বয়স মাত্র এক থেকে তিন বছরের মধ্যে। কিন্তু ভাবলে অবাক হবেন, এই শিশুই নিজেকে নিজে পৃথিবীর রাজা-বাদশা মনে করে। খুব স্বাধীনচেতা মনোভাব থাকে এ সময় অল্প বয়সী এসব শিশুর মধ্যে। এ কারণে এটা তাদের কাছে খুব দুঃসহ মনে হয়, যখন সে যা করতে চায়, তাতে যখন তার মা-বাবা বাধা দেন, নিষেধ করেন কিংবা ওখান থেকে তাকে নিয়ে আসেন। মা-বাবার বা অভিভাবকদের এ রকম উদ্ভট আচরণের কোনো মানে বুঝতে পারে না সে। তার চেয়েও বড় কথা হলো, তার এমন কোনো ভাষাশক্তি বা শব্দ ব্যবহারের ক্ষমতা নেই, যাতে করে সে এমন বাধাদানের কারণে তার মধ্যে যে বিপুল কষ্ট জমা হয়ে আছে, তা জনে জনে সবাইকে বলে বোঝাতে পারছে না—মনের ক্ষোভ উপশমের কোনো পথও পাচ্ছে না।
স্বাধীনচেতা মনোভাব: শিশুর বয়স দুই বছরের সময় নিজে নিজে সবকিছু করা, ‘সব কাজে হাত লাগাই মোরা, সব কাজে’ এ রকম বাসনা বেশি বেশি দানা বাঁধে এবং এই যে স্বনির্ভরতার সঙ্গে করতে চাওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছা, তৃষ্ণা তার মধ্যে হতাশাও তেরি করে। তবে সামান্য মাত্রার হতাশা তাকে কিছুটা জ্ঞান ও শিক্ষা দান করে। কিন্তু অতিরিক্ত হতাশা তার কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। মাত্রাতিরিক্ত মনোবেদনায় সে টেনশনে ভোগে। অতপর, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। কেঁদে ওঠে। কান্নার সঙ্গে রুদ্রমূর্তিও প্রদর্শন করে।
স্বাভাবিক বিকাশ ধর্ম: মনে রাখা উচিত, এ রকমভাবে শিশুর রেগে যাওয়া এবং হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে থাকা স্বাভাবিক বিষয়। বিশেষত, যখন কোনো কিছু নিয়ে সে বনিবনায় পৌঁছাতে পারছে না, ঠিক এসব সংকট মুহূর্তে মা-বাবা বা শিশুকে যিনি লালন-পালন করছেন, তিনি বেশি রকমের হতাশা থেকে শিশুকে রক্ষা করতে পারেন। এখানে এরূপ কিছু নির্দেশনা থাকল।
মা-বাবার করণীয় বিষয়
শিশুকে যখন কোনো কিছুর জন্য অনুরোধ করছেন, তখন বন্ধুত্বের ভাষায় কথা বলুন সুমিষ্ট স্বরে। যেন তাকে আপনি ‘আমন্ত্রিত অতিথি আপ্যায়নের বাক্মাধুর্যে বশীভূত করবেন। কোনোরূপ আদেশ বর্ষণের মাধ্যমে নয়।
যখন সে কোনো নির্দেশ বা অনুরোধ পালনে ‘না’ পিলার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন বেশি মাত্রায় প্রতিক্রিয়া জানাবেন না। বরং বারবার তাকে শান্ত, নরম ও স্পষ্ট উচ্চারণে তার বক্তব্যের জবাব দিন।
যখনই প্রয়োজন বা সম্ভব তার কাছে সীমিতসংখ্যক প্রস্তাব রাখুন। অসীম বায়না মেটানোর তালিকা তুলে না ধরা ভালো।
যেসব পরিস্থিতিতে সে আগে রেগে আগুন হয়ে যেত, সেরূপ অস্বস্তিকর অবস্থা যেন আবারও না ঘটে, ওভাবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিন। ছোটখাটো ও তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ওর সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদে না যাওয়াই ভালো।
প্রণব কুমার চৌধুরী শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৪, ২০১০