Daffodil Computers Ltd.

E-Health / Protect Your Health => For All / Others => Topic started by: bbasujon on January 16, 2012, 04:51:16 PM

Title: ঘাড়ব্যথায় কী করবেন
Post by: bbasujon on January 16, 2012, 04:51:16 PM
প্রাত্যহিক জীবনে কোনো না কোনো সময় ঘাড়ব্যথায় ভোগেনি এমন লোক পাওয়া সত্যিই কঠিন। বাতব্যথা সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি ব্যথা এই ঘাড়ব্যথা। পিঠের ব্যথার সমস্যা বাদ দিলে এ ধরনের ব্যথায় কষ্ট পাওয়া রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক। শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ—সব বয়সেই এ ধরনের ব্যথা হতে পারে। মূলত ছাত্রজীবনে এবং কর্মক্ষম অবস্থায় এ ধরনের ব্যথা বেশি দেখা যায়। ঘাড় মানুষের শরীরের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মাথা ও কাঁধের সংযোগস্থল এবং শরীরের বিশেষত, মাথার ভারসাম্য রক্ষা করে। মূলত সার্ভাইকেল কশেরুকা (সাধারণত সাতটি) এবং তত্সংলগ্ন মাংসপেশি নিয়ে ঘাড় গঠিত। তাই এই কশেরুকা হাড়গুলোর কাঠামোগত পরিবর্তন, ক্ষয় ও মাংসপেশির সমস্যার জন্য ঘাড়ে ব্যথা হয়।

চিকিত্সা
মূলত ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করেই এর চিকিত্সা দিতে হয়। সাধারণত, বসা বা শোয়ার অবস্থাগত অসামঞ্জস্যতা বা অসাবধানতায় ঘাড়ের মাংসপেশিতে বা হাড়ে যে সমস্যা হয়, তার জন্য কমপক্ষে তিন দিন পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। অনেক ক্ষেত্রে হাড়ে যক্ষ্মা হলে বিশ্রামের পরিমাণ বাড়াতে হয়। সঠিক রোগ নির্ণয় হয়ে গেলে সে অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক অথবা কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।
বিশ্রাম: ঘাড়ের নড়াচড়া সাময়িকভাবে বন্ধ বা ঝাঁকুনিতে ব্যথা বেড়ে যায়। তবে বেশি দিন বিশ্রাম নিলে ক্ষতি হতে পারে। রোগের ধরনের ওপর এর সময়কাল বহুলাংশে নির্ভরশীল।
ওষুধ: সাময়িকভাবে তাত্ক্ষণিক ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ, যা রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য, কিডনি ও লিভারের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। সবকিছু ভালো থাকলে ব্যথানাশক ওষুধ রোগীর বয়স ও শরীরের ওজন অনুপাতে এবং ব্যথার তীব্রতা অনুযায়ী দেওয়া যায়।
এ ছাড়া মাংসপেশির সংকোচন হ্রাসের জন্য মাসল রিলাক্স্যান্ট দেওয়া হয়। ভিটামিন বি গ্রুপের কিছু ওষুধও ব্যথা নিরাময়ে বেশ কার্যকর।
ফিজিওথেরাপি: ব্যথা উপশমে ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি ব্যবহার যে কতটা কার্যকর, তা অনস্বীকার্য। শুধু ওষুধ সেবন অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়িয়ে দেয় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, যা রোগীর সমস্যা না কমিয়ে উল্টো বাড়ায়। তবে এ ক্ষেত্রেও সঠিকভাবে রোগের বা ব্যথার প্রকৃত কারণ নির্ণয় অত্যন্ত জরুরি। বাতব্যথা বা ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় করিয়ে ফিজিওথেরাপি নেওয়া প্রয়োজন। শুধু ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা চিকিত্সা করানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঘাড়ব্যথায় যেসব ফিজিওথেরাপি দেওয়া যেতে পারে তা হলো—
এসডব্লিউডি (শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি), এমডব্লিউডি (মাইক্রো ওয়েভ ডায়াথার্মি), টেনস, সার্ভাইকেল ট্রাকশন ইত্যাদি।
এ ছাড়া কিছু নিয়মকানুন অবশ্যই রোগীকে মেনে চলতে হবে—
 নিচু, নরম বালিশ ব্যবহার করা উচিত, যা অবশ্যই ঘাড়ের নিচে থাকবে।
 শক্ত বিছানায় শুতে হবে।
 গাড়িতে চলাচলের সময় কলার ব্যবহার।
 নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম, যা ঘাড়ের ও চারপাশের মাংসপেশিকে শক্ত করে এবং রক্ত চলাচল বাড়ায়।
 প্রাত্যহিক কিছু নিয়ম—যেমন ঘাড় ঝাঁকানো, সামনে ঝুঁকে কাজ করা, টেবিল-চেয়ারের দূরত্ব, কম্পিউটার বা টিভি দেখার সময় ঘাড়ের উচ্চতা সঠিকভাবে রাখতে হবে।
 পুরুষদের দাড়ি কামানোর সময় এবং মেয়েদের চুল বাঁধার সময় মাথা বেশি পেছনে ঝোঁকানো যাবে না।
 সরু মুখযুক্ত বোতল থেকে পানীয় পান করা যাবে না।
 শুয়ে বই পড়া একেবারেই নিষিদ্ধ।
 বসা বা শোয়ার সময় সঠিকভাবে ঘাড়ের অবস্থান রাখতে হবে।

ডা. সুনাম কুমার বড়ুয়া
বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস (ফিজিক্যাল মেডিসিন) বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২০, ২০১০