গাড়িতে চেপে বসেছেন কোথাও যাবেন বলে। গাড়ি চলছে। কিছুদূর যেতেই শরীরটা কেমন কেমন লাগছে। মাথা ঘোরাচ্ছে, বমি বমি লাগছে এবং শেষে বমি হয়েও গেল। একবার নয়, একাধিকবার। বমি হয়ে যে স্বস্তি, তাও নয়। শরীরটা কেমন কেমন যেন লাগছেই লাগছে। আবারও বমি। বাস, ট্রেন, নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ, উড়োজাহাজ—যেকোনো বাহনে চড়ার পর অনেকেরই এমন অবস্থা হয়। এ সমস্যার নাম মোশান সিকনেস। গাড়ি যখন চলা শুরু করে, আর আপনার দৃষ্টি গাড়ির ভেতরে, তখন আপনার অন্তঃকর্ণ বলে, আপনিও চলছেন গাড়ির গতিতে। কারণ গাড়ি চলার সঙ্গে সঙ্গে আপনার অন্তঃকর্ণেও তরল পদার্থের নড়াচড়া হয়। সে জন্য অন্তঃকর্ণ চলার সিগন্যাল পাঠায় আপনার মস্তিষ্কে। কিন্তু আপনার চোখ বলে, না, আপনি স্থির আছেন; চলছে না কিছুই। এমন অবস্থায় আপনার ব্রেন বলে, বেচারা চোখ অথবা অন্তঃকর্ণ—দুটোর যেকোনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে। ভাবে, কোনো বিষাক্ত জিনিস খাওয়ার কারণেই এমন নেশার অবস্থা হয়েছে। সুতরাং বিষাক্ত জিনিস বের করিয়ে দিতে দে বমি করিয়ে। বমি হয়। আর বমি হওয়ার আগে হয় বমি বমি ভাব আর শরীর কেমন কেমন লাগে অবস্থা। মোশান সিকনেস পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে নিচের টিপস উপকারে লাগবে চলার পথে।
গাড়ির ভেতরে দৃষ্টি নিবদ্ধ না রেখে যত দূর সামনে দৃষ্টি যায়, তাকিয়ে থাকুন। আপনার অন্তঃকর্ণ ও চোখ তখন একই সিগন্যাল পাঠাবে মস্তিষ্কে যে গাড়ি চলছে, আপনিও চলছেন। সমস্যা হওয়ার কথা নয় তখন।
জানালার কাছে সিট নিন। জানালাটা খুলে দিন। ঠান্ডা বাতাস পরশ বোলাবে শরীরে। ভালো লাগবে।
হালকাভাবে দুই চোখ বন্ধ করে রাখুন। অথবা একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব নিয়ে আসুন।
গাড়ি চলছে। চলন্ত গাড়িতে বই, পত্রিকা পড়া থেকে বিরত থাকুন। বই পত্রিকা পড়লে দৃষ্টি স্থির থাকবে গাড়ির ভেতরে পড়ার পাতায়। চোখ বলবে, চলছে না। মস্তিষ্কের হিসাবে গড়বড় হবে।
গাড়িতে আড়াআড়ি বা যেদিকে গাড়ি চলছে সেদিকে পেছন দিয়ে বসবেন না।
যাত্রা শুরুর একটু আগে ভরপেট খাবেন না বা পান করবেন না।
কিছু ওষুধ আছে যেগুলো বমি বন্ধ করতে পারে। সিনারন, মেক্লাইজিন ইত্যাদি ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শে সেবন করতে পারেন। আদা কিংবা চুইংগাম চিবোনোতেও উপকার পাওয়া যায়।
‘গাড়িতে উঠলেই আমার বমি হবে’—এরূপ চিন্তা মনে আনবেন না। অন্য চিন্তা করুন, প্রকৃতি দেখুন, দেখবেন গাড়িতে ভ্রমণেও আপনি আছেন সুস্থ।
মো. শহীদুল্লাহ
বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৮, ২০১০