চায়ের পাতায় রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, যার মধ্যে রয়েছে চমৎকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। খাবারের সঙ্গে বেশি পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরে গেলে হৃদযন্ত্র বেশি সক্রিয় থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফলমূল বা শাকসবজিত যে পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, চায়ে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে রয়েছে। চা অভ্যর্থনার পানীয় হিসেবে জনপ্রিয় হলেও এর ঔষধি গুণটি সমান্তরালভাবে স্বীকৃত। একই ধরনের চায়ের পাতা থেকে তিন ধরনের চা তৈরি হয়। যেমন-গ্রিন টি, উলং টি, ব্ল্যাক টি। সতেজ সবুজ পাতা রোদে শুকিয়ে তাওয়ায় সেঁকে গ্রিন টি তৈরি করা হয়।
গ্রিন টি সামান্য ফার্মেন্ট করলে হয় উলং টি। পুরোপুরি ফার্মেন্ট করলে হয় ব্ল্যাক টি। এখনকার গবেষণায় জানা যায়, গ্রিন টি পেটের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ট্যানিক এসিডের জন্য গ্রিন টির লিকার দাঁতের ক্ষয়রোধ এবং মাঢ়ি মজবুত করে। দেহের কোনো অংশ কেটে গেলে সে স্থানে গ্রিন টির লিকারে তুলো ভিজিয়ে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। আবার খুব চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর উলং চায়ের লিকার খেলে কোলেস্টেরল বাড়ার আশঙ্কা তেমন থাকে না। আবার রক্তে লৌহ-কণিকার প্রাধান্য থাকলে প্রধান খাবারের পর পরই চা পান করলে ভালো হয়। এতে লৌহ শোষণের মাত্রা কমে যায়। বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে।
পোকামাকড় কামড়ালে যদি ক্রমাগত চুলকায় বা ফুলে যায়, সেখানে ভেজা সবুজ চা-পাতা দিয়ে ঢেকে দিলে আরাম বোধ হয়। চোখের ক্লান্তির ছাপ কাটাতে ভেজা টি-ব্যাগ চোখের ওপর রাখলে ভালো ফল হয়। ত্বকে আঁচিলের সমস্যা দেখা দিলে চা-গাছের তেল প্রতিদিন ফোঁটা ফোঁটা করে আঁচিলের ওপর লাগাতে হবে। চায়ে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম ও ক্যাফিন। শরীরে আলস্য কাটিয়ে একটা চলমান ও স্কূর্তিভাব আনতে পটাশিয়াম ও ক্যাফিনের জুড়ি নেই। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাদের জন্যও পটাশিয়াম উপকারী। চায়ে রয়েছে জিঙ্ক, যা শরীর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। চা শুধু উদ্দীপকই নয়, এটা রক্ত জমাট বাঁধাও দূর করে। চা-পাতা সেদ্ধ পানি চুল পড়া রোধ করে। ২০-২৫টি কাঁচা চা-পাতা ও তুলসীপাতা একত্রে সেদ্ধ করে মাথায় মেখে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে উকুন দূর হয়। অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন ও গর্ভবতীদের খুব বেশি চা খাওয়া উচিত নয়।
আখতারুন নাহার আলো
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০৪, ২০০৯