শৈশবে আনন্দহীন আর বঞ্চনায় থাকার সঙ্গে বড় হয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ ও কর্মহীন থাকার একটা যোগসূত্র সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। লন্ডন কিংস কলেজের একদল গবেষক ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রায় সাত হাজার ১০০ জনের এ-সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁরা দেখেছেন, স্কুলের শিক্ষকেরা যেসব শিশুকে ‘অসুখী ও দুর্দশাগ্রস্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, মধ্যবয়সে তাদের অসুস্থ হয়ে থাকার ঝুঁকি পাঁচ গুণ বেশি। গবেষণায় যুক্তরাজ্যের এবার ডিনে পঞ্চাশের দশকে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
ওইসব শিশুর মনমেজাজ এবং স্কুলে উপস্থিতির হার সম্পর্কে তাদের শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করা হয়। এরপর গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা এখন মধ্যবয়সী, তাঁরা কে কী করছেন, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার কারণে কাজ করতে পারছেন না।
এদের এক-চতুর্থাংশ সম্পর্কে শিক্ষকেরা বলেছিলেন, তারা প্রায়ই প্রচণ্ড মনখারাপ ও কান্নাভেজা চোখে স্কুলে আসত। প্রধান গবেষক ড· ম্যাক্স হেন্ডারসন বলেন, ‘আমরা এটা হয়তো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে শৈশবে এ ধরনের প্রবণতাই পরবর্তী জীবনে তাদের অসুস্থতার জন্য দায়ী।’
তবে এ দুটোর মধ্যে অবশ্যই একটা সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফল বিবেচনায় ধারণা করা যায়, এ ধরনের লোক হতাশা ও উদ্বেগপ্রবণ-কর্মহীন থাকার যা একটি প্রধান কারণ। ইউকে ফ্যাকাল্টি অব পাবলিক হেলথের সভাপতি ড· মারয়ন ডেভিস বলেন, এ গবেষণায় একটি সাধারণ সামাজিক চিত্রও উঠে এসেছে। তা হলো, যেসব শিশুর জীবনে আনন্দ থাকে না এবং স্কুলে যেতে আগ্রহ কম থাকে, সাধারণত তাদের অভিভাবকেরাই শিশুদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী হন না এবং পরিবারেও ওই সব শিশু নানা দিক দিয়ে বঞ্চিত হয়।
-বিবিসি হেলথ অনলাইন অবলম্বনে কাজী ফাহিম আহমেদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৯, ২০০৯