একজন গৃহিণী, চল্লিশের ওপর বয়স তাঁর। ভোজনরসিক। বেশ মেদবহুল। প্রচুর ভাত খান। সকালে মোটা করে রুটি ভাজেন ডালডায়। সঙ্গে কখনো পুরো ডিম, কখনো গরুর গোশতের চার-পাঁচটি টুকরো। কখনো পুরো রুটি চিনিতে ভিজিয়ে আয়েশে খান।
এভাবে প্রায় এক যুগ ধরেই নাকি খাচ্ছেন। চিকিৎসকের কাছে এসেছেন এনজাইনা নিয়ে, ‘এনজাইনা পেকটরিস’, অর্থাৎ হার্টের ব্যথা। নিজের দোষেই আজ হৃদরোগ।
প্রচুর অনিয়ন্ত্রিত খাবার খেয়েছেন। এখন থেকেই সতর্ক না হলে সামনে বিপদ। হার্টের ব্যথা থেকে হবে হার্ট অ্যাটাক। সারা বিশ্বে হৃদরোগ এক নম্বর ঘাতক রোগ। এ রোগ হওয়া মানেই দেহের রক্তনালিতে বা হার্টের রক্তনালিতে বেশি বেশি খারাপ চর্বি বা কোলেস্টেরলের বাসা। তারপর সেগুলো স্তরে স্তরে জমা-যেন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে কঠোর অবস্থান।
একসময় রক্তনালিতে জমে তাতে ব্লক সৃষ্টি করা। পরে হার্ট অ্যাটাক। সুতরাং খারাপ চর্বি জমা মানেই প্রতিদিনের খাদ্যে মন্দ কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার। কিন্তু এভাবে হৃৎপিণ্ডকে বাঁচানো যাবে না। ফলে ডুবোতেলে ভাজা খাবার খাওয়া যাবে না। এমনকি বেশি মসলা ও ভাজা খাবার রান্না করে খাওয়া উচিত নয়। কম তেলই ভালো। নিজেকে কিংবা হৃদযন্ত্রটাকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনতেই হবে।
ডিমের কুসুম, মাছের ডিম, গলদা চিংড়ি, কলিজা, যেকোনো মগজ, হাঁস-মুরগির চামড়া, হাড়ের মগজ খেতে কী-ই না মজা! আরও মজা ঘি, মাখন, ডালডা, নারকেল, গরু ও খাসির মাংস। যত মজা তত খারাপ। খেতে পারেন কয়েক সপ্তাহ পর পর অতি সামান্য। প্রতিদিন নয়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে কিংবা মাথা থেকে এসব খাদ্য বাদ।
কিন্তু চর্বি খাবেন, তা হবে অসম্পৃক্ত। যেমন বাদাম। উপকারী চর্বি, মাছের তেল, মাছ ও সামুদ্রিক মাছ খাবেন।
সয়াবিন তেল, কর্ন তেল বা সূর্যমুখী তেলে রান্না খাবেন, ভালো থাকবেন। খাবেন না টেস্টিং সল্ট বা পাতে লবণ। বেশি দিন বাঁচতে হলে, হৃদরোগ কমাতে হলে একমাত্র উপায়ই হচ্ছে সব আঁশযুক্ত খাবার। বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি, সালাদ, টকফল, ছোলা বুট, খোসাসহ পেয়ারা, কামরাঙা, আমলকী, কুল বা বরই, লেবু, আমড়া খান। হৃদয়ের যমদূত কাছেই আসবে না। মন হয়ে উঠবে সতেজ।
স্বাদ মেশানো খাবার খাবেন না। দুধের যেকোনো তৈরি খাবার, চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার একদম না খেলেই ভালো। বদভ্যাসগুলো চিকিৎসক বলা মাত্রই ঝেঁটিয়ে দূর করুন। যেমন, মদ্যপান আর ধূমপান। তাই বলি কি, জীবনের গতি বাড়ান, সময় বাড়ান। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতেই হবে। তা না হলে সুস্থভাবে বেশি দিন বাঁচতে চাওয়া বৃথা।
ডা• এস কে অপু
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৭, ২০০৯