হৃৎপিণ্ড যেকোনো কারণে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলতে পারে। বড়দের যেমন হার্ট ফেইলিওর হয়, তেমনি জ্নের পর থেকে শিশুদেরও যেকোনো সময় হার্ট ফেইলিওর হতে পারে, কিংবা শিশুর হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বিভিন্ন কারণে কমে যেতে পারে।
যেসব কারণে শিশুদের হার্ট ফেইলিওর হতে পারে
শিশুদের হার্ট ফেইলিওর বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন বয়সে হয়ে থাকে।
মায়োকার্ডাইটিসঃ এক থেকে তিন বছর বয়সে হয়ে থাকে।
এট্রিওভেন্টিকুলার ক্যানাল ডিফেক্টঃ এটা ডাউন সিনড্রম; শিশুদের হয়ে থাকে।
ভেন্টিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট হার্ট ফেইলিওরঃ জ্নের দুই মাস পর হয়ে থাকে।
প্যাটেন্ট ডাকটাস আর্টারিওসাস হার্ট ফেইলিওরঃ জ্নের দুই মাস পর হয়ে থাকে।
ইন্ডোকার্ডিয়াল ফাইব্রোইলামটোসিসঃ এক বছরের শিশুদের মধ্যে হার্ট ফেইলিওর দেখা দেয়।
সুপ্রাভেন্টিকুলার টেকিকার্ডিয়াঃ এক বছরের নিচের শিশুদের হৃৎপিণ্ডের চলার গতি যদি মিনিটে ২২০ বারের বেশি হয়।
টোটাল অ্যানোমেলাস পালমোনারিম ভেনাস ড্রেনেজ।
ট্রাংকাস আর্টারিওসাসঃ জ্নের প্রথম সপ্তাহে হয়ে থাকে।
কোয়ার্কটেশন অব অ্যাওরটা।
হাইপোপ্লাস্টিক লেফট হার্ট সিনড্রমঃ জ্নের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে তীব্র মাত্রায় দেখা দিতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন শিশুর হৃৎপিণ্ড কাজ করছে না
শ্বাসকষ্ট হবে এবং কোনো কিছু করলে, যেমন-দুধ খাওয়ার সময় কান্না করলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাবে।
বেশি সময় নিয়ে দুধ খাবে, অর্থাৎ দুধ খেতে সময় লাগবে।
শিশু বাড়বে কম; ওজন কম হবে, শুকনো হবে।
কোনো কিছু করলেই হাঁপিয়ে যাবে এবং ঘামবে।
পেটে ব্যথা করবে; লিভার বেঁকে যাওয়ার কারণে।
জ্নের সাত দিনের মধ্যে হাত-পা ঠান্ডা হবে এবং অজ্ঞান হয়ে যাবে।
মেটাবলিক এসিডোসিস হবে; রক্তে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
শিশুটিকে ঠিকমতো পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, অতিরিক্ত শ্বাসকষ্টের কারণে বুকের খাঁচার নিচে অসামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে। একে বলে হেরিসন্ম সালছি। জিংকের রং নীল হবে (সেন্ট্রাল সায়ানোসিস), যা অক্সিজেন দিলে আর থাকবে না। হৃৎপিণ্ডের চলার গতি প্রতি মিনিটে ২২০ বারের বেশি হলে বুঝতে হবে হার্ট ফেইলিওর হয়েছে। এক্স-রে করালে হৃৎপিণ্ডের আকার বেড়ে যাওয়া ধরা পড়বে।
হার্ট ফেইলিওরের কারণ
শিশুদের বয়স দেখেঃ যেসব শিশুর হাইপোপ্লাস্টিক লেফ্ট হার্ট সিনড্রম হয়, তাদের জ্নের দুই সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। আবার অনেক শিশু আছে, যাদের ভিএসডি (ভেন্টিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট) ধরা পড়েছে, জ্নের দুই মাস আগেও তাদের হার্ট ফেইলিওর হয় না।
