সম্প্রতি আমেরিকায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকান জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ বাড়ছে।
ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ শতাংশের হচ্ছে কিডনি রোগ। এই জটিলতাটি গুরুতর তো বটেই, এর সঙ্গে হূদ্যন্ত্র ও রক্তনালি রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
ডায়াবেটিক কিডনি রোগ থেকে ক্রমে হয় প্রান্তিক ধাপের কিডনি রোগ, যখন রোগীকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস বা ক্ষেত্রভেদে ট্রান্সপ্লাট করে বাঁচাতে হয়।
সরকারি পরিসংখ্যান থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দেখলেন, ১৯৮৮ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ডায়াবেটিক কিডনি রোগ বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। আর যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীও বাড়ছে, তাই ডায়াবেটিক কিডনি রোগীও বাড়ছে। এমন একটি চিত্র অন্যান্য দেশেও পাওয়া সম্ভব। সংশ্লিষ্ট গবেষকদের গবেষণার বিষয় এটি। ডায়াবেটিসের উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার পরও এ চিত্রটির তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না। গত দুই দশকে এত উন্নত চিকিৎসার পরও এমন চিত্রটি আশাব্যঞ্জক হচ্ছে না বিজ্ঞানীদের কাছে। অনেক বেশি ডায়াবেটিক রোগী রক্তের সুগার কমাতে এবং কোলস্টেরল কমাতে ওষুধ নিচ্ছেন এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা কমাতে রেনিন-এনজিওটেনসিন-এলডোস্টেরোন সিসটেমরোধক ওষুধ নিচ্ছেন, যা কিডনিরও সুরক্ষা করে বলে বিশ্বাস।
অন্তত বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভালো ফলও পাওয়া যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, রক্তের গ্লুকোজ, রক্তচাপ ও ক্ষতিকর কোলস্টেরল এলডিএলের গড় মান সবই কমেছে ডায়াবেটিক রোগীদের, এমন ওষুধ খাওয়ার পর। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে কিডনি রোগের প্রভাব যে কমেছে তা নয়। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক সহ-অধ্যাপক আযান এইচ ডি বোয়ের বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম, এমন পন্থা অবলম্বন করে ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে কিডনি রোগ কমবে, কিন্তু তা তো হলো না। তাই আমাদের অন্য উপায় খুঁজতে হবে। হয়তো ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে বা নতুন উপায়ে ডায়াবেটিক কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে।’
ডায়াবেটিস চিকিৎসা এবং
ডায়াবেটিসের উন্নত চিকিৎসার পরও ডায়াবেটিক কিডনি রোগের ঘটনা কেন দমানো যাচ্ছে না তা গবেষকদের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হয়তো বা এমন হচ্ছে যে ডায়াবেটিসের সুচিকিৎসার জন্য কিডনির স্বাস্থ্য বজায় থাকছে আরও দীর্ঘকাল মাত্র, বিলম্বিত হচ্ছে কিডনি রোগ, জীবনের প্রান্তসীমা পর্যন্ত… বলেন পিটাসবার্গ গ্র্যাজুয়েট স্থল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ট্রেভর জে অর্চার্ড। আগে চিকিৎসকদের বিশ্বাস ছিল ডায়াবেটিস নিয়ে যে লোক ২৫ বছরের বেশি দিন বেঁচে কিডনি রোগে আক্রান্ত হননি, তাঁর আর কিডনি রোগ হবে না। কিন্তু সে ধারণা পালটেছে, হয়তো ২০-৩০ বছর পর্যন্ত এভাবে কিডনি রোগ ঠেকানো গেল, কিন্তু এরপর বাড়ছে কিডনি রোগ, মনে হতো আগে আর সে রোগ হবেই না।
তবে এত বছর কিডনি রোগ ঠেকানো গেল কীভাবে? রক্তের গ্লুকোজের সুনিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপের সুনিয়ন্ত্রণ ও এসিই রোধ আরও ভালো হওয়ার জন্যই এমন হয়েছে, বলেন অধ্যাপক অর্চার্ড।
গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা কিডনি রোগের দুটো সূচক পরীক্ষা করে দেখেছেন, মূত্রে আছে এলবুমিন ও জিএফআর। জিএফআর দিয়ে বোঝা যায় রক্ত থেকে বর্জ্য কিডনি কত দ্রুত সরাতে পারে। এগুলো হলো কিডনি রোগের চিহ্ন ও সূচক।
দুই দশক কাল পর্যালোচনা করে ডি বোয়ের দেখলেন, মূত্রে প্রোটিন একটু কমেছে, কিন্তু জিএফআর বা কিডনি ফ্যাংশনের অবনতি হয়েছে।
হয়তো ডায়াবেটিসের উন্নত চিকিৎসায় মূত্রে প্রোটিনের পরিমাণ কমেছে কিন্তু জিএফআরের তেমন উন্নতি হয়নি।
জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-এ সম্প্রতি প্রকাশিত এ নিবন্ধে যেসব ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা আরও ব্যাপকভাবে গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস,
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক,
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০৭, ২০১১