শিশুর দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় সকালের খাবার কি খুব জরুরি? এমন প্রশ্ন মা বা অভিভাবকের মনে ঘুরপাক খায়। আসলেই সকালের খাবার খুব প্রয়োজনীয়, কেননা দিবসের প্রথম ভাগের খাবার শরীরে শক্তি জোগায়, যাতে সারা দিনের রসদ শরীর মোটামুটিভাবে পেয়ে যায়। শিশুরা ভালোভাবে সকালের খাবার খেয়ে নিলে শরীরে বেশি শক্তি পায়, স্কুলে ভালো করে, সারা দিন ভালোভাবে কাটাতে পারে। অন্যথায় শিশু খুব খিটখিটে, অস্থির ও ক্লান্ত হয়ে থাকে।
সকালের খাবারের প্রয়োজনীয়তা
শিশু প্রায় চার থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকে। এ সময় সে না খেয়ে ছিল। এ কারণে তাকে এখনই খাবার দেওয়া উচিত। সামান্য কিছু না খেলে সকালের খানিক পর তার মুড পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
সকালের খাবার ব্রেইন পাওয়ার হিসেবে কাজ করে। বিশেষত তা যদি দানাদার, আঁশযুক্ত খাবার হয়, শিশু-শরীর পায় মনোযোগ, শক্তি ও স্মরণক্ষমতা।
গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের খাবার ক্যালসিয়াম, আঁশ ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ থাকার কারণে শিশুর ওজন নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। এসব শিশুর পেটে ব্যথার উপসর্গ এবং স্কুলে অনুপস্থিতির হার কম।
সকালের খাবারের নীতিমালা
সকালের ঘুম ঘুম চোখের শিশুকে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করতে হচ্ছে। সংসারে অনেক কাজ। এ সময় সত্যিকার অর্থে শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করা চাট্টিখানি কথা নয়। তবু ভালো খাবার তৈরিতে যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে:
একটু আগে (মিনিট দশেক হলেও চলে) সবাই বিছানা ছেড়ে উঠলে ভালো হয়।
তাজা ফলমূল, কলা, স্যান্ডউইচ, বিভিন্ন শাকসবজির খাবারে রান্নাঘর যেন প্রস্তুত থাকে, আগের রাতে তা খেয়াল করে নেওয়া ভালো।
টেবিলে রাখা নানা মেন্যু থেকে শিশু নিজেরটা পছন্দ করে নিতে পারে।
প্রয়োজনে ব্যাগে ভরে নিক, ক্লাস বিরতির মাঝখানে খেয়ে নিলেও চলবে।
তবে স্কুল থেকে কিছু কিনে খেলে স্বাস্থ্যকর কোন ধরনের খাবার সে কিনবে, তা নির্দিষ্ট করে দিন।
স্বাস্থ্যকর সকালের খাবার
সুষম খাবার কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফাইবার দিয়ে সাজানো দরকার।
শর্করা বা কার্বহাইড্রেট: শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। যেমন—দানাদার খাবার, চাল, রুটি, ফল, শাকসবজি। আমিষ বা প্রোটিন: কম ফ্যাটযুক্ত ডেইরি প্রোডাক্টস, মাংস, ডিম, বাদাম।
আঁশ বা ফাইবার: শাকসবজি, ফলমূল, পাউরুটি, শস্যদানা ইত্যাদি।
ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৪, ২০১১