ধূমপানে বিষপান। কিন্তু তার পরও জেনেশুনে এই বিষপান করি অনেকেই।আমরা আমাদের অভ্যেসের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না। মনে হয়, আজ থাক, কাল থেকে ছাড়ব। ভাবি, না থাক, পরশু। পরশু এলেভাবি, পরের দিন ছেড়ে দেব। তারপর সেই দিন আসে। মনে হয়,যাক না আর কয়েক দিন। সেই দিন কোনো দিনই আসে না। কিন্তু শুরুটা করতে হবে আজ থেকেই। ধূমপান নামক বিষপানের বদ-অভ্যাসটিও যায় না যতক্ষণ না কোনো জটিল রোগ বাসা বাঁধে। যাঁরা ধূমপান ছাড়তে চান তাঁদের জন্য—
আজই ছাড়ুন। এখুনি ছাড়ুন। নিজ সংকল্পে অটলথাকুন। মনে রাখবেন, ধূমপান ছাড়া আর না-ছাড়ার মধ্যেব্যবধান সিগারেটে শুধু একটিমাত্র টান।
সবার সহযোগিতা নিন। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন—সবাইকে পরিষ্কার জানিয়ে দিন, আপনি ধূমপান ছেড়েছেন। কেউ যেন আপনাকে সিগারেট অফার না করে।
সব সময়সচলথাকুন।কর্মব্যস্ত থাকুন। অলস বসে থাকবেন না। কারণ অলস সময়টাতেই ধূমপান করতে বেশিমন চাইবে।
ধূমপান ছাড়ার প্রথম কয়েক দিন আপনার কিছুটা শরীর খারাপ লাগতে পারে। খাবার হজম হচ্ছে না বা কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে—এমন লাগতে পারে। এটাকে বলা হয়উইথড্রল সিম্পটম।আপনি এসব ব্যাপারে পুরোপুরি ইতিবাচক থাকুন। এসব সাময়িক সমস্যাকে একদম পাত্তা না দিয়ে নিজ সংকল্পে অটল থাকুন।
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন। বেশির ভাগ লোককেই দেখেছি, তাঁরা মানসিক চাপ থেকে বাঁচতে ধূমপানের আশ্রয় নেন। মানসিক চাপ যখন আসবে তখন চোখ বন্ধ করে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করুন।মেডিটেশন করতে পারেন।
ধীরে ধীরে গভীরভাবে কিছুক্ষণ দম নেওয়া ও ছাড়ার অভ্যেস করুন।
আপনার নিজস্ব খরচের দিকে তাকান।ভাবুন, ধূমপান ত্যাগের ফলে প্রতিদিন কতগুলো টাকা বেঁচে যাচ্ছে। সেই টাকাগুলো গুনুন। ভাবুন, এভাবে প্রতিদিন এই পরিমাণ টাকা বেঁচে গেলে মাসে কত টাকা বাঁচছে। মাস শেষে সেই পরিমাণ টাকা দিয়েনিজের জন্য কোনো শৌখিন জিনিস কিনুন অথবা প্রিয়জনকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসুন। ধরে নিন, ধূমপান ত্যাগের জন্য এটা আপনার পুরস্কার।
মনে রাখবেন, ধূমপানমুক্ত প্রতিটি দিন আপনার স্বাস্থ্য, পরিবার ও আপনার পকেটের জন্য নিয়ে আসবে সুখবর।
ধূমপানের বিপক্ষে যুক্তি আছে হাজারটি। সপক্ষে যুক্তি নেই একটিও। অতএব, আসুন না, আমরা সবাই ধূমপান ছেড়ে গড়ে তুলি একটি মাদকমুক্ত সমাজ।
এস এম নওশের
মেডিকেল অফিসার, স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৫, ২০১০