গ্রীষ্মকালের ফলগুলোর মধ্যে কাঁঠাল অন্যতম। বিরাট আকৃতির এ ফলটিতে রয়েছে দেহের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণ। কাঁঠালকে ইংরেজিতে বলে জ্যাকফ্রুট। এর বৈজ্ঞানিক নাম আরটোকারপাস হেটারোফাইলাস। কোলস্টেরলমুক্ত এই ফলে নেই কোনো ক্ষতিকারক চর্বি। এতে রয়েছে ৯৪ কিলোক্যালরি শক্তি। ফলের রাজা কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি। এই ভিটামিন দুটিই ত্বক ও চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। ভিটামিন-এ চোখের পুষ্টি জোগায়, অন্ধত্বজনিত সমস্যাগুলো দূর করে, বৃদ্ধি ও বর্ধনে অবদান রাখে, দেহে ক্ষতিকারক রোগ-জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয়। দেহের গঠনজনিত সমস্যা দূর করে। আর ভিটামিন-সি ক্ষত, দেহের কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকানোতে অবদান রাখে।
প্রখর রোদের জন্য গরমে যে সর্দি, হাঁচি, কাশি হয় কাঁঠালের ভিটামিন-সি তা দূর করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভিনয়েড নামের উপাদান বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন রয়েছে কাঁঠালে, যা প্রোস্টেট, স্তন, পাকস্থলী ও ফুসফুসের ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কাঁঠাল আঁশজাতীয় ফল। এই আঁশজাতীয় উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্ত পরিষ্কার রেখে হূৎপিণ্ডের শিরা-উপশিরার দেয়ালে চর্বি জমা ব্যাহত করে।
কাঁঠালে আরও রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাংগানিজ, আয়রন, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক ও ফসফরাস।
পটাশিয়াম দেহের কোষগুলোর বৃদ্ধি, বর্ধনে সাহায্য করে, দেহের পানির সমতা বজায় রেখে হূৎপিণ্ডের গতি ও রক্তচাপ ঠিক রাখে। আর আমাদের সবারই জানা যে আয়রন শরীরে রক্ত তৈরি করে। ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স বেরিবেরি রোগ, পেটের অসুখ দূর করে।
ভিটামিন-বি কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে অনেক ভিটামিন। কিন্তু কাঁঠালে রয়েছে ফোলেট, নিয়াসিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন নামের ভিটামিন-বি। কাঁঠালে ভিটামিন ‘ডি’, ‘ই’ ও ভিটামিন ‘কে’ নেই।
কাঁঠালের ক্যালসিয়াম দেহের হাড়, দাঁতের পুষ্টি জোগায়, জিঙ্ক শরীরের ইনসুলিন হরমোনের সরবরাহ নিশ্চিত করে, দেহের অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আর ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম দেহের অম্ল ও ক্ষারের সাম্যাবস্থা বজায় রাখে।
ফলের রাজা এই কাঁঠালের বিচিতেও রয়েছে উচ্চতর প্রোটিন। কম পরিমাণে কাঁঠালের বিচি খান। ডায়াবেটিসের রোগীরা কাঁঠাল খেতে পারবেন। তবে অতিরিক্তি মিষ্টি কাঁঠাল বর্জন করাই ভালো।
কাঁঠাল পুষ্টিতে ভরপুর। তবে অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে বদহজম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ফারহানা মোবিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৩, ২০১০