Author Topic: স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কৌশল  (Read 4518 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
স্মৃতিশক্তি বাড়াবার ইচ্ছে কমবেশি আমাদের সবার মধ্যেই আছে। আমরা চাই সব কিছু যেন আমাদের মনে থাকে। বাস্তবে সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু মনে রাখার পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে। যেমন : ১. লক্ষ্য করুন এবং নোট নিন, ২. তথ্য সুশৃঙ্খলিত করুন, ৩. ডায়েরি ব্যবহার করুন, ৪. শরীর ফিট রাখুন, ৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, ৬. মগজ ব্যায়াম করুন, ৭. স্মৃতি সহায়ক, ৮. অন্যান্য সহায়ক, ৯. মনে রাখবেন কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।

১. লক্ষ্য করুন ও নোট নিন : কোন কিছুকে গুরুত্ব দিয়ে না শুনলে বা না দেখলে তা আপনার মনে থাকবে না। সুতরাং নিজেকে বিষয়টি সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন রেখে গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ দিন। যেমন- এইমাত্র যার সঙ্গে আপনার পরিচয় হলো তার নামটি যদি আপনি মনে রাখতে চান তাহলে তা কয়েকবার নিজে নিজে আওড়ান এবং মনের ঠিক কোথায় নামটি রাখছেন খেয়াল করুন। টুকে নেয়াটা খুব ভাল অভ্যাস। প্রয়োজনীয় জিনিস টুকে নিলে তা মনে থাকে ভাল।

২. সুশৃঙ্খল হোন : স্বভাবের দিক দিয়ে গোছানো হলে অনেক কিছুই সহজে মনে থাকে। নির্দিষ্ট জিনিস সব সময় নির্দিষ্ট জায়গায় রাখলে প্রয়োজনের সময় হাতড়ে বেড়াতে হয় না।

৩. ডায়েরি ব্যবহার করুন : ডায়েরিতে তারিখ অনুযায়ী করণীয়গুলো লিখে রাখলে কোন কাজ বাদ পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে এ জন্য মনে পড়ামাত্র কাজটির কথা ডায়েরির নির্দিষ্ট পাতায় লিখতে হবে আর প্রতিদিন ডায়েরি দেখতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি প্রতিরাতে আগামীকালের কাজগুলো দেখে নেন।

৪. শরীর ফিট রাখুন : শরীর সুস্থ থাকলে মনও সুস্থ থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন, পরিমিত আহার করুন, সিগারেট ছেড়ে দিন। কানে শুনতে, চোখে দেখতে অসুবিধা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন, এতে অন্যে কি বলছে কি করছে তা আপনি আর মিস করবেন না। ঘুমের বড়ি না খাওয়াই ভাল। আপনি আরও একটু এ্যালার্ট থাকবেন তাহলে।

৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান : নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর ব্যাপারটা আমাদের অভ্যাসের বাইরে। ফলে রোগ গভীর না হওয়া পর্যন্ত আমরা তার উপস্থিতি টের পাই না। প্রত্যেকের উচিত প্রতিবছর ডাক্তারকে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। এতে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চোখের বা কানের সমস্যা সহজেই ধরা পড়বে। আপনার বিষণ্নতা থাকলে তাও ধরা পড়বে। বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ সেবন করলে বিষণ্নতা যত কমবে আপনার স্মৃতিশক্তি তত বাড়বে।

৬. মগজকে ব্যবহার করুন : শারীরিক কাজ না করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। কেউ যদি কয়েক সপ্তাহ বিছানায় শুধু শুয়েই থাকে তার পা সরু হয়ে যাবে, মাংসপেশীতে টান পড়বে, হাঁটতে অসুবিধা হবে। তেমনি কার্যক্ষমতা কমে যায়। সুশিক্ষিত বুদ্ধিমান ব্যক্তি যাঁরা নিয়মিত বুদ্ধির চর্চা করেন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি হ্রাস তুলনামূলকভাবে কম হয়। তাই ভাল স্মৃতিশক্তি পেতে চাইলে নিয়মিত পড়ুন, শিখুন ও সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণ করুন। অলসভাবে বসে থাকলে স্মৃতিশক্তি ভোঁতা হয়ে যায়।

৭. স্মৃতি সহায়ক : মনে রাখার কিছু চমৎকার কৌশল আছে, যেমন- ‘আসহবেনীকলা’-রংধনুর সাত রঙের নাম মনে রাখতে সাহায্য করে। ইংরেজিতে লেফটেন্যান্ট বানানটা মনে রাখা আপনার জন্য খুব কষ্টকর হলে মনে রাখুন- ‘মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া’- শব্দগুলোর ইংরেজি লিখে নিন, বানান পেয়ে গেলেন। মনে রাখার জন্য কল্পনা শক্তির ব্যবহার খুব জরুরি। যে কল্পনাশক্তিকে যত চমৎকারভাবে ব্যবহার করতে পারবে তার মনে থাকবে তত বেশি। বিশেষত ভারতীয় বিজ্ঞাপনগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন পণ্যের বিজ্ঞাপনে কি অদ্ভুত সব কল্পনা ব্যবহার করা হচ্ছে। এসবই মনে রাখার পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।

৮. অন্যান্য সহায়ক : দিন তারিখ মনে রাখার জন্য আমরা ক্যালেন্ডার-ঘড়ি ব্যবহার করছি। ঘুম থেকে ওঠার জন্য এলার্ম ঘড়ি ব্যবহার করছি। আজকাল মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রে রিমাইন্ডার নামে একটা ব্যবস্থা আছে- যা আপনাকে কাজের কথাটা মনে করিয়ে দেবে। যে জিনিসটা নিয়ে বাইরে যেতে হবে তা দরজার মুখে রাখুন, ওষুধটা বেসিনের ওপরে তাকে রাখুন- প্রয়োজনের জিনিসগুলো আগেই গুছিয়ে রাখুন, কোন জিনিস ফেলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

৯. কেউই খুঁতবিহীন নয় : অধিকাংশ মানুষ যারা নিজেদের স্মরণশক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নন তারাও যে সব কিছুই মনে রাখতে পারেন, তা নয়। যুবকদের মধ্যে যারা ভুলে যায় তারা হয়ত অজুহাত দেখায়- ‘প্রেমে পড়েছি, মন অন্য দিকে নেই’, ‘পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত’ ইত্যাদি ইত্যাদি। বয়স্করা ভাবেন ‘আমার কি স্মৃতিভ্রংশ দেখা দিল?’ আসলে এরা সবাই স্বাভাবিক। মানুষ একটু আধটু ভুলবেই। যতক্ষণ পর্যন্ত এটা সাধারণ কাজকর্মে ব্যাঘাত না ঘটাচ্ছে, ততক্ষণ দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

সত্যি যদি মনে ভুলে যাওয়া ব্যাপারটা আপনাকে বেশ ভোগায় তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সে ক্ষেত্রে যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করবেন ততই ভাল।

ডা. জিল্লুর কামাল
লেখক : মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ
সুখীমন, পরিবাগ, ঢাকা।
মোবাইল : ০১৭১১৮১৯৫৩৭।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, অক্টোবর ২৬, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection