ভালোবাসার নীল চিঠি যে মনের ও শরীরের স্বাস্থ্য উন্নত করে, তা জেনেছেন বিজ্ঞানীরা।
অনুগ্রহ করে ভালোবাসার মানুষকে নিজ হাতে চিরকুটে লিখুন ভালোবাসার ছোট্ট লিপি—এ বড় ভালো শরীর ও মনের কুশলের জন্য।
শিথিল করার মতো কোনো সংগীত বাজুক লো ভলিউমে। এরপর তেমন পরিবেশে লিখতে শুরু করুন প্রেমলিপি।
দুজনে মিলে সুন্দর যেসব সময় কাটিয়েছেন, মজা করেছেন, ভাবুন এসব।
এখন প্রবেশ করছেন মনের দুয়ার দিয়ে, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচিত হবে, কৃতজ্ঞতার অনুভব হবে মনে।
ভালোবাসার অনুকূল পরিসরে থেকে নিজের মনে আনন্দ-পুলক সঞ্চারিত হবে, তা-ই কেবল নয়, সুখের সেসব স্মৃতি মনের আকাশে উঠবে একে একে আর লেখা হবে চিঠিতে, প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্ক তত নিবিড় হবে।
এই সংযোগ, এই সম্পর্ক যত গভীর হবে, মনের কুশল তত বেশি হবে। অন্তরঙ্গ সম্বন্ধ যত গভীর হবে, মনের স্থিতিস্থাপকতা তত স্থায়ী হবে। এক গ্রন্থে লিখেছেন ডা. মার্ক ওয়ালটার, ‘এই সংযোগ ও সম্বন্ধের বোধ আমাদের জীবনের গুণগত মান নির্ণয়ের চাবিকাঠি। এটি স্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবনের সঙ্গেও সরাসরি সম্পর্কিত।’
সংগীতের শক্তি
হূদয় থেকে উৎসারিত আবেগ দিয়ে যখন লিখতে শুরু করবেন, তখন পশ্চাৎপটে আপনার প্রিয় কোনো রোমান্টিক গান শুনে শুনে পুলকিত হবেন। শিথিল হবে মন।
মিউজিক থেরাপির সুফল পাবেন তখন। মনের মধ্যে একটি ইতিবাচক পরিস্থিতি স্থাপনে সংগীতের অবদান অনেক; অনেক গবেষণা আজকাল হচ্ছে এ প্রসঙ্গে। ধারণা হলো, সংগীতের প্রভাবে মগজে উৎসারিত হয় প্রীতিকর ‘এনডোরফিন’— ধ্যানচর্চাও ব্যায়ামের মতোই কাজ দেয় সংগীত শ্রবণে।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড. আব্রাহাম গোল্ডস্টাইন বলেন, ‘মগজের রসায়নকে পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সংগীত, এর প্রভাবে মগজ থেকে উৎসারিত হয় এনডোরফিন, এই রাসায়নিক মনে সঞ্চারিত করে আনন্দ ও পুলক।’
লেখার আছে সৃজনশীল ক্ষমতা। নীল চিঠি লিখতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশ করা গেল সৃজনশীলতার ভুবনে। মনের ভাবনাগুলো জটাজাল থেকে বেরিয়ে মসৃণ পথ পেল প্রকাশের, মন হলো শিথিল, স্বচ্ছ হলো মনোযোগ ও মন দুটোই। কাগজ-কলমে মেলানোর এ সুযোগে মনে হলো কুশল। মনের সব ভাবনা ও স্বপ্ন সব স্থান পেল নীল চিঠির অক্ষরে অক্ষরে। প্রেমময় লেখার এই আনন্দময় অভিজ্ঞতা লেখকের জন্যও ইতিবাচক ফল আনে। ইমোশনস অ্যান্ড ইউর হেলথ (বোডেল প্রেস, ১৯৯২) গ্রন্থে লিখেছেন ডা. ইমবিকা পাদুস, ‘উদারতার এই ছোট্ট কাজটি অনেক মূল্যবান, অনেক বড় সুফল নিয়ে তা ফিরে আসে। মনের চাপের মতো ভালোবাসারও একটি সঞ্চিত ফলাফল আছে। মনেরও আবেগের অনেক অপূর্ণতা পূরণে রোমান্স হলো শ্রেষ্ঠ দুটি উপকরণ।’
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১১, ২০১১