Author Topic: পুরুষের বিশেষ সমস্যা গাইনেকোমাস্টিয়া  (Read 5034 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
পুরুষের অস্বাভাবিক স্তন বৃদ্ধিকে গাইনেকোমাস্টিয়া বলে। কখনো কখনো এটা দুধ নিঃসরণ ঘটাতে পারে। গাইনেকোমাস্টিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক ‘গাইনি’ ও ‘মাস্টোস’ থেকে। ‘গাইনি’ শব্দের অর্থ ‘মহিলা’ এবং ‘মাস্টোস’ শব্দের অর্থ স্তন। এ অবস্থাটি নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে ও বৃদ্ধবয়সে শরীরবৃত্তীয় কারণে হতে পারে। বয়ঃসন্ধি কালে ছেলেদের এ অবস্থা সচরাচর মর্মবেদনার উদ্রেক করে, তবে অনেক ছেলের বয়ঃসন্ধিকালের বড় স্তন শারীরিক স্থূলতার কারণে হয় না, স্তনের বৃদ্ধি দু’বছরের মধ্যে ছোট হয় বা মিলিয়ে যায়।

সাধারণ গাইনেকোমাস্টিয়া কারণগুলো নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে, যদিও সাধারণভাবে সেক্স হরমোনের বৈষম্যকে এর জন্য দায়ী করা হয়। স্তন টিস্যুর বৃদ্ধির কারণেও স্তন বড় হতে পারে। অনেক সময় স্তনে অতিরিক্ত চর্বি জমলে স্তন বড় দেখায়, তবে এটা গাইনেকোমাস্টিয়া নয়। গাইনেকোমাস্টিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পুরুষের শক্ত স্তন টিস্যু গঠিত হয়। এই স্তন টিস্যু সাধারণত দেড় ইঞ্চির ছোট হয় এবং সরাসরি এটা স্তনবৃত্তের নিচে অবস্থান করে। গাইনেকোমাস্টিয়া এক পাশে বা দু’পাশেই হতে পারে। এ অবস্থা স্তনে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

শারীরবৃত্তীয় গাইনেকোমাস্টিয়া নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে বা বয়ঃসন্ধিকালের আগে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে হতে পারে। অনেক গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণ অজানা, অর্থাৎ এদের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। গাইনেকোমাস্টিয়ার কিছু নির্দিষ্ট কারণের মধ্যে রয়েছে হরমোনসহ বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ, সিরাম ইন্ট্রোজেনের বৃদ্ধি, টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন কমে যাওয়া, অ্যানড্রোজেন রিসেপ্টরের ত্রুটি, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, দীর্ঘস্থায় লিভারের রোগ, এইচআইভি এবং অন্যান্য দীর্ঘ মেয়াদি রোগ। স্পাইনাল কর্ডে আঘাতের কারণে এবং দীর্ঘদিন অভুক থাকার পর খাওয়ার পরে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে। ২৫% ক্ষেত্রে গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণ জানা যায় নি।

বয়ঃসন্ধিকালের পরবর্তী পুরুষদের বিভিন্ন ওষুধ ১০-২০% ক্ষেত্রে গাইনেকোমাস্টিয়া ঘটায়। এসব ওষুদের মধ্যে রয়েছে সিমেটিডিন, ওমিপ্রাজল, স্পাইরোনোল্যঅকটন, ইমাটিনিব মিসাইলেট, ফিনাস্টেরাইড এবং কিছু নির্দিষ্ট অ্যান্টি সাইকোটিক ওষুধ। কিছু ওষুধ সরাসরি স্তন টিস্যুর উপর কাজ করে আবার কিছু ওষুধ ডোপামিনের কাজ বন্ধ করার মাধ্যমে পিটুইটারি থেকে প্রোলাকটিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য যে, প্রোলাকটিক হলো স্তন তৈরির হরমোন। শক্তিবৃদ্ধিকারী ফুডসাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত অ্যাড্রোসটেনেডিওন ইস্ট্রোজেনের অতিরিক্ত কার্যকারিতার মাধ্যমে স্তনের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ যেমন অ্যান্টি অ্যানড্রোজেন এবং ডিএনআরএইচ অ্যানালগগুলো গাইনেকোমাস্টিয়া ঘটাতে পারে। মারিজুয়ানা গাইনেকোমাস্টিয়া একটি কারণ, অবশ্য এ নিয়ে মতভেদ আছে।

কিছু নির্দিষ্ট অন্ডকোষের টিউমার এবং হাইপারথাইরয়েডিজম রোগে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছু অ্যাড্রেনাল টিউমার অ্যান্ড্রোসটেনেডিওনের মাত্রা বাড়ায়। এই অ্যান্ড্রোসটোনডিওন অ্যারোম্যাটেজ নামক এনজাইম দ্বারা ইস্ট্রোন-এ রূপান্তরিত হয়। এই ইস্ট্রোন হলো ইস্ট্রোজেনের একটি ধরন। অন্যান্য যেসব টিউমার এইচসিজি নিঃসরণ করে, তা ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বাড়াতে পারে। লিভার সিরোসিস অসুখে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে। মোটা মানুষের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা থাকে।

পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের উৎপাদনের মাত্রা কমে গেলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে। এই টেস্টেস্টেরনের উৎপাদনের মাত্রা কমে যেতে পারে। জন্মগত বা অর্জিত অন্ডকোষের সমস্যার কারণে। হাইপোথ্যালামাস কিংবা পিটুইটারির রোগও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমাতে পারে। অ্যানাবলিক অ্যান্ড্রোজেনিক স্টেরয়েডের অপব্যবহারও একই প্রভাব ফেলে।

সাধারনত যেসব ওষুধ খেলে গাইনেকোমাস্টিয়া হয়, যদিও সেসব ওষুধ বন্ধ করলে গাইনেকোমাস্টিয়া আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। তবুও মাসে মাসে এ অবস্থা নির্মূল করতে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বের ছেলেদের কিছু হার্বাল তেল ও লোশন বারবার মাখলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে। ধারণা করা হয় যে এসব তেল বা লোশন তাদের ইস্ট্রোজেন ও অ্যান্টি অ্যান্ড্রোজেন জনিত ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে দেয়।

ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
চেম্বার : কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬, এলিফ্যান্ট রোড, (বাটা সিগন্যাল ও হাতিরপুল বাজারের সংযোগ রাস্তার মাঝামাঝি), মোবাইল : ০১৭১৬২৮৮৮৫৫।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুলাই ০৪, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection