Daffodil Computers Ltd.

E-Health / Protect Your Health => For All / Others => Topic started by: bbasujon on January 16, 2012, 07:41:40 PM

Title: আপনি, আপনার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য
Post by: bbasujon on January 16, 2012, 07:41:40 PM
রোগী ও চিকিত্সকের সম্পর্ক হওয়া উচিত শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের। একসময় তা-ই ছিল। পরে সে সম্পর্ক জটিল হয়েছে। অথচ ভালো স্বাস্থ্য পরিচর্যার চাবিকাঠি হলো রোগী ও চিকিত্সকের মধ্যে খোলাখুলি আলাপ ও মতবিনিময়।
চিকিত্সকের সঙ্গে কি খোলাখুলি, স্বস্তিতে আলাপ করা যায়? শরীরের অবস্থা, পরীক্ষার ফলাফল, ব্যবস্থাপত্র—এসব নিয়ে কি আলোচনা করা যায়? অসুস্থ হলে বা আহত হলে কোথায় সাহায্যের জন্য যেতে পারি, তা কি জানি? এসব প্রশ্নের উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে বোঝা গেল স্বাস্থ্য-পরিচর্যাসেবা আমরা ঠিকমতো পাচ্ছি না।
সাধারণ মানুষ হলো স্বাস্থ্যসেবা ও এর উত্পন্ন দ্রব্যের ভোক্তা। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য নিজের স্বাস্থ্য-আচরণ গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যসেবা যাঁরা দেন, তাঁরা মানুষের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য বড় অবদান রাখতে পারেন। ভালো পরিচর্যা পেতে গেলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চাই। তাঁদের পরিচয়, কী কী সেবা তাঁরা দেন, তাও জানা চাই। চিকিত্সকের সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাস্থ্য রক্ষার মূল চাবিকাঠি।

কীভাবে বেছে নেবেন চিকিত্সক
চিকিত্সক হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যাঁর চিকিত্সাশাস্ত্রে ডিগ্রি রয়েছে এবং তা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত। তাঁর পেশাগত বা চিকিত্সাসেবা দেওয়ার সনদ রয়েছে। চিকিত্সাসেবা দেওয়ার সনদ বা নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। যে দেশে চিকিত্সক চিকিত্সাসেবা দেবেন, সে দেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের অনুমোদন বা সনদ লাগবেই। সেই সনদ ছাড়া চিকিত্সাসেবা দিলে তা আইনত দণ্ডনীয়।
চিকিত্সক বেছে নেওয়ার ভালো সময় হলো যখন সুস্থ থাকবেন, তখন। চিকিত্সক বেছে নেওয়ার সময় তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ ও ব্যক্তিত্ব বিবেচনার মধ্যে পড়ে। যে চিকিত্সকের সঙ্গে খোলামনে ও স্বস্তিতে আলাপ করা যায়, সহজ সম্পর্ক যাঁর সঙ্গে গড়ে তোলা যায়, যাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা যায়, তিনিই হবেন পছন্দের চিকিত্সক।

রোগীর অধিকার
স্বাস্থ্যসেবার ভোক্তা হিসেবে রোগীর রয়েছে কিছু অধিকার ও দায়িত্ব। চিকিত্সকের সঙ্গে আলাপ করার অধিকার রয়েছে রোগীর। তবে সব আলাপ-আলোচনা, চিকিত্সা-পরিচর্যার রেকর্ড থাকতে হবে গোপনীয়। কেবল রোগী ও রোগীর অভিভাবক বা মা-বাবাকে রোগী সম্পর্কে তথ্য দেওয়া যাবে। চিকিত্সকের চিকিত্সা সম্পর্কে মূল্যায়নের ফলাফল জানার অধিকার রয়েছে রোগীর।
রোগের লক্ষণ, উপসর্গ, রোগনির্ণয় ও চিকিত্সা সম্পর্কে চিকিত্সক রোগীকে বুঝিয়ে বলবেন। চিকিত্সার প্রাথমিক অবস্থার চিহ্নিতকরণ হলো রোগনির্ণয় বা ‘ডায়াগনসিস’। ডাক্তারি শব্দ না বুঝলে চিকিত্সকের কাছ থেকে বুঝে নিতে হবে।
চিকিত্সক যদি কোনো চিকিত্সা দেন, তাহলে কেন চিকিত্সা নিতে হচ্ছে, এতে অর্থ ব্যয় কত হবে, কী কী ঝুঁকি থাকতে পারে, পছন্দ ও বিকল্প—এসব জানা রোগীর দায়িত্ব ও অধিকার। চিকিত্সক অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিলে বা বড় রকমের কোনো চিকিত্সার পরামর্শ দিলে অন্য একজন চিকিত্সকের কাছে দ্বিতীয় মত নেওয়ার জন্য রোগী ইচ্ছা করতে পারে। একজন ভালো চিকিত্সক অন্য চিকিত্সকের কাছ থেকে দ্বিতীয় মত নিলেও বিরক্ত হবেন না।
যদি মনে করেন যে চিকিত্সক বিধিমোতাবেক চিকিত্সা করছেন না, তাহলে তাঁর সম্পর্কে এ ব্যাপারে আলোচনা করা যেতে পারে। চিকিত্সক ও রোগীর মধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান এভাবে হয়। গুণগত মানের ও বিধিসম্মত চিকিত্সা পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে।

রোগীর অধিকার
 গোপনীয়তা
 তথ্যবিনিময়
 বিধিসম্মত চিকিত্সা
 দ্বিতীয় মত নেওয়ার অধিকার
 বিশ্বাস
 বিকল্প চিকিত্সা, চিকিত্সার খরচ, মূল্যায়নের ফলাফল, ঝুঁকি

শারীরিক পরীক্ষা জরুরি
প্রতিরোধক চিকিত্সার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় দেহের সমস্যাগুলো ধরা পড়ে। বড় রকমের স্বাস্থ্যগত সমস্যা না থাকলেও প্রতি দুই বছরে একবার টিনএজারদের শরীর পরীক্ষা করা উচিত।
শারীরিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নেওয়া চাই। পরীক্ষার প্রথম অংশ হলো রোগের ইতিহাস। রোগের ইতিহাস বা চিকিত্সার ইতিহাস হলো রোগী ও তার পরিবারের চিকিত্সা-সমস্যা ও ঘটনার বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করা। রোগীকে এ জন্য চিকিত্সক জিজ্ঞেস করতে পারেন নানা প্রশ্ন; যেমন—শরীরের অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন, পরিবারের অন্য সদস্যদের শারীরিক সমস্যা ও রোগ সম্পর্কে প্রশ্ন। প্রস্তুতি যখন নেবেন, তখন মনে করে নেবেন অতীতে কী কী স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়েছিল; অ্যালার্জি, আঘাত, সার্জারি ও টিকা—এসব তথ্য দিতে হবে। চিকিত্সা-ইতিহাস ঠিকমতো পেলে চিকিত্সকও রোগীর স্বাস্থ্য-পরিচর্যার চাহিদা বুঝতে পারেন। চিকিত্সকের কাছে রোগী যতটুকু সম্ভব বিশদভাবে তার সমস্যার কথা জানাবে। উপসর্গ ও লক্ষণ—এসব বলতে হবে সবিস্তারে। যেসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, তাতে চোখ বুলিয়ে নিন—
আকস্মিক উপসর্গ
 প্রচণ্ড ব্যথা
 খুব বেশি জ্বর
 অনবরত বমি বা তরল মল
 শ্বাসকষ্ট
 হঠাত্ দৃষ্টিতে সমস্যা
 গুরুতর দুর্ঘটনা
 ভাঙা হাড়
 জন্তু-জানোয়ারের কামড়-আঁচড় ও বোলতা-ভিমরুলের দংশন
 কফ-কাশে রক্ত
 মূত্র বা মলে রক্তের উপস্থিতি
দীর্ঘমেয়াদি উপসর্গ
 শরীরে রহস্যজনক র্যাশ ওঠা
 অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস
 পুনঃ পুনঃ বা ব্যথাসহ মূত্রত্যাগ
 দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
 লাগাতার বিষণ্নতা
 ক্ষত বা ঘা সহজে না শোকানো
 আঁচিল, যা দিয়ে রক্ত পড়ছে
যদি মনে করেন, অসুখ বা আঘাত জীবনের সংশয় ঘটাতে পারে, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে দ্বিধা করবেন না। চিকিত্সা-সাহায্য প্রয়োজন হলে অবশ্যই জানাবেন জীবনসঙ্গী বা মা-বাবা অথবা অভিভাবককে।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২১, ২০০৯