সাধারণত যেসব নবজাতকের ওজন কম, তাদের মূত্রনালির সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তুলনামূলক ছেলেদের মূত্রনালির সংক্রমণ মেয়েদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। যেসব শিশুর মুসলমানি করা হয় না, কিডনিতে জন্মগত ত্রুটি থাকে এবং যাদের মূত্রথলি ও ইরেটারের সংযোগস্থলে ত্রুটি থাকে, তাদের মূত্রনালির সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
কী হয় মূত্রনালির সংক্রমণ হলে
– নবজাতকের অনেক দিন ধরে জন্ডিস হবে।
– ওজন কমবে।
– শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে, সেপ্টিসিমিয়া হবে।
শিশুর বয়স এক বছরের নিচে হলে-
– শরীরের ওজন আনুপাতিক হারে বাড়বে কম।
– সব সময় অস্থিরতা ভাব থাকবে।
– জ্বর থাকবে।
– বমি ও ডায়রিয়া হবে।
একটু বড় শিশুদের বেলায়-
– প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা বা জ্বালাপোড়া করবে ও কাঁদবে।
– প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ।
– ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
– প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা।
– অজান্তে প্রস্রাব হওয়া। অনেকের তলপেটের দুই দিকে ব্যথা ও জ্বর জ্বর ভাব দেখা দিতে পারে।
কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে
প্রস্রাব পরীক্ষা করালে এবং কালচার করালে জীবাণু পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
অনেক সময় প্রস্রাব ঠিকমতো না নেওয়ার ফলে এবং জীবাণুমুক্তভাবে সংগ্রহ না করার ফলে কালচার ফলস নেগেটিভ বা পজিটিভ হতে পারে, তাই নিচে উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় প্রস্রাব সংগ্রহ করা উচিত, যেন প্রস্রাব কোনো কিছুর সঙ্গে কনটামিনেশন বা জীবাণু-সংমিশ্রিত না হয়।
– মিড স্ট্রিম ইউরিন কালেকশন।
– ক্লিনক্যাচ-শিশুকে সুড়সুড়ি দিয়ে প্রস্রাব করানো।
– ব্যাগ ইউরিন কালেকশন।
– সুপ্রাপিউবিক অ্যাসপাইরেশন- তলপেট ফুটো করে সংগ্রহ।
– ক্যাথেটার দিয়ে প্রস্রাব সংগ্রহ। এ ছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখা যেতে পারে কিডনি, মূত্রনালি, মূত্রথলি ইত্যাদিতে জন্মগত কোনো ত্রুটি আছে কি না। এক্স-রে করে দেখতে হবে পাথর আছে কি না, স্পাইনালে কোনো ত্রুটি আছে কি না। কোনো কিছু সন্দেহ হলে বা পাওয়া গেলে আইভিইউ করা দরকার। দুই বছরের নিচে শিশুদের জন্য এমসিইউজি বা মিকচুরেটিং সিস্টোইউরে থ্রো গ্রাম রুটিনলি করা হয়। এ ছাড়া অবস্থা বুঝে এবং রোগীর সমস্যা অনুযায়ী ডিএমএসএ স্ক্যান, ডিটিপিএ স্ক্যান করা হয়।
দরকার সচেতনতা
ভবিষ্যতে সংক্রমণ যেন না হয়, সে জন্য অভিভাবকদের বেশ সচেতন হওয়া দরকার। যেমন-
– শিশুদের যেন কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
– নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।
– পায়খানা করার পর নিয়মিত পায়খানার রাস্তা পরিষ্কার করতে হবে। সামনে থেকে পেছনে পরিষ্কার করতে হবে।
– বাথটাবে গোসল করানো উচিত নয় এবং পায়খানার রাস্তা জ্বলে, এ ধরনের সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়।
– প্রস্রাব করার সময় ভালোভাবে এবং মূত্রথলি খালি করে প্রস্রাব করতে হবে বা করাতে হবে।
– প্রচুর পরিমাণে পানি খাবে।
– ঠিকমতো জাঙ্গিয়া পরাতে হবে। টাইট জাঙ্গিয়া পরানো যাবে না।
– পরিমাণমতো নির্ধারিত সময় অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে।
ঠিকমতো চিকিৎসা করলে শিশুর মূত্রনালির সংক্রমণ ভালো হয়ে যায়। অবহেলা না করে প্রস্রাবে কোনো সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে চিকিৎসা করাতে হবে।
ডা· মুজিবুর রহমান মামুন
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালটেন্ট
নিবেদিতা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২০, ২০০৮