হৃৎপিণ্ডের চলার গতি ও শব্দ শুনেঃ অনেক সময় হৃৎপিণ্ডের চলার গতি ও শব্দ শুনে এবং মারমার (এক ধরনের শব্দ) আছে কি না বুঝে বলা যায়, কী সম্পর্ক আছে এবং হার্ট ফেইলিওর হয়েছে কি না। মনে রাখতে হবে, কিছু হার্ট ডিফেক্ট আছে, যেখানে কোনো মারমার শব্দ পাওয়া যায় না, যেমন-হাইপোপ্লাস্টিক লেফ্ট হার্ট সিনড্রম, কোয়ার্কটেশন, টোটাল অ্যানোম্যালাস পালমোনারিম ভেনাস ড্রেনেজ, মায়োকার্ডাইটিস ও ইন্ডোকার্ডিয়াল ফাইব্রোইলামটোসিস। ইসিজি করালে অনেক কিছু বোঝা যাবে।
চিকিৎসাঃ দুইভাবে শিশুদের হার্ট ফেইলিওরের চিকিৎসা করা হয়-ড্রাগ থেরাপি বা ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা এবং সাপোর্টিং থেরাপি বা অসুস্থ অবস্থায় শিশুর সেবাযত্ন।
ড্রাগ থেরাপি বা ওষুধ দিয়ে চিকিৎসাঃ ইনোট্রপিক এজেন্টঃ মারাত্মক হার্ট ফেইলিওর হলে শিরার মধ্যে ডোপাসিন ইনজেকশন (পাঁচ মিলিগ্রাম/কেজি/মিনিট) দিতে হবে, যা হার্টের আউটপুট বাড়াবে। কম মারাত্মক হলে ডিগক্সিন দিতে হবে হার্টের অবস্থা বুঝে।
কীভাবে ডিজিটালাইজেশন করা হয়
মুখে দিলে ৪০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি/ডে তিনবার আট ঘণ্টা পরপর প্রথম ২৪ ঘণ্টায়। আইভি ইনজেকশন দিলে ৩০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি/ডে আট ঘণ্টা পরপর প্রতিবার ১৫ মিনিট ধরে দিতে হবে প্রথম ২৪ ঘণ্টায়।
এরপর মেইনটেক্রো ১০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি/ডে ১২ ঘণ্টা পরপর মুখে ডিগক্সিন খাওয়াতে হবে।
ডাইয়ুরেটিক্সঃ ক্রুসেমাইড দুই মিলিগ্রাম/কেজি/ডে দিনে দুইবার দিতে হবে এবং এর সঙ্গে পটাশিয়াম দুই মিলিমোল/কেজি/ডে দিনে দুইবার অথবা পটাশিয়াম রক্ষাকারী ডাইয়ুরেটিক্স, যেমন-স্পাইরনোল্যাকটোস দুই মিলিগ্রাম/কেজি/ডে দিনে দুইবার দেওয়া যাবে।
ভেসোডাইলেটরঃ সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। শিশুকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
সাপোর্টিভ থেরাপিঃ হার্ট ফেইলিওর রোগীরা সাধারণত আধশোয়া অবস্থায় অথবা বসা অবস্থায় স্বস্তি বোধ করে।
শরীরের জন্য খাবার বা ক্যালরির পরিমাণের সমতা রক্ষা হবে। নাকে নল দিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এদের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যালরিযুক্ত খাবার দিতে হবে। সার্জারির প্রয়োজন হলে হৃদরোগ হাসপাতালে পাঠাতে হবে এবং দ্রুত সার্জারি করাতে হবে।
তাই সোনামণিদের জ্নের পর দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, শ্বাসকষ্ট, নীল হয়ে যাওয়া দেখলেই অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো।
লেখকঃ ডা· মো· মুজিবুর রহমান