Daffodil Computers Ltd.

E-Health / Protect Your Health => For All / Others => Topic started by: bbasujon on January 16, 2012, 08:03:45 PM

Title: কাঁদলে বুক হালকা হয়
Post by: bbasujon on January 16, 2012, 08:03:45 PM
মনের আবেগ অনেক সময় প্রকাশ পায় কান্নায়। এটি মানুষের স্বভাবজাত। কত জটিল, কত বিচিত্র চিন্তাভাবনার হাওয়ায় দোলে আমাদের মন। সুখ, দুঃখ, হতাশা, ভয়-এসব আমাদের আচ্ছন্ন করে, কখনো কান্না আসে। তবে আমরা সবাই একভাবে কাঁদি না বা এক কারণে কাঁদি না। কোমল ফুলশরের ছোঁয়ায় কারও চোখ করে ছলছল, নামে ধারাজল।
কেউ অনেক বড় ব্যথা-বেদনা বা বিয়োগান্ত ঘটনাতেও হয়ে যান পাথর, চোখে কান্না যেন শুকিয়ে যায়। কান্নার পেছনে এ আবেগ, এ তাড়নাকে অনেক সময় বোঝা বেশ কঠিন। আর এর পেছনে মনোগত ও বিবর্তনজাত কারণ বোঝা আরও বেশি কঠিন।
হরমোন তীব্র বেগে বহে শরীরে। এভাবে জমা হলে শরীর থেকে এদের বেরিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, আর কান্নার ধারায় হয় এর উৎসার।
কেঁদে বুক হালকা করি, কেবল কথার কথা নয়। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকেই বলেছেন, এক পশলা কান্নার পর মন ভালো হয়েছে। চাপের কারণে প্রবল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা, বেড়ে যাওয়া হৃৎস্পন্দন নিয়েই, অনেকেরই প্রবল কান্নার পর মন অনেক শান্ত হলো, শিথিল হলো শরীর-মন, যারা কেঁদে বুক ভাসায়নি তাদের সঙ্গে তুলনা করে এমন ফল পেলেন গবেষকেরা। যারা কান্নার সময় বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়ের সাহায্য ও সঙ্গ পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সুফল এসেছে বেশি।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চাপ ব্যথা-বেদনা বা আবেগে যাদের চোখে অশ্রু ঝরে, এদের স্বাস্থ্য, যারা কান্না করে না এদের চেয়ে অনেক ভালো। সবাই জানে, আবেগ মনে চেপে রাখলে চাপ বাড়ে, এ থেকে হয় মাথাধরা, হৃদরোগ, বিষণ্নতা, কেশহানি, আরও অনেক অসুখ।
চাপ হালকা করতে কান্না আসা শরীরের সুরক্ষা-প্রক্রিয়া তো বটেই।
তবু কেউ ফুলের ঘায়ে কেঁদে ফেলে বা অনেকে যেন কাঁদে না, কাঁদতে ভুলে যায়, কেন? পূর্ণবয়স্ক হতে হতে প্রতিবছর নারীরা গড়ে যদি ৬৪ বার কেঁদে ফেলে, তাহলে পুরুষেরা কাঁদে মাত্র ১৭ বার। এও হরমোনের কারণে। বিশেষ করে প্রোলাকটিন হরমোনের জন্য, যা সরাসরি প্রভাবিত করে বয়ঃসন্ধিকাল, স্তন্যদান ও প্রসবকালকে। পুরুষের চেয়ে এ হরমোন ৬০ শতাংশ বেশি রয়েছে নারীদের মধ্যে। ডা· উইলিয়াম ফ্রে তাঁর ক্রায়িংঃ দ্য মিসট্রি অব টিয়ারস গ্রন্থে বলেছেন, প্রোলাকটিন ও অন্তঃস্রাবী তন্ত্রের সঙ্গে এর পরস্পর সম্পর্কের জন্য হয়তো পুরুষের চেয়ে মেয়েদের আবেগ প্রবণতা বেশি। স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছেলে ও মেয়েরা কাঁদে একই হারে। তবে এরপর ছেলেরা কাঁদে কম মেয়েদের চেয়ে। এর কারণ কি সামাজিক চাপ, নাকি হরমোন নারীকে বয়ঃসন্ধির পর বেশি কাঁদতে বাধ্য করে, তা অবশ্য জানা যায়নি। আবার মজার ব্যাপার হলো, বুড়ো বয়সে পুরুষ ও নারীর হরমোনে সমতা আসার পর মেয়েরা কাঁদে কম, পুরুষদের কান্না বাড়ে!
বিবর্তনের মধ্যে কী আছে এর সূত্র?
এমন হতে পারে কি, বিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতেই নারীরা বেশি কাঁদার জন্য প্রোগামড্‌? উত্তর জানি না। মানুষের ভাববিনিময়ের প্রথম রূপ হলো কান্না। জীবনের প্রথম কয়েক মাস, শিশুরা আবেগে কাঁদে কদাচিৎ, পৃথিবীতে তার অসহায়তা ও ভঙ্গুরতাকে পরিচর্যাকারীর কাছে তুলে ধরার জন্য প্রকৃতপক্ষে একটি সামাজিক সংকেত হিসেবে আসে কান্না।
আরলিংটনে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, মেয়েরা পুরুষের সঙ্গে যুক্তি-তর্কের সময় যখন কাঁদে, তখন দ্বন্দ্বের একটি সমাধানের পথেই তারা অগ্রসর হয়। যুক্তি-তর্কে যখন মেয়েরা কাঁদে না, দ্বন্দ্ব তখন বাড়ে।
এতে মনে হয়, কান্না হলো একটি মূল্যবান কৌশল, যা জানান দেয়, যে ব্যক্তি কাঁদে তার প্রয়োজন হয় নজর ও সহযোগিতা। যারা কাঁদে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তারা হয়তো কালক্রমে জেনেছে, যা চাহিদা, একে পাওয়ার জন্য একটি সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি হলো কান্না। তবে উচ্চ স্বরে ও দীর্ঘ সময় কান্না নজর পাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ কৌশল নয়। অনেক বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীর ধারণা, কান্না সত্যিকারের না হলে এটি কার্যকর হয় না।
বেশি বেশি কান্না করে নাম হয়ে যায় ‘কাঁদুনে’। তখন এতে সাড়া দেয় না লোকে। ‘কাঁদুনে’ বলে একবার পরিচিত হয়ে গেলে মানুষ সে কান্নাকে তেমন আর গুরুত্ব দেয় না। কান্নার পেছনে যে বিজ্ঞান, একে বোঝা যায়নি ভালো করে।
অনেক তত্ত্বকথা আছে, তবে স্পষ্ট কারণ কেউ জানে না।
কেন, কখন, কীভাবে আমরা কাঁদি-এসব প্রশ্নের উত্তর অজানা। তবে কান্না সম্পর্কে একটা কথা সত্য, কাঁদলে মন ভালো হয়। চলুন, কাঁদি। হালকা হোক বুক।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, পরীক্ষাগার সেবা
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৪, ২০০৯