আমাদের এই দেহ বিধাতার এক অপূর্ব দান। এটাকে যেন কখনই আমাদের অজ্ঞতায় বা অত্যাচারে নষ্ট না করি। যখন আমাদের ভালবাসা গভীর হয় তখন আমরা চাই হৃদয় দিয়ে ভালবাসতে। আমরা বলি আমাদের সকল সুখ-দুঃখ, ব্যথা, বেদনা সবই আমাদের বুকের মধ্যে জমা হয়ে আছে। এমনকি যারা অতি প্রেমিক তারা প্রয়োজনে বুক চিরে পর্যন- ভালবাসার প্রমাণ দিতে প্রস্তুত হন। কিন্তু আসলে আমরা কি জানি ভালবাসা, সুখ-দুঃখ কিছুই বুকের মধ্যে থাকে না। এগুলো থাকে আমাদের মনে। কিন্তু মনটা থাকে কোথায়? তার কি কোন অসি-ত্ব আছে নাকি সেটা শুধু মনগড়া বায়বীয় বস্তু। আসলে মনের অসি-ত্ব ঠিকই আছে এবং সেটা আছে আমাদের মাথায়, ব্রেণের মধ্যে। মোটেই বুকের মধ্যে নয়।
শরীর, মন ও হার্ট অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। শরীর ভাল না থাকলে মন ভাল থাকে না, মন ভাল না থাকলে হার্ট ভাল থাকবে না। কাজেই আপনাকে এই তিনটি জিনিসই ভাল রাখতে চেষ্টা করতে হবে। শরীর ভাল রাখবার সাধারণ নিয়মগুলো আপনারা সবাই জানেন। পরিমিত আহার, নিয়মিত পরিশ্রম অথবা ব্যায়াম করা এবং পরিমিত বিশ্রাম। ৬-৭ ঘন্টা ঘুম। সকল বদ অভ্যাস ত্যাগ করা যেমন-ধূমপান এবং মদ্যপান না করা। বেশি রাত্রি না জাগা। অনর্থক উত্তেজিত না হওয়া, রাগ না করা, কোন সময়ই অতি ভোজন না করা। মন ভাল রাখতে হলে সকলের আগে দুটো জিনিস প্রয়োজন: (১) পজিটিভ থিংকিং (২) রিলাক্সড থাকতে শেখা। পজিটিভ থিংকিং এর অর্থ হলো সব সময় ভাল কিছু চিন-া করা এবং ভাল কিছু প্রত্যাশা করা। পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন মনে রাখতে হবে পৃথিবীর কোন সমস্যাই চিরস্থায়ী নয় এবং সেটা থেকে উত্তরণের একটা না একটা উপায় আছেই; প্রয়োজন শুধু সেটা খুঁজে বের করা। হতাশ হওয়া কোন সমস্যা সমাধানের উপায় নয়। আসলে আমরা মন দিয়েই বাঁচি। শরীর দিয়ে নয়। এর একটা প্রকৃষ্ট প্রমাণ মি. হকিন্স। যিনি বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃত; যদিও তার দুই পা এবং দুই হাত সম্পূর্ণভাবে প্যারালাইজড এবং এই অবস্থায়ই তিনি পৃথিবীর সব চেয়ে কঠিন বৈজ্ঞানিক বিষয়ের সমাধান বের করেছেন। আমরা যেন আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ দান আমাদের মনকে মরার আগেই মেরে না ফেলি। রিলাক্স থাকতে হলে চুপ করে বসে থেকে এটা কিছু ক্রিয়েটিভ এক্টিভিটি নিয়ে থাকতে হবে। যে কাজ নিজেকে এবং সমাজকে আনন্দ দিতে পারে সেটাই ক্রিয়েটিভ এক্টিভিটি। অন্যের ভাল করা, সেবা দান করা, নির্মল গান-বাজনা করা, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধূলা করা, সবই মনকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া নামাজ পড়া, প্রার্থনা করা ও মেডিটেশন মনকে রিলাক্স করতে সাহায্য করে। হার্ট ভাল রাখতে প্রথমে শরীর ভাল রাখার সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, ধূমপান করা, কায়িক পরিশ্রম না করা, এই সকল ক্ষতিকর অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। হার্টের ওপর যেগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব আছে যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত ওজন যেন না হতে পারে সেজন্য পাতে লবণ না খাওয়া, প্রতিদিন শাক-সবজি ও ফল খাওয়া এবং প্রতিদিন হাঁটতে হবে অথবা ব্যায়াম করতে হবে; তবেই শরীর, মন ও হার্ট ভাল থাকবে।
ডা: মো: সিরাজুল ইসলাম
যুগ্ম-মহাসচিব, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১০