পরোক্ষ ধূমপানে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। শিশুরা এমনিতে দ্রুত শ্বাস নেয়, তা ছাড়া তাদের শ্বাসতন্ত্রও অপরিণত, তাই সিগারেটের ধোঁয়া সহজেই শিশুদের শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে সমূহ ক্ষতিসাধাণ করে।
পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শিশুর নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর তিন লাখ শিশু চারপাশের ধূমপানের কারণে নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিসে ভোগে। পরোক্ষ ধূমপানে শ্বেত রক্তকণিকা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, ফলে শিশু অল্পতেই অসুখে ভোগে। যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ১৭ হাজার শিশু বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পারিপার্শ্বিক ধূমপানের কারণে শিশুরও হৃদরোগ হতে পারে। এ ছাড়া মধ্যকর্ণের প্রদাহ, বধিরতা, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, ঝিমুনি, অস্থিরতাও হতে পারে। শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ধূমপানের ধোঁয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু গণিত ও যুক্তিবিদ্যায় কম পরদর্শী তাদের বেশির ভাগেরই মা-বাবা ধূমপায়ী। এরা শিক্ষক ও সহপাঠীর সঙ্গে সঠিক আচরণ করতেও শেখে না।
গর্ভাবস্থায় ধূমপান করলে সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কারণ গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে যে রক্ত বাহিত হয় এর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা কমিয়ে দেয় তামাকের কার্বন মনোক্সাইড।
নিকোটিন গর্ভফুলের রক্ত-সরবরাহ হ্রাস করে। ফলে মায়ের শরীর থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে যেতে পারে না, তাই শিশুর বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়।
এ ছাড়া ধূমপানের কারণে গর্ভপাত কিংবা অপরিণত শিশু জন্মাতে পারে। এই অপরিণত শিশুরা আবার সংক্রমণ বা অন্য কোনো কারণে মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে থাকে। মায়ের ধূমপানের কারণে অনাগত সন্তানের জন্মগত সমস্যাও হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারে বাবা, বড় ভাই বা অন্য কেউ ধূমপান করলে শিশুরা সহজেই আকৃষ্ট হয়। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। সময় এসেছে ধূমপান পরিত্যাগের।
আবু সাঈদ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১৭, ২০০৯