হিব ভ্যাকসিনের নাম আমরা অনেকে শুনেছি আবার অনেকে শিশুকে এই ভ্যাকসিন দিয়েছি। কিন্তু যারা এখন পর্যন্ত তেমন কিছু জানে না তাদেরও জানার প্রয়োজন রয়েছে। হিব হচ্ছে হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েনজি টাইপ বি ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে সাধারণ শিশুরাই আক্রান্ত হয়। চার থেকে ১২ মাস বয়সের শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্বে প্রায় ২০ লাখের মত শিশু মারাত্মক হিব রোগে আক্রান্ত হয়। হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েনজি টাইপ বি ব্যাকটেরিয়া যেসব রোগ সৃষ্টি করে তা হচ্ছে মেনিনজাইটিস, নিমোনিয়া, সেপটিসেমিয়া, এপিগ্লটাইটিস ও সেপটিক আর্থারাইটিস।
মেনিনজাইটিস খুব মারাত্মক একটি রোগ। শিল্পোন্নত দেশের শতকরা ৫ ভাগ শিশু মৃত্যুর কারণ হিবজনিত মেনিনজাইটিস। আর আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে শিশু মৃত্যুর ২০ থেকে ৫০ ভাগ শিশু মৃত্যুর কারণ মেনিনজাইটিস এ নিমোনিয়া। সারা বিশ্বে প্রতিবছর ৪ থেকে ৭ লাখ শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী হিব। আক্রান্ত শিশুরা যারা বেঁচে যায় তারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ও জটিলতা নিয়ে বাকী জীবন কাটায়।
মেনিনজাইটিস রোগে মস্তিস্কের আবরণী বা মেনিনজিস আক্রান্ত হয়। নিমোনিয়া ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। এপিগ্লটাইটিসে শ্বাসনালীতে বাঁধার সৃষ্টি হয় ও শ্বাস প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটে। সেপটিসেমিয়াতে রক্তে হিব ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় ও নানারকম লক্ষণ সৃষ্টি হয়। এছাড়া প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে হিব।
খুব সহজেই হিব সংক্রমণ হতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত শিশুরা হাঁচি, কাশি, থুথু থেকে সুস্থ শিশুতে সংক্রমিত হয়। শিশুরা খুব সহজেই যে কোন জিনিস মুখে দেয় তাই লালার মাধ্যমে সহজেই সংক্রমিত হয়।
এই ভয়াবহ ব্যাকটেরিয়ার প্রতিশোধক হচ্ছে হিব ভ্যাকসিন। এইসব মারাত্মক রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় হিবের টিকা বা ভ্যাকসিন শিশুকে দেবার মাধ্যমে। যেসব দেশে হিব ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে সেসব দেশে এ ব্যাপারে অত্যন্ত সফলতা দেখা গেছে। ইউরোপের দেশগুলোতে হিব জনিত মেনিনজাইটিসের হার শতকরা ৯৫ ভাগ কমে গেছে।
আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ এই যে বাংলাদেশেও হিব ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আমাদের শিশুদেরকেও হিব জনিত নিমোনিয়া, মেনিনজাইটিস ও অন্যান্য রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারব। হিব ভ্যাকসিনের ৩টি ডোজ। এক মাস অন্তর এক ডোজ দেয়া হয়। ১৪ সপ্তাহ বয়স থেকে এই টিকা দেয়া শুরু করা শিশুকে এই টিকা দেয়ার জন্য চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। হিব ভ্যাকসিনের তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। মাংসপেশীতে ইনজেকশন প্রদানের মাধ্যমে এই ভ্যাকসিন দেয়া হয়।
ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বার : জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল (প্রা.) লি.,
১০৩, এলিফ্যান্ট রোড (তৃতীয় তলা), বাটা সিগন্যালের পশ্চিম দিকে, ঢাকা,
ফোন : ০১৯১১৫৬৬৮৪২।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, আগস্ট ২৯, ২০০৯