Author Topic: মায়ের প্রতি সহায়তা, আনবে সোনালি ভবিষ্যৎ  (Read 4381 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
অধ্যাপক ডা· তাহমীনা বেগম
বিভাগীয় প্রধান
শিশু বিভাগ, বারডেম

প্রতিবছরের মতো এবারও ১ থেকে ৮ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হতে যাচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো-মায়ের প্রতি সহায়তা, আনবে সোনালি ভবিষ্যৎ।

জর্জ ইলিয়ট বলেছেন, শিশুরাই জাতির সবচেয়ে দামি সম্পদ-এ কথা ভাবার এখনই সময়। শিশুর জীবনের শুভ সূচনা মায়ের দুধের মাধ্যমে। মায়ের দুধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাবার এবং শালদুধ শিশুর জীবনের প্রথম টিকা। আবহমান কাল থেকে এই বাংলার মায়েরা তাদের সন্তানদের বুকের দুধ দিয়ে লালন পালন করে আসছে, কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের মধ্যে কৌটার দুধ বোতলে ভরে খাওয়ানোর একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

পাশ্চাত্যের অনুকরণ, কর্মক্ষেত্রে বেশি সময় থাকা, বাইরের অন্যান্য কাজে মায়েদের সম্পৃক্ততা এবং কৌটার দুধের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হওয়া এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়া শিশুকে বোতলে দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে দাদি, নানি ও আত্মীয়স্বজন মাকে উৎসাহিত করছে। শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। শিশুর জন্য, মায়ের নিজের জন্য, পরিবার ও দেশের জন্য মায়ের দুধের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।

শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই
– শিশুর বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত।
– সব খাবারের উপাদান সঠিকভাবে থাকায় সহজে হজম হয় এবং কোনো ধরনের অ্যালার্জি হয় না।
– সংক্রামক রোগ, বিশেষ করে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগ থেকে শিশুকে মুক্ত রাখে।
– মাতৃদুগ্ধ পান করা শিশুর বুদ্ধিমত্তা কৌটার দুধ খাওয়ানো শিশুদের চেয়ে নয় গুণ বেশি।
– মায়ের সঙ্গে আত্মার বন্ধন তৈরি হয়।

মায়ের জন্যও উপকারী
– শিশুর সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়।
– মায়ের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
– প্রাকৃতিক খাবার মা যেকোনো অবস্থায়, যেকোনো সময় শিশুকে খাওয়াতে পারেন। গেম প্রভৃতির প্রয়োজন পড়ে না।
– শিশু জ্নের পর মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয়।
– শুধু বুকের দুধ খাওয়ালে প্রাকৃতিকভাবে জ্ননিয়ন্ত্রণের কাজ হয়। মায়ের জরায়ু ও স্তনের ক্যান্সার রোধ করে।

পরিবার ও দেশের জন্য
– কৌটার দুধ কেনার জন্য বাড়তি খরচ করতে হয় না।
– মা সংসারের অন্যান্য কাজে বেশি সময় দিতে পারেন।
– বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে হয় না।

শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে-
জন্মের পর পরই সম্ভব হলে এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ দিন। যখন শিশু খেতে চাইবে, তখনই খেতে দিন।
দু-এক ঘণ্টা পরপর দিতে হবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।
দিন-রাত সব সময় এবং সারা দিন কমপক্ষে আটবার দিন।
ছয় মাস পর্যন্ত অন্য কোনো খাবার বা দুধ বা পানি দেবেন না।
মা বেশি করে খাবেন, পরিবারের সবার জন্য রান্না করা সব ধরনের খাবার মা খেতে পারবেন।
এখন নবজাতকের স্বজন হিসেবে আমাদের উচিত সব মাকে সব বিষয়ে সাহায্য করা। মায়ের স্বাস্থ্য, খাবার ও বিশ্রামের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর যত্নে যতটুকু সম্ভব পরিবারের সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে।
মায়ের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে, যাতে মা ইতিবাচক চিন্তা করতে পারেন এবং মায়ের দুধই তাঁর শিশুর জন্য যথেষ্ট-এই বিশ্বাস করতে পারেন।

আশার কথা হচ্ছে বর্তমান সময়ের অনেক মা-বাবাই মায়ের দুধের ব্যাপারে সচেতন। সমাজের সর্বস্তরের সব মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আজকে যে শিশু ভূমিষ্ঠ হলো, মায়ের দুধ খেলে এবং স্মেহ, মমতা, ধৈর্য ও যত্নের সঙ্গে লালিত হলে পরিবারের, সমাজের সবার সঙ্গে এই শিশুর ভালোবাসায় বন্ধন গড়ে উঠবে। মানবিক বোধে উজ্জীবিত এ শিশুই রচনা করবে আগামী দিনের সোনালি ভবিষ্যৎ, সুন্দর দেশ ও জাতি। সবার সচেতনতা, ঐকান্তিক ইচ্ছা দিয়ে আমরা আমাদের হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনব, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে মাকে সহায়তা করব-এ বছর বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ৩০, ২০০৮
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection