Author Topic: কিশোর-কিশোরীদের চাই সঠিক পুষ্টি  (Read 3628 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য রক্ষা, তাদের দেহ গঠন-বৃদ্ধির বিকাশ ইত্যাদির জন্য খাবারের মান সঠিক হওয়া চাই। তা না হলে তারা সহজেই অপুষ্টির শিকার হবে। ফলে বৃদ্ধি ব্যাহত ও পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগী এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।
কিশোর-কিশোরীদের খাদ্য এমন হতে হবে, যাতে তাদের দেহের বৃদ্ধি, গঠন, ক্ষয়পূরণ, কর্ম ও মননশক্তির বিকাশ হতে পারে। দেখা যায়, প্রতিদিনের খাবারে পুষ্টির উপাদানের অভাবই শিশুদের অপুষ্টির দিকে ঠেলে দেয়। আসলে পেট ভরলেই পুষ্টি পূরণ হয় না। তাহলে তো একই খাবার দিয়ে সারা দিনের খাবার সম্পন্ন করা হতো। আবার অপুষ্টি মানে অনাহার বা অর্ধাহার নয়, অসম পুষ্টিই অপুষ্টি ঘটায়। ভরপেট খেয়েও প্রোটিনের নিরন্তর ও দীর্ঘ ঘাটতি হলে শিশু লম্বায় বাড়বে না, শরীর হবে অগঠিত ও রুগ্ণ। আবার প্রোটিনের অভাবে কোয়াশিয়রকর ও ম্যারাসমাস রোগ হতে পারে। শর্করা ও স্নেহের অভাবে ঘাটতি পড়বে শক্তির, ওজন বাড়বে না। দেহ হবে দুর্বল। ভিটামিনের অভাবে হতে পারে রাতকানা রোগ, ঠোঁটের কোনায় ও জিভে ঘা, বেরিবেরি, রিকেট, স্কার্ভি, চর্মরোগ ইত্যাদি। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাবে হাড় ও দাঁতের গঠন ঠিকমতো হবে না। লৌহের অভাবে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা ও আয়োডিনের অভাবে হবে গলগণ্ড রোগ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুলের ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় হিমোগ্লোবিন ও ভিটামিনের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। দেখা যায়, স্কুলের গেটে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে ঝাল-মসলার নানা রকমের আচার, আইসক্রিম, কোমল পানীয়ের বিক্রেতারা, যারা অস্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিমানহীন বিভিন্ন খাবার বিক্রি করে। দেখা যায়, ছেলেমেয়েরা টিফিন ফেলে সেসব খাবারের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হয়।
যেহেতু খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে শৈশব ও বাল্য বয়স থেকে, এ কারণে স্কুলের পাঠ্যে স্বাস্থ্য ও জীববিজ্ঞানের সঙ্গে পুষ্টিবিজ্ঞানও আবশ্যিক হওয়া উচিত। কিশোর-কিশোরীরা খাওয়াদাওয়ায় ধীরস্থির নয়। এ জন্য তাদের পুষ্টিগুণসম্পন্ন টিফিন দেওয়া উচিত। টিফিন দেওয়ার সময় কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে—
১. মিশ্র প্রোটিন থাকবে—দৈহিক চাহিদা, বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণের জন্য ২. উপযুক্ত ক্যালরি—ছোটাছুটি ও পড়াশোনা করার শক্তির জন্য ৩. খনিজ লবণ ও ভিটামিন থাকতে হবে—হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য।
কিশোর-কিশোরীরা অনেক সময় ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, এ সময় অত্যধিক পড়ার চাপ, খেলাধুলা, গান-নাচ, অভিনয়, মডেলিং ইত্যাদির সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়ে। সময়ের অভাব অথবা স্লিম থাকার ইচ্ছা থেকেও তাদের মধ্যে না খেয়ে থাকার প্রবণতা দেখা যায়। অনেক সময় এর উল্টোটিও হতে দেখা যায়। বাড়ির খাবারের চেয়ে বাইরের খাবারের প্রতি তাদের আকর্ষণ থাকে। পাশ্চাত্যের অনুকরণে আমাদের দেশেও প্রচুর ফাস্টফুড অথবা জাঙ্কফুডের দোকান গড়ে উঠছে। এর ক্রমবর্ধমান প্রতিষ্ঠা স্কুলের ছেলেমেয়েদের মেদবহুল করে তুলছে। এদের ওজনের হিসাব অনুযায়ী দুই ভাগ করা যায়। ১. কাঙ্ক্ষিত ওজনের চেয়ে বেশি। ২. কাঙ্ক্ষিত ওজনের চেয়ে কম। ওজন বেশি—বর্তমানে প্রতিটি পরিবারে সন্তানসংখ্যা কম। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারে। স্নেহের বশবর্তী হয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানদের বেশি বেশি খাওয়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। ফলে তিন বছর বয়সের শিশুর ওজন হয় ২৮ কেজি, ছয় বছরের ৪৯ কেজি, সাত বছরের ৬৭ কেজি; যেখানে তিন বছরের শিশুর ওজন হওয়া উচিত ১৪ দশমিক ৮ কেজি, ছয় বছরের ২০ দশমিক ৯ কেজি এবং সাত বছরের শিশুর ওজন হওয়া উচিত ২৩ কেজি।
খেলার মাঠের অভাব
স্কুল-কলেজসহ সব স্থানেই খেলার মাঠের অভাব রয়েছে। টিফিন পিরিয়ডে খেলা তো দূরে থাক, ছেলেমেয়েরা একটু হাঁটার জায়গাও পায় না। ফলে স্কুলে-বাড়িতে সব সময় তারা পড়াশোনা-টিভি-ভিডিও গেমস ইত্যাদি নিয়ে সময় কাটায়। অর্থাত্ তাদের কোনো শারীরিক কার্যক্রিয়া নেই। এ জন্য হারিয়ে যেতে বসেছে দাঁড়িয়াবান্ধা, হাডুডু, গোল্লাছুট, কানামাছি, এক্কা-দোক্কা, ডাংগুলি, সাতচাড়া, মার্বেল ইত্যাদি খেলা। অত্যধিক খাওয়া, ক্যালরি খরচ না হওয়াই মেদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

যানবাহনের ব্যবহার
হেঁটে স্কুলে যাওয়ার দিন আর নেই। গাড়ি, বাস অথবা রিকশায় আজকাল সবাই যাতায়াত করে। ফলে কোনো ক্যালরি খরচ হয় না। পরিবেশ, পরিস্থিতি, যুগের পরিবর্তন কিশোর-কিশোরীদের অকর্মণ্য ও মেদবহুল করে তুলছে।

কম ওজন
দারিদ্র্য ও অজ্ঞতা—যেখানে খাদ্যদ্রব্য কেনার সামর্থ্য নেই, সেখানে অপুষ্টি থাকবেই। আবার পুষ্টি ও খাদ্যচাহিদার জ্ঞানের অভাবেও কিশোর-কিশোরীদের ওজন কম হয়ে থাকে।
অরুচি—দিনের পর দিন একই ধরনের খাবার অথবা অপছন্দনীয় খাবার তাদের সামনে দিলে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে খাবারের প্রতি তারা আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে।
ব্যস্ততা—এমন অনেক মা-বাবা আছেন, যাঁরা ব্যস্ততার জন্য অথবা সচেতনতার অভাবে ছেলেমেয়েদের খাবারের ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। সে ক্ষেত্রে অভিমান করেও বাচ্চারা খেতে চায় না।
সময়—ঘড়ির কাঁটা ধরে এ বয়সের বাচ্চাদের খেতে দেওয়া ঠিক নয়। প্রতিদিন একই সময়ে খিদে পাবে, এটাও ঠিক নয়। আবার ক্ষুধা লাগলে খেতে না দিয়ে সময় হলে খেতে দেবে, সেটাও ঠিক নয়। এতে খাবারের ইচ্ছাটা চলে যায়। এদিকে সময়ের অভাবে অনেকে খেতে পারে না বলে অভিযোগ আসে। যেমন, সকালে তাড়াহুড়ো করে স্কুলে যাওয়া, ছুটির পর সামান্য খেলাধুলা, তারপর প্রাইভেট টিউটরের কাছে যাওয়া ইত্যাদি কারণে তারা খেতে পারে না। এ ব্যাপারে অভিভাবকেরাই খাবারের সময় নির্ধারণ করে দেবেন। এসব কারণে সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরাও চরম অপুষ্টির শিকার হয়। সুতরাং ওজন বেশি বা কম প্রতিটি পরিবারের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করছে।
কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি ঠিকমতো হচ্ছে কি না মাঝেমধ্যে তাদের ওজন নিয়ে দেখতে হবে। কোনো সংক্রামক ব্যাধি না থাকলে তারা ওজন ও উচ্চতায় ঠিকই বাড়বে। তারা ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত ও পড়ালেখায় অমনোযোগী হলে বুঝতে হবে, তাদের খাদ্যে উপযুক্ত ক্যালরি, প্রোটিন, শাকসবজি ও ফলমূলের অভাব রয়েছে।

আখতারুন নাহার আলো
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৩, ২০১০
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection