Author Topic: শিশুর রোটা ভাইরাস সংক্রমণ  (Read 4583 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বে শিশুরা বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। ফলে এ কারণে অনেক শিশুকে অকারণেই মৃত্যুবরণ করতে হয়। অনেক কারণের মধ্যে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ার একটি প্রধান কারণ যা উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বের একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা।

রোটা ভাইরাস কি?

আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের রোগের জীবাণু এবং ভাইরাস বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যা সংক্রমিত বা ইনফেকটেড হলে আমরা এবং শিশুরা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ি। রোটা ভাইরাস হচ্ছে, রিওভাইরাইড পরিবারের একটি ভাইরাস। যা দেখতে চাকার মত। রোটা লেটিন শব্দ অর্থ হচ্ছে চাকা বা ঘদণণফ।

কিভাবে আক্রান্ত হয়ঃ

রোটা ভাইরাস মল ও মুখ গহ্বর দিয়ে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে এবং একজনের কাছ থেকে অন্যজনের দেহে প্রবেশ করে। সংক্রমিত পানি, খাবার এবং খেলনা বিভিন্ন আসবাবপত্র থেকেও আক্রান্ত হতে পারে। ইনফিউবেশন প্রিয়ড ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা অর্থাৎ রোটা ভাইরাস এ সংক্রমণ হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।

কি হয়ঃ

প্রথমে শুরু হবে বমি এরপর ধীরে ধীরে পানির মত পাতলা পায়খানা। খুব কম সময়ের মধ্যে ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং পানি শূন্যতা এত বেশি হয় যা জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দেয়। পানিশূন্যতা এত বেশি হয় যা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। যদি ঠিকমত বা সময়মত চিকিৎসা করা না হয়। এছাড়া জ্বর এবং পেটের ব্যথাও থাকতে পারে। বমি এবং জ্বর ৯দিন পর্যন্ত থাকতে পারে এবং ডায়রিয়া থাকবে ২১ দিন পর্যন্ত।

রোটা ভাইরাস বোঝার উপায়ঃ সংক্রমিত মল পরীক্ষা করলে এই ভাইরাস দেখা যায়। ইলেকট্রন মাইক্রোসকোষের সাহায্যে দেখা যাবে। এর আকৃতি চাকার মত। এছাড়া ইমিউনোএসেস করলেও পাওয়া যাবে।

চিকিৎসাঃ পানিশূন্যতা পূরণ করার জন্য ঘন ঘন খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। পানিশূন্যতা বেশি হলে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তি করে স্যালাইন দিয়ে পানিশূন্যতা পূরণ করতে হবে। ইলেকট্রলাইট বা রক্তে খনিজ লবণ কমে গেলে তা পূরণ করতে হবে। কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। রোটা ভাইরাসের জন্য কোন অ্যান্টিভাইরাস ওষুধ তৈরি হয় নাই।

প্রতিষেধকঃ

রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য দুইভাবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। প্রথমত যে সমস্ত স্থানে বা পদার্থে রোটা ভাইরাস অবস্থান করে সেগুলো পরিষ্কার করা যেমন -ডায়েপার, খেলনা, মল (পায়খানা), যে সমস্ত জায়গায় ডায়েপার বদলি করা হয় বাসায় বা ডে-কেয়ার সেন্টার, হাত পরিষ্কার করার স্থানে এমনকি খাবার তৈরি করার স্থানেও এই ভাইরাস পাওয়া যায় এবং অনেক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এ সমস্ত স্থান ও খেলনাগুলো প্রতিদিন এন্টিসেপ্টিক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। এন্টিসেপ্টিক সাবান দ্বারা হাত এবং মলদ্বার পরিষ্কার করা উচিত।

দ্বিতীয়তঃ টিকা দ্বারা রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে দূরে থাকা যায়। বর্তমানে প্রতিষেধক হিসাবে রোটা ভাইরাস-এর টিকা আবিষ্কার হয়েছে।

কখন দিবেনঃ

রোটা ভাইরাসের টিকা দিতে হবে ১ত(১,২) মাস থেকে ৬ মাসের মধ্যে। এই টিকা মুখে খাওয়ানো হয়। প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ ১ মাস পর দিতে হয়। এই টিকা দিলে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হবে না। শিশু ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু থেকে রক্ষা পাবে এবং পেটে ক্ষুদ্রাতন্ত্রের অবস্ট্রাকশন অর্ভল্র্রল্রডণর্যধমভ থেকে মুক্ত থাকবে। যা শিশুদের জীবন হুমকির মুখে পতিত হয়। সুতরাং সোনামণিদের জীবন রক্ষার্থে তাদের পরিচর্যা করি। রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে সময়মত টিকা দিয়ে আপনার আমার আদরের সন্তানকে ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করি। অকালে যেন হারাতে না হয় সোনামণিকে।

——————————————–
০ ডাঃ মোঃ মুজিবুর রহমান মামুন,
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালটেন্ট
নিবেদিতা শিশু হাসপাতাল লিঃ
ওয়ারী, ঢাকা।
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৯ মার্চ ২০০৮
« Last Edit: January 12, 2012, 07:32:21 AM by bbasujon »
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection