Author Topic: কোলেস্টেরল আর নয়  (Read 4718 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
কোলেস্টেরল আর নয়
« on: January 16, 2012, 04:45:57 PM »
কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি জাতীয় পদার্থ যা মানবদেহের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। শরীরে নতুন কোষ তৈরিতে কোলেস্টেরল ভূমিকা রাখে। কেউ যদি প্রতিদিন বেশি কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার অথবা অতিরিক্ত পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করেন, তাহলে তার রক্তে স্বাভাবিকভাবেই কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আর কোলেস্টেরল লেভেল বেড়ে গেলে ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়ে অ্যাথেরোসক্লেরেসিস রোগ হওয়ার বুঁকি বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতি রোগ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। মানুষের শরীরে কোলেস্টেরলের চাহিদা মূলত দুটি উৎস থেকে পূরণ হয়-খাবারের মাধ্যমে এবং যকৃত থেকে। যকৃতে কোলেস্টেরল আগে থেকেই জমা থাকে। শরীর তার দরকারের সময় এই কোলেস্টেরল যকৃত থেকে নিয়ে নেয়।

কোলেস্টেরলের রকমফের: কোলেস্টেরল এক ধরনের প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত থেকে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে পরিভ্রমণ করে। এই প্রোটিনসংযুক্ত কোলেস্টেরলকে বলা হয় লিপোপ্রোটিন। লিপোপ্রোটিনগুলোতে বিভিন্ন ঘনত্বের প্রোটিন থাকে- উচ্চ ঘনত্ব, নিম্ন ঘনত্ব নিম্নতর ঘনত্ব। এলডিএল বা লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিনকে বলা হয়-খারাপ কোলেস্টেরল। কারণ এই জাতীয় কোলেস্টেরল সহজেই মানবদেহের ধমনীগাত্রে জমা হতে পারে। এলডিএল-এ প্রোটিন কম থাকে, ফ্যাট বেশি থাকে। যার রক্তে এই ধরনের কোলেস্টেরল যত কম, অ্যাথেরোসক্লেরেসিস, হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক ও অন্যান্য জটিলতা থেকে তিনি তত বেশি দূরে। এইচডিএল বা হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিনকে কখনও-কখনও বলা হয়-ভালো কোলেস্টেরল। কারণ এই জাতীয় কোলেস্টেরল ধমনীগাত্রে কোলেস্টেরলকে জমাট বাঁধতে দেয় না। এইচডিএল-এর বেশিরভাগ উপাদানই হল প্রোটিন; যার সাথে খুব অল্প পরিমাণ চর্বি মিশ্রিত থাকে। এইচডিএল রক্ত থেকে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলকে সরিয়ে দিতে সহায়তা করে। এটি রক্তের মধ্য থেকে খারাপ কোলেস্টেরলকে যকৃতে নিয়ে জড়ো করে এবং যকৃত এই কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে বের করার কাজে সহযোগিতা করে। যদি আপনি হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে থেকে থাকেন, তাহলে আপনার উচিত হবে-রক্তের এইচডিএল কোলেস্টেরল-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা। ট্রাই গ্লিসারাইড হল এমন একটি কোলেস্টেরল, যাতে খুব অল্প পরিমাণ লিপোপ্রোটিন থাকে। সাধারণত রক্তে সামান্যই ট্রাইগ্লিসারাইড থাকে। বরং চর্বিকোষে ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি মাত্রায় জমা থাকে। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে হার্ট এ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণ: রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কতগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। এই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো দুই ধরনের হয়-নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও অনিয়ন্ত্রণযোগ্য।

০ নিয়ন্ত্রণযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো হল-ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়ডিজম এবং খাবার। এছাড়াও অতিরিক্ত ওজন, ব্যায়াম না করা, উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড চর্বি জাতীয় খাবার আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

০ অনিয়ন্ত্রণযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে রয়েছে-বংশগত কারণে অনেকের শরীরে লিপিড ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে। বয়সবৃদ্ধিজনিত কারণেও আপনার রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। কুড়ি বছর বয়সের পর থেকে মানবদেহে কোলেস্টেরল লেভেল বাড়া শুরু করে। ৫০ বছর বয়স পর্যন- পুরুষের দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ মহিলাদের তুলনায় কম থাকে। তরুণ বয়সে মেয়েদের শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ ছেলেদের তুলনায় বেশি থাকে।

