্ত চর্বি জমে আমাদের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়ে গেলে তাকে আমরা মুটিয়ে যাওয়া বলে থাকি। সাধারণত মাঝ বয়সে পৌঁছানোর পরপরই শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা শুরু হয়। তবে কিছু কিছু কারণে যেকোনো বয়সেই একজন মানুষ মুটিয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ এবং কম শারীরিক পরিশ্রমই এর প্রধান কারণ। এ ছাড়া কিছু হরমোনজাতীয় রোগ, পারিবারিক প্রবণতা এবং কোনো কোনো ওষুধও এর জন্য দায়ী। মহিলাদের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা পুরুষদের চেয়ে বেশি। উন্নত বিশ্বের বয়স্কদের মধ্যে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ মুটিয়ে যাওয়া সমস্যায় আক্রান্ত। দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশের কোটি কোটি ভগ্নস্বাস্থ্য মানুষের পাশাপাশি কারও কারও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে অতিরিক্ত ওজন কিংবা মেদভুঁড়ি।
মানসিক দুশ্চিন্তা ছাড়াও মোটা মানুষের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হূদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, পিত্তথলির পাথর, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, বন্ধ্যত্ব, ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়া বা স্লিপ এপনিয়া, ভেরিকস ভেইন, হার্নিয়া প্রভৃতি রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এসব রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হতে আপনার অস্বস্তিকর মেদভুঁড়ি কমিয়ে সুন্দর-সুঠাম শরীরের অধিকারী হওয়ার জন্য নিচের টিপসগুলো মেনে চলা প্রয়োজন:
তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় আনুন: পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, অধিক মাত্রায় শারীরিক পরিশ্রম ও লাইফস্টাইল বা জীবনযাত্রা এবং আচরণের পরিবর্তন।
আপনার ওজন কমানোর ইচ্ছাটাকে দৃঢ়ভাবে মনেপ্রাণে ধারণ করুন।
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমিত সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
অতিরিক্ত লবণ, মিষ্টি ও চর্বিজাতীয় খাবার যথাসম্ভব পরিহার করুন। প্রতিদিন কিছু পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খান।
ফাস্টফুড এবং কোল্ড ড্রিংকস পরিহার করুন। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে পরিবেশিত রিচ ফুড যথাসম্ভব পরিহার করুন।
মেদভুঁড়ি কমানোর চমৎকার একটি উপায় হচ্ছে হাঁটা। তাই কম দূরত্বের জায়গাগুলোতে হেঁটে চলাচল করুন।
লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
একটানা অধিক সময় বসে কাজ করবেন না। কাজের ফাঁকে উঠে দাঁড়ান। একটু পায়চারী করুন।
অলসতা দূর করতে সংসারে টুকিটাকি কাজ নিজেই করুন। সুযোগ থাকলে বাগান করুন, খেলাধুলা করুন, সাঁতার কাটুন।
সপ্তাহে তিন-চার দিন কিছু সময় ফ্রিহ্যান্ড (যন্ত্র ছাড়া) ব্যায়াম করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার উপযুক্ত ব্যায়াম নির্বাচন করুন। কারণ সব ব্যায়াম সবার জন্য উপযুক্ত নয়। ব্যায়াম করছেন এ ধারণা মাথায় রেখে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করবেন না।
কোমরে চওড়া বেল্ট ব্যবহার করতে পারেন। এতে মেদ দ্রুত বাড়তে পারবে না।
ওজন কমে স্বাভাবিক হয়ে এলেও পূর্বে উল্লিখিত অভ্যাসগুলোকে ধরে রাখতে হবে। তা না পারলে পুনরায় ওজন বেড়ে যাবে।
নিজে নিজে শুধু ওষুধ সেবন করে ওজন কমাতে যাবেন না। ওষুধ ব্যবহার করতে চাইলে তা অবশ্যই করতে হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো। ওষুধের পাশাপাশি বর্ণিত টিপসগুলো মেনে চলতে হবে।
প্রচলিত বিজ্ঞাপনের চমকে আকৃষ্ট হয়ে দ্রুত চিকন হওয়ার ওষুধ বা যন্ত্র ব্যবহার করতে যাবেন না। এতে আপনার অমঙ্গলের আশঙ্কাই বেশি।
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো আপনার মুটিয়ে যাওয়ার মাত্রা নির্ণয় করে বয়সানুসারে সুষম খাদ্যের তালিকা তৈরি করুন এবং এর বিজ্ঞানসম্মত নির্দেশনা মেনে চলুন।
মুহাম্মদ কামরুজ্জামান খান
জনস্বাস্থ্য ও প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০২, ২০১১