Author Topic: এ দেশেও কি হতে পারে না?  (Read 4525 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
এ দেশেও কি হতে পারে না?
« on: January 16, 2012, 07:47:44 PM »
মাঝেমধ্যে ভাবি, আমার মৃত্যুর পরিবেশ কেমন হলে আমি সন্তুষ্ট হব। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু সম্বন্ধে প্রস্তুতির কথা মনে আসে। অবশ্যম্ভাবী এ পরিণতির ভাবনা থেকে দূরে থাকা বোকামি মনে হয়।
আমি বা আমার মতো সাধারণ মানুষেরা এই বয়সে পৌঁছে কী চাই। সবার আগে প্রথম চাহিদা সন্তানসন্ততির উপযুক্ত জীবনের দিকনির্দেশনা খুঁজে পাওয়া। স্ত্রীকে যেন কারও মুখাপেক্ষী না হতে হয় তার জোগাড় রাখা। সম্ভব হলে ধর্মীয় সব আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা, তারপর দিন গোনা। আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বেশির ভাগ মৃত্যুর সময় পিছিয়ে গেছে। অর্থাত্ অসুখবিসুখ চিকিত্সা করে আমাদের গড় আয়ু অনেক বেড়েছে। সবচেয়ে সুখের মৃত্যু হলো কোনো কষ্ট না পেয়ে মরা।
অর্থাত্ কোনো আগাম বার্তা না দিয়ে ধুপ করে মরা। চিকিত্সাশাস্ত্রে এ রকম মরার একটাই বৈজ্ঞানিক কারণ, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। অথবা অনুরূপ অবস্থা হতে পারে বিভ্রাটের কারণে এনেসথেসিয়ারত অবস্থায় মারা যাওয়া। দুটো অবস্থাই বেশ বিরল।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যু হয় ভুগে ভুগে এবং যন্ত্রণা নিয়ে ও অপরকে যন্ত্রণা দিয়ে। অধিকাংশ রোগের মৃত্যু দিয়ে সমাপ্তি হলেও মরার আগে শ্বাসকষ্ট, চলাফেরায় অসুবিধা, হাতে-পায়ে পানি আসা, ব্যথা ইত্যাদি অসুবিধা লেগে থাকে। যতক্ষণ মস্তিষ্ক কর্মক্ষম, ততক্ষণ এসব কথা ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু সত্য হলো, এগুলো আমাদের বেলায়ও হবে। গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে পক্ষাঘাতগ্রস্ততা, ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক)—এসব রোগের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। এসব রোগের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, বেঁচে থাকার দিনগুলোয় পরনির্ভরশীল হওয়া এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে (ক্যানসার) অনেক ব্যথা-বেদনার সাথী হওয়া।
সুস্থ অবস্থায় পরনির্ভরশীল হওয়ার কথা ভাবাই যায় না।
বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে পরিবার-পরিজনের ওপর শারীরিক প্রয়োজনে ভর করার কথা বড়ই বেদনাদায়ক মনে হয়। এর আগে মরে যাওয়া শ্রেয়। এর প্রধান কারণ, সংসার ছোট হয়ে এসেছে। সংসারে অন্যের প্রয়োজন মেটানোর সময় পাওয়া ভার। চাকরি, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ইত্যাদি সামাল দিয়ে বাবা বা শ্বশুর, সবার দেখাশোনা করা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। বিকল্প হিসেবে যাদের সহায় আছে, তারা অন্য লোক ভাড়া করে নিকটজনের দেখাশোনার ব্যবস্থা করে। কিন্তু সে অবস্থা আমাদের সমাজের কিছুসংখ্যক লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিদেশে ‘হসপিস’ বলে আধাহাসপাতাল আছে, প্রশিক্ষিত লোকবল আছে। এরা মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের সেবা দিয়ে থাকে। শুধু চিকিত্সাসেবাই নয়, রোগীর মানসিক ও সামাজিক প্রস্তুতিতে তারা সাহায্য করে থাকে। রোগ-সম্পর্কিত ব্যথা-বেদনা প্রশমনে প্রয়োজনীয় চিকিত্সাসেবা দিতে এরা সিদ্ধহস্ত। চিকিত্সাসেবার উত্কর্ষের সঙ্গে আমরাও এ ধরনের সেবার আশা কি আমাদের দেশে করতে পারি না? আমরা বেদনাবিহীন, পরনির্ভরশীলতা ছাড়া পরিবার-পরিজন পরিবেষ্টিত অবস্থায় সৃষ্টিকর্তার নামকীর্তন শুনতে শুনতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করব। এ ভাগ্য কজনের জুটবে।

খলিলুর রহমান, এনেসথেসিওলজিস্ট, সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ০৭, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection