Author Topic: এক বিশ্ব এক ঘর এক হৃদযন্ত্র  (Read 2794 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ঘাতক রোগ যে হৃদযন্ত্রের রোগ, তা এখন বলছেন বিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞজনেরা। প্রতিবছর এক কোটি ৭৩ লাখ লোকের প্রাণ হরণের কারণ হলো হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ।
হৃদযন্ত্রের রোগ ও স্ট্রোক—দুটিই ঘাতক রোগ। ঝুঁকিগুলো হলো—উচ্চ রক্তচাপ, উঁচুমান কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজ, ধূমপান, ফল ও শাকসবজি কম খাওয়া, শরীরের বেশি ওজন এবং শরীরচর্চা না করা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোও।
এবার ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন মিলে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। ১০০টির বেশি দেশে তা পালিত হবে বলে ধারণা।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা, হাঁটার কর্মসূচি, দৌড় ও ফিটনেস সেশন, আলোচনা ও টক শো, মঞ্চাভিনয়, বৈজ্ঞানিক সম্মেলন, প্রদর্শনী, কনসার্ট, খেলাধুলা—এসব অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে এই দিবসকে ঘিরে।
বিশ্ব হার্ট দিবসের থিম হবে—এক বিশ্ব, এক ঘর ও এক হৃদয়।
পৃথিবীজুড়ে বাড়ছে অসংক্রামক রোগ। হৃদযন্ত্রের রোগ এগুলোর মধ্যে প্রধান। এবার সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো এ নিয়ে আয়োজন করছে উচ্চপর্যায়ের সভা। প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আমাদের ঘরকে কী করে হৃদবান্ধব করা যায় তা জানা।
নিজের ও পরিবারের অন্যদের হৃদেরাগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কী করে কমানো যায়, তা জানাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

‘এক বিশ্ব, এক ঘর ও এক হৃদয়’—এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে এসব বিষয় জোরেশোরে আলোচিত হবে।
বিশ্ব হার্ট দিবসের সূচনা হয়েছিল ২০০০ সালে, বিশ্বজুড়ে লোকদের জানানোর উদ্দেশ্যে, হৃদেরাগ ও স্ট্রোক হলো প্রধান ঘাতক রোগ।
সদস্যদের সঙ্গে মিলে বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন এ তথ্য প্রচারে উদ্যোগী যে হৃদেরাগ ও স্ট্রোকের ৮০ শতাংশ অকালমৃত্যু ঠেকানো যায়। প্রয়োজন প্রধান ঝুঁকিগুলো এড়ানো—ধূমপান ও তামাক গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও শরীরচর্চা না করা হলো মূল ঝুঁকি। এগুলো পরিহার করা, নিয়ন্ত্রণ করাই শ্রেয় আমাদের সবার জন্য।
প্রতিবছর এ জন্য পালিত হয় বিশ্বজুড়ে বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশ্বজুড়ে যত লোকের মৃত্যু হয় প্রতিবছর, এর ২৯ শতাংশ ঘটে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগের জন্য। তাই এটি হয়ে উঠেছে প্রধান ঘাতক রোগ।
বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা তাই অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি, যেমন—ক্যানসার, ক্রনিক শ্বাসযন্ত্রের রোগ ও ডায়াবেটিসের সঙ্গে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছেন। এর গুরুত্ব বিবেচনা করে সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো অসংক্রামক ব্যাধির ওপর উচ্চপর্যায়ের সভা আহ্বান করেছে।
তবে এ কথা ঠিক, কেবল সভা-সম্মেলন করে এবং নীতিনির্ধারক ও বিশ্বনেতাদের উদ্যোগেই এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়যুক্ত হওয়া যায় না। পৃথিবীর প্রতিটি লোক ব্যক্তিপর্যায়ে হৃদেরাগের এ বড় বোঝাকে লঘু করার জন্য এ অভিযানে যোগ দেবেন, আর এ জন্য প্রত্যেকে জানবেন হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকিহ্রাসের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
পারিবারিক কাজকর্মের কেন্দ্রস্থল গৃহ। প্রত্যেক লোকের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু নিজের গৃহকোণ। হূত্স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজ শুরু হয় এখানেই। এ জন্যই এ বছর বিশ্ব হার্ট দিবসে, বিশ্ব হর্ট ফেডারেশন ও সদস্য সংস্থাগুলো সব প্রচেষ্টার কেন্দ্র করেছে গৃহকোণকে। নিজ ঘরে পরিবারের সদস্যরা হিতকরী কিছু আচরণে অভ্যস্ত হলে জগত্জুড়ে মানুষ হার্টের রোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে পাবেন পরিপূর্ণ দীর্ঘ জীবন।
এ বছর তাই বিশ্ব হার্ট দিবসে বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন পরিবারের হূত্স্বাস্থ্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে বলছে। এ জন্য কিছু কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
১. ঘরে ধূমপান নিষিদ্ধ করুন। নিজের ও শিশুদের হৃদস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ঘরে ধূমপান বন্ধ করুন। আসলে যেকোনো স্থানই হোক, ধূমপান বর্জন করা অবশ্যকর্তব্য। (প্রতিটি সিগারেট জ্বালানোর জন্য জরিমানা দিতে হবে—এমন বিধি করা ভালো।)
২. ঘরে থাকবে স্বাস্থ্যকর খাবার। দিন শুরু হোক এক টুকরো ফল খেয়ে। দুপুরের খাবার তৈরি করুন নিজ ঘরে, যাতে খাবার হয় স্বাস্থ্যকর। নিশ্চিত করুন যে প্রতিদিন সন্ধ্যার খাবারে থাকবে প্রতিজনের জন্য সবজি।
৩. সক্রিয় হন। টিভি দেখার সময় দুই ঘণ্টার কম করা উচিত। পরিবারের সদস্যদের জন্য নানা ধরনের শরীরচর্চার আয়োজন করা উচিত, যেমন—সাইকেল চালানো, বেড়ানো, খেলাধুলা। যখন সম্ভব, মোটরগাড়ি না চড়ে সাইকেলে চলুন বা বাড়ি থেকে হেঁটে যান গন্তব্যে।
৪. জানুন নিজের সংখ্যাগুলো: একজন চিকিত্সকের কাছে গিয়ে জেনে নিন নিজের রক্তচাপ মান, গ্লুকোজ মান এবং কোমর; নিতম্ব অনুপাত ও বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স)। হৃদেরাগের সার্বিক ঝুঁকি থেকে থাকলে এবং তা জেনে নিলে হৃদস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা যায়।

একটি হৃদয়
আগেই বলেছি, প্রতিবছর এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারায় হৃদেরাগে। আর ৮২ শতাংশ মৃত্যু ঘটে নিম্ন আয় ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে।
বাংলাদেশেও হৃদেরাগের চিত্র উল্লেখযোগ্য। প্রাপ্তবয়স্কদের ১৫ শতাংশ ভুগছে হৃদেরাগে। সাধারণ মানুষ হৃদেরাগ চিকিত্সার পুরোপুরি আওতায় নেই। ২০১০ সালে স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনে দেখা যায়, হৃদেরাগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে।
স্বাস্থ্য বুলেটিন ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে হৃদেরাগে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। এসব দেশে হৃদেরাগীর সংখ্যা বৃদ্ধি দুঃখের ব্যাপার। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম ও ধূমপান বর্জন করলে অধিকাংশ মৃত্যুই এড়ানো সম্ভব।
তবে সব ধরনের হৃদেরাগ যে প্রতিরোধযোগ্য, তা-ও নয়। ঘরে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঘটনা ঘটলে কী করা উচিত তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের কোনো সদস্যের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়েছে সন্দেহ হলে অবিলম্বে চিকিত্সা-সহায়তা চাইতে হবে।
৭০ শতাংশেরও বেশি কার্ডিয়াক বা শ্বাসযন্ত্রের রোগের ইমার্জেন্সি ঘটে নিজ ঘরে, যখন আক্রান্ত রোগীকে সাহায্য করার মতো আত্মীয়স্বজন উপস্থিত থাকেন।

জানা ভালো হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো
০ বুকে অস্বস্তি: বুকের মাঝখানে দুটি স্তনের মধ্যে বা উরঃফলকের পেছনে মোচড় দিয়ে ব্যথা।
০ অস্বস্তি বা ব্যথা বুক থেকে ছড়িয়ে যায় দেহের অন্যত্র, দুই বাহুতে বা পিঠে, ঘাড়ে, চোয়ালে বা পেটে।
০ শ্বাসকষ্ট, অথচ বুকে অস্বস্তি নেই।
অন্য আরও লক্ষণ: দুর্বলতা বা ক্লান্তিবোধ, যার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। বদহজম বা পেটে গ্যাস হওয়ার মতো অনুভূতি, ঠান্ডা ঘাম বের হওয়া। বমি ভাব, মাথা হালকা হয়ে যাওয়া বা মূর্ছা যাওয়া।

স্ট্রোকের সতর্কসংকেত
০ মুখমণ্ডল, বাহু বা পায়ে হঠাত্ দুর্বলতা, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শরীরের এক পাশে।
০ হঠাত্ বিহ্বলতা, কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা ও জড়তা।
০ হঠাত্ এক চোখে বা দুই চোখে দেখতে সমস্যা।
০ হঠাত্ হাঁটতে অসুবিধা, মাথা ঝিমঝিম, ভারসাম্যহানি, টলমল অবস্থা।
০ হঠাত্ প্রচণ্ড মাথা ধরা, অকারণে।
এমন সব লক্ষণ দেখলে ডাকুন ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুলেন্স। যাবেন জরুরি বিভাগে। চটজলদি।

হৃদযন্ত্রের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি
০ উচ্চ রক্তচাপ
০ শরীর ভারী হয়ে যাওয়া
০ রক্তে উচ্চমান কোলেস্টেরল
০ ধূমপান বা তামাকের অভ্যাস
০ শরীরচর্চার অভাব
০ ডায়াবেটিস

এবার আরও বলা হচ্ছে, রেড অ্যালার্ট নারীদের হৃদস্বাস্থ্যের ব্যাপারে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ৩১ লাখ নারীর মৃত্যু হয় হৃদেরাগ ও স্ট্রোকে।
সব ধরনের ক্যানসার, যক্ষ্মা, এইচআইভি/এইডস এবং ম্যালেরিয়ায় একত্রে যত নারী মারা যান, তার চেয়ে বেশি নারী মারা যান হৃদরোগ ও স্ট্রোকে। অথচ বেশির ভাগ হৃদেরাগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য।
তাই বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন এই লাল সংকেত দিয়েছে নারীদের জন্য, তাঁরা যেন হৃদেরাগ সম্পর্কে আরও অবহিত হন, ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানেন হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের, পদক্ষেপ নেন একে প্রতিরোধে এবং অর্জন করেন সজীব, হূত্সুখকর জীবন।
হৃদয় ও হৃদপিণ্ড নিয়ে বড় অবহেলা নারীদের। নারীদের হৃদয় ও হৃদপিণ্ড নিয়ে অবহেলা চিকিত্সকদেরও। এ বড় অন্যায়।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১১
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection