অনেক শিশু জন্মগতভাবে ট্যারা হয়ে জন্মাচ্ছে। আবার কেউ কেউ একটু বড় হওয়ার পর এ সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক পরিবারই ভাবে, শিশু ট্যারা হলে তা হচ্ছে সৌভাগ্যের লক্ষণ, অনেকে একে বলে ‘লক্ষ্মী ট্যারা’। চিকিৎসকদের মধ্যেও অনেকের ধারণা, চোখের ট্যারাজনিত সমস্যাটি ভালো হয় না। তবে শিশুচক্ষু-বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে এবং যথাযথ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্নগতভাবে শিশু এ সমস্যায় আক্রান্ত না হলে অনেকের বেলায় অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন নেই। চশমা দিয়ে এবং চিকিৎসকের ফলোআপে থাকলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল-লাগোয়া জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কথা হয় চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা শ্যামলীর সঙ্গে। ‘ছেলেকে কেউ যখন ট্যারা বলে তখন খুব রাগ হয়, এমনকি চার বছর বয়সী ছেলেও এ বিষয়টি খারাপ তা বুঝতে পারে’-এভাবেই বলেন শ্যামলী।
শ্যামলীরও একটি চোখ ট্যারা। স্বামী পছন্দ করে বিয়ে করার ফলে বিয়ের সময় তেমন একটা সমস্যা হয়নি ট্যারা চোখ নিয়ে। তবে জুন মাস থেকে যখন ছেলের একটি চোখেও এ সমস্যা ধরা পড়ে তখন অনেকেই বলেছে-ট্যারা মায়ের ছেলে তো ট্যারাই হবে! আবার অনেকে আরেকটু উৎসাহ নিয়ে শ্যামলীর দিকে প্রশ্ন ছুড়েছেন-তোমার মায়েরও কি চোখ ট্যারা ছিল?
শ্যামলী জানালেন, ছেলের সমস্যা চোখে পড়ার পর প্রথমে খুলনায় একজন চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক প্রথম দেখাতেই বলে দেন, ‘এ ট্যারা চোখ ভালো হবে না।’ পরে অন্যদের কথায় এ হাসপাতালে আনা হয়েছে ছেলেকে।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী শিশুচক্ষু-বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেনের কক্ষে বসে কথা হয় শ্যামলীর সঙ্গে। কথার এক ফাঁকে এনায়েত হোসেন জানালেন, শ্যামলীর ছেলের চোখে চশমা দিলেই ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ কথা শুনে খুশিতে শ্যামলীর চোখ দুটি চিকচিক করে ওঠে।
তবে ছেলের সমস্যাকে মোটেই অবহেলা করেননি সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা হুমায়ুন কবীর। বাচ্চার বয়স বর্তমানে সাত বছর, তিন বছর বয়স থেকে সমস্যার শুরু। হুমায়ুন কবীর বলেন, ছেলে টেলিভিশন দেখে বাঁকা হয়ে, বই পড়তে দিলেও বাঁকা হয়ে দেখে। তখনই সচেতন হন এবং এর পরই ছেলেকে নিয়ে আসেন ঢাকার এই জাতীয় হাসপাতালে। তারপর ছেলেকে চশমা দেওয়া হয়েছে এবং ছয় মাস পরপর ফলোআপে আসেন হুমায়ুন কবীর। ছেলে আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে বলে জানালেন তিনি।
ডা· এ এইচ এম এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জ্নগতভাবে শিশু ট্যারা হলে দুই বছর বয়সের মধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয়, জ্নগত না হলে অনেকের বেলায় চশমা দিয়ে দিলেই ভালো হয়ে যায়। তাই অস্ত্রোপচার করতেই হবে এ ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে অস্ত্রোপচার করতে হলে তা আগেভাগে করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে তাও অভিভাবকদের মাথায় রাখতে হবে।
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ০৫ ডিসেম্বর ২০০৭