২০১১ সালের জানুয়ারি মাসেই প্রকাশ পেল গবেষণার ফলাফল বিশ্বখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে)।
গবেষকেরা দেখলেন, প্রতিদিন ১০ হাজার পা হাঁটলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, হ্রাস পায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।
৫৯২ জন মধ্যবয়সী অস্ট্রেলিয়ান পাঁচ বছর হাঁটাহাঁটি করে দিনে ১০ হাজার পা হাঁটার অভ্যাস করলেন। তাঁদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) কমল, তলপেটের মেদ কমল, উন্নত হলো ইনসুলিনের প্রতি দেহকোষের সংবেদনশীলতা। একই সময় অন্য দল, যাঁরা তেমন হাঁটলেন না, তাঁদের শরীরের তেমন উন্নতি হলো না।
ডায়াবেটিসের বড় বৈশিষ্ট্য হলো, ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’। যে হরমোন ইনসুলিন, শরীরকে এর রক্তের সুগারকে ব্যবহার করে শক্তিতে রূপান্তরিত করে, সেই ইনসুলিনের প্রতি দেহকোষ আর তেমন সাড়া দেয় না। পরিপুরক হিসেবে অগ্ন্যাশয় বেশি বেশি ইসুলিন তৈরি করলে এবং একসময় মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়। ফলে বাড়তি গ্লুকোজ জমতে থাকে রক্তস্রোতে। ডায়াবেটিসের সূচনা ঘটে এভাবেই।
দেহের বাড়তি ওজন কমালে বেড়ে যায় ইনসুলিন সংবেদনশীলতা, গবেষকদের পরামর্শ, বেশি বেশি হাঁটলে ওজন হ্রাস পায় শরীরের, কমে দেহের মেদ, কমে ডায়াবেটিসের অন্যান্য ঝুঁকিও।
গবেষণা শুরুর আগে তাঁদের পুরো দৈহিক পরীক্ষা করা হলো। প্রতিদিন তাঁরা কয় পা হাঁটেন তা গণনার জন্য প্রত্যেককে পেডোমিটার পরতে বলা হলো।
গবেষকেরা এঁদের ফলোআপ করলেন পাঁচ বছর, দেখলেন, প্রতিদিন তাঁরা কয় পা হাঁটেন; লক্ষ করলেন ডায়াবেটিসের ঝুঁকিগুলোও।
যাঁরা দিনে ১০ হাজার পা পর্যন্ত হাঁটতে অভ্যস্ত হলেন এবং তা ধরে রাখতে পারলেন, পাঁচ বছরে এঁদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ল তিন গুণ, যাঁরা দিনে মাত্র ৩০০০ পা হাঁটতে পারলেন, তাঁদের তুলনায়।
এর ভাবার্থ অনেক। প্রতিদিনের জীবনাচরণে শরীরচর্চা ঢোকানো, বেশি ব্যায়াম করা—এগুলোর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে ইনসুলিন সংবেদনশীলতার ওপর। আর এ ব্যাপারটি যাঁদের ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের জন্য বড় সমস্যা।
নিউইয়র্ক সিটির বাথ ইসরায়েল মেডিকেল সেন্টারে ফ্রিডম্যান ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউটে ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ডা. গেবাল্ড বার্নস্টাইন বলেন, ১০ হাজার পদক্ষেপ মানে দুই মাইল—দুই মাইল হাঁটা। যখনই হাঁটুন, যতবার হাঁটুন, দুই মাইল হাঁটতে হবে। এতে ভালো পাওয়া যাবে।
ব্যায়াম ভালো এবং চিকিৎসকেরা সব সময় বলেন রোগীদের ব্যায়াম করতে হবে বেশি বেশি। এই গবেষণায় বোঝা গেল, পাঁচ বছরে একটানা ব্যায়াম বেশ সুফলপ্রদ।
তাই পথচলা হোক স্বাস্থ্য হিতকরী ব্যায়াম।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০১১