নতুন নতুন মুখরোচক খাবার বের হচ্ছে হরহামেশাই। সমস্যা হলো, সুস্বাদু এসব খাবার কোনো রকম হিসাব-নিকাশ না কষেই গোগ্রাসে গিলছি আমরা। রাখা হচ্ছে না ক্যালরির হিসাব। হয়তো জানাও হচ্ছে না স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব কতটুকু। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অনেকেই অল্প বয়সে বাধাচ্ছে রোগব্যাধি। আর মুটিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি তো রয়েছেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে আমাদের খাবারের পাত্র দেখলে মনে হয়, ক্যালরি পরিমাপ করার জন্য ক্যালকুলেটর দরকার।
ফ্রান্সের আইএসএসইডির অধ্যাপক পিয়েরে ক্যানডন বলেন, সাধারণভাবে মানুষ তার খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে মিথ্যা বলতে চায়, যার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
তবে ক্যালরির হিসাব না করার বিষয়ে উদ্বিগ্ন সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যবিদেরা। সম্প্রতি একটি সমীক্ষার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রানসিসকো শহরের একটি রেস্টুরেন্টে ফাস্টফুড খাওয়া অবস্থায় ১২৫ জনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা যে খাবারটি খাচ্ছেন তাতে ক্যালরির পরিমাণ কত ছিল। এরপর ৪০ জন স্নাতকপড়ুয়া ছাত্রের ২০ ধরনের বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড খেতে দিয়ে বলা হয়েছিল খাদ্যে ক্যালরির পরিমাণ উল্লেখ করতে।
দুটো পর্যবেক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বয়স, শারীরিক গঠন ও জেন্ডারের ভিন্নতা থাকলেও খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে ছিল না কোনো ভিন্নতা। কারণ কেউই ক্যালরির প্রতি কোনো দৃষ্টি রাখে না। বরং দেখা যায়, যারা মোটাসোটা, তাদের খাবারের পরিমাণও বেশি। পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিচালক ড. মেডেলিন বলেন, যদি খাওয়ার পরিমাণ বেশি হয়, তখন কারও পক্ষে নিজের জন্য পরিমিত খাদ্যের পরিমাণ নির্ণয় কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, আজকাল সবাই পরিমিত খাদ্য গ্রহণ না করে বেশি পরিমাণ খাবারের দিকে ঝুঁকছে।
ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে। পাশাপাশি মুটিয়ে যাওয়ার হারও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। অথচ খাওয়ার সময় এসব চিন্তাই থাকছে না কারও। চিকিত্সকেরা বলছেন, আমাদের শরীরে প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালরি দরকার, তা পরিমাপ করে খাওয়া তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। শুধু ইচ্ছাশক্তি একটু জাগিয়ে তুললেই হয়।
পুষ্টিবিশেষজ্ঞদের মতে, বেশি বেশি খাবার খাওয়ার বদলে আমাদের উচিত পছন্দের খাবারগুলো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা, যেন ক্যালরির সঠিক হিসাব পাওয়া যায়। আবার থালায় খাবারের পরিমাণ বেশি না হলে যাঁরা খেতে চান না, তাঁদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, তাঁরা যেন খাওয়ার জন্য ছোট আকারের পাত্র ব্যবহার করেন। ফলে খাবারের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও পাত্র ছোট বলে খাবারের পরিমাণ কম বলে মনে হবে না। ডা. ফার্নস্ট্রম বলেন, ক্ষুধা লাগলে খাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে বেশি খাওয়া সম্ভব হলেও আমাদের উচিত যতটুকু সম্ভব কম খেয়ে শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরির চাহিদা মেটানো। কারণ বেশি খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং তা আপনার প্রাণশক্তিকে শুধু দুর্বলই করে দেয়।
ইয়াহু হেলথ অনলাইন অবলম্বনে
কাজী ফাহিম আহমেদ