কোলেস্টেরলজনিত উপসর্গ: কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও নির্দিষ্ট উপসর্গ নেই। যার ফলে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে এটি সহজে বোঝা যায় না। কিন্তু উচ্চ কোলেস্টেরলের খারাপ প্রভাবজনিত কারণে অ্যাথেক্সেক্লেরেসিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, স্ট্রোক, পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ, অগ্নাশয়ের প্রদাহ প্রভৃতি কঠিন ও ভয়াবহ রোগ আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এসব রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই আপনাকে সতর্ক হতে হবে। আপনার রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে-কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। তা না হলে এমনও হতে পারে-হার্ট এ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান- হওয়ার পরে আপনি বুঝতে পারলেন, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটি ঘটেছে; যা আগে জানলে আপনি আগে থেকেই প্রতিরোধ করতে পারতেন।

কোলেস্টেরলের পরিমাণ-নির্ণয়: রক্তের কোলেস্টেরল নির্ণয় করার জন্য চিকিৎসকরা দুই ধরনের টেস্ট করার জন্য রোগীকে পরামর্শ দেন-ফাস্টিং কোলেস্টেরল টেস্ট বা খালিপেটে কোলেস্টেরল টেস্ট ও নন-ফাস্টিং কোলেস্টেরল টেস্ট। ফাস্টিং কোলেস্টেরল টেস্টের আরেক নাম লিপিড প্রোফাইল। এই টেস্টে এইচডিএল, এলডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও টোটাল কোলেস্টেরল দেখা হয়। আর নন-ফাস্টিং কোলেস্টেরল টেস্টে দেখা হয়-সামগ্রিক কোলেস্টেরল লেভেল ও এইচডিএল লেভেল বা ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ। আপনার চিকিৎসক প্রথমে আপনাকে নন-ফাস্টিং টেস্ট করতে দেবেন। এটির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তিনি আপনাকে লিপিড প্রোফাইল করতে বলতে পারেন।

কোলেস্টেরল কমানোর উপায়: কোলেস্টেরল কমানোর পদ্ধতি মূলত দুটো। প্রথমটি হল জীবন-যাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা; আর দ্বিতীয়টি হল ওষুধের মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমানো। জীবন-যাপন পদ্ধতির পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে-চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার, ধূমপান ছেড়ে দেয়া, অতিরিক্ত ওজন কমানো এবং ব্যায়াম করা। লাইফ স্টাইল পরিবর্তনে কাজ না হলে আপনার চিকিৎসক আপনাকে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। একই সাথে কোলেস্টেরল কমানোর মত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়াম করার জন্যও উপদেশ দেবেন। কোলেস্টেরল কমানোর দুটো পদ্ধতিরই মূল উদ্দেশ্য হল-এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) কমানো এবং এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল) বাড়ানো। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ছাড়াও যাদের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজের অন্যান্য রিস্ক ফ্যাক্টর বিদ্যমান রয়েছে কিংবা যারা ইতিমধ্যেই করোনারি আর্টারি রোগে ভূগছেন, তাদের ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে ওষুধের মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। করোনারি আর্টারি ডিজিজের প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো হল-উচ্চরক্তচাপ, ধূমপান, ডায়াবেটিস, রক্তে এইচডিএল কোলেস্টেরল কম থাকা, পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস, পুরুষের ক্ষেত্রে বয়স ৪৫ এর চেয়ে বেশি, মহিলাদের ক্ষেত্রে বয়স ৫৫ এর বেশি।

জীবন-যাপনে পরিবর্তন আনুন: খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়াম এ দুটি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। অতিরিক্ত ওজন থাকলে কমাতে হবে। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য-তালিকা থেকে চর্বিযুক্ত খাবার একেবারে বাদ দিতে হবে। আপনার খাদ্য-তালিকা কী হওয়া উচিত, তা আপনার চিকিৎসক এবং ডায়াটেশিয়ান এর কাছ থেকে জেনে নিন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ও অতিরিক্ত ওজন কমালে এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মতে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। জীবন-যাপন পদ্ধতি পরিবর্তনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ধূমপান ছেড়ে দেওয়া-যদি আপনি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন। ধূমপান এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডা: জামশেদ রানা মামুন।
সূত্র : ইন্টারনেট : অনুবাদ ও গ্রন্থনা

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারী ০৬, ২০১০
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection