Author Topic: শিশু থাকুক ছোঁয়াচে রোগমুক্ত  (Read 4603 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
শিশুর কয়েকটি ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে এই প্রতিবেদন।

মাম্পস

মাম্পস তীব্র সংক্রামক অসুখ। রোগের কারণ এক আরএনএ-জাতীয় ভাইরাস-নামটি মাম্পস ভাইরাস। পাঁচ থেকে ১৫ বছরের শিশু এ রোগের প্রধান শিকার। ক্লান্তি, জ্বর, শিরঃপীড়া, ক্ষুধামান্দ্য-এসব উপসর্গ দিয়ে শুরু। এক-দুই দিনের মধ্যে পেরোটিড লালা গ্রন্থি আক্রান্ত হওয়ার নমুনা দেখা দেয়। শিশু কানের পাশে ব্যথা অনুভব করে। ফোলা আস্তে আস্তে চোয়াল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, যা কানের লতিকে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়। মা বর্ণনা দেন, শিশুর মুখের একপাশ যেন ফুলে আছে। ৭৫ ভাগ শিশুর ক্ষেত্রে এ রকম ঘটে। তবে এক থেকে পাঁচ দিনের মাথায় মুখের অন্যপাশের গ্ল্যান্ডও ফুলে উঠতে পারে। শিশুর মাম্পস হতে বেশ কিছু মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। বাচ্চার ঘাড়শক্ত ভাব, অণ্ডকোষ ফোলা ও তীব্র পেটব্যথা-এসব অসুবিধার প্রতি মা-বাবা যেন লক্ষ রাখেন এবং শিশুবিশেষজ্ঞকে অবহিত করেন।

চিকিৎসা

    ব্যথা হলে প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন
    ফোলা গ্ল্যান্ডের ওপর হালকা গরম কাপড়ের সেঁকা দিন
    মুখগহ্বরের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
    শিশুর হাঁ করতে অসুবিধা হয়, তাই তরল খাবার বেশি বেশি খাওয়ান।

প্রতিরোধ

রোগটি ছড়ায় রোগীর হাঁচি-কাশিজাত জীবাণু বাতাসে ভর করে কিংবা ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসে। বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি প্রবর্তিত টিকাদান কর্মসূচি অনুযায়ী ১৫ থেকে ১৮ মাস বয়সে ‘এমএমআর ভ্যাকসিন’ প্রথম ডোজ দেওয়া হলে শিশু এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। এ কর্মসূচিতে শিশুর ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সে দ্বিতীয় ডোজ ‘এমএমআর টিকা’ দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। তাই সম্ভব হলে আজই আপনার শিশুকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো তীব্র ছোঁয়াচে মাম্পস রোগ প্রতিরোধক এক ডোজ টিকা দিন।

চিকেন পক্স

চিকেন পক্স ভয়াবহ রকমের ছোঁয়াচে। অসুখটি সাধারণভাবে নিরীহ মেজাজের।
কিন্তু নবজাতক ও বয়স্ক মানুষের জীবনসংহারক হয়ে উঠতে পারে। ভেরিমেলা কোস্টার ভাইরাস ডিনএ গ্রুপের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রোগের সৃষ্টি। কেউ একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় সারা জীবনের জন্য প্রাকৃতিকভাবে রোগ-প্রতিরোধশক্তি লাভ করে।

অসুখ ছড়ায় ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে গিয়ে, ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে।

সাধারণভাবে চিকেন পক্স দুই থেকে আট বছরের শিশুর রোগ। সাধারণ দুর্বলতা, জ্বর-এসবের পর র‌্যাশ দেখা দেওয়ার মধ্য দিয়ে রোগের শুরু।

ম্যাকিউল, পেনিউল, ভেমিকুলার স্টেজ পেরিয়ে র‌্যাশ শুকিয়ে ঝরে যায়, যা সম্পূর্ণ সেরে উঠতে কখনো বা দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। র‌্যাশ ওঠে বুকে ও পিঠে বেশি। তবে মুখে, মাথায়, হাত ও পায়ের তালুতে, এমনকি মুখের ভেতর বা চোখেও উঠতে পারে।

চিকিৎসা

    চিকেন পক্স থেকে স্পেসিস, এনকেফালাইটিস, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব জটিলতার চিকিৎসা সময়মতো করতে হবে
    সাধারণভাবে চিকেন পক্সে আক্রান্ত শিশুর কোনো বিশেষ ওষুধের প্রয়োজন হয় না। প্যারাসিটামল সাধারণ উপসর্গে যথেষ্ট কার্যকর।
    বিশেষ প্রয়োজনে এমাইক্লোভির ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

প্রতিরোধ

    যেসব শিশু স্টেরয়েড ওষুধনির্ভর বা রোগ-প্রতিরোধশক্তিতে দুর্বল, তাদের এ রোগের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত
    এ রোগের প্রতিরোধক টিকা বাজারে আছে। ভেরিলিক্স নামে পাওয়া যায়। এটি যথেষ্ট কার্যকর।

কিছুটা দামি হলেও এ ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শিশুকে চিকেন পক্সের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। শিশুর বয়স এক বছর পূর্ণ হলে এক ডোজ টিকার মাধ্যমে চিকেন পক্স প্রতিরোধ করা যায়।

—————————————
ডা: প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম
প্রথম আলো, ১২ মার্চ ২০০৮
